বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক : গত রোববার অনলাইনে নিজেদের বিক্রির বিজ্ঞাপন দেখেছেন এক ডজনেরও বেশি ভারতীয় মুসলিম নারী। এদেরই একজন বেসরকারি বিমান সংস্থার পাইলট হানা খান।
বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকবারে হানা জানান, এক বন্ধু টুইটারে তাকে বিষয়টি জানানোর পর তিনি সতর্ক হয়ে যান। পরে তিনি টুইটারে দেওয়া লিংকে ক্লিক করে দেখতে পান সুল্লি ডিলস নামের একটি অ্যাপ ও ওয়েবসাইটে তার মতো অনেক নারীর ছবি দিয়ে প্রোফাইল তৈরি করা হয়েছে। এই নারীদের ‘ডিলস অব দ্য ডে’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে অ্যাপস ও ওয়েবসাইটে।
তিনি জানান, অ্যাপটির ল্যান্ডিং পেজে এক অপরিচিত নারীর ছবি ছিল। পরের দুটি পাতায় তিনি তার বন্ধুদের ছবি দেখতে পান। এর একটি পাতা পরেই নিজের ছবি দেখতে পান হানা।
হানা বলেন, ‘আমি ৮৩টি নাম গুনেছি। হয়তো আরও বেশি থাকতে পারে। তারা আমার ছবি টুইটা থেকে নিয়েছে এবং সেখানে আমার নামও ছিল। ২০ দিন ধরে অ্যাপটি চলছিল এবং আমরা এ বিষয়ে জানতামও না। এটা আমার মেরুদণ্ড দিয়ে শীতল স্রোত বইয়ে দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘মানুষ পাঁচ ও ১০ রুপি দিয়ে নিলাম ডাকছে, তারা নারীদের অঙ্গের ওপর ভিত্তি করে দাম হাঁকছে এবং যৌন কর্মকাণ্ডের বিবরণ ও ধর্ষণের হুমকি দিচ্ছে।’
বিবিসি জানিয়েছে, মুসলিম নারীদের সম্বোধন করতে একটি অশ্লীল শব্দ ‘সুল্লি’ ব্যবহার করে। কট্টোর হিন্দুত্ববাদীরা অ্যাপটটিতে ব্যবহারকারীদের এই ‘সুল্লি’ কেনার প্রস্তাব দেওয়া হয়। অবশ্য বাস্তবে এ ধরনের নিলামের অস্তিত্ব পাওয়া না গেলেও মূলত মুসলিম নারীদের অপমান ও অপদস্থ করতে এই অ্যাপটি ব্যবহার করা হচ্ছে।
হেনা খান বলেন, ‘ধর্মের কারণে আমাকে টার্গেট করা হচ্ছে। আমি একজন মুসলিম নারী; তারা আমাদের নীরব করতে চায়।’
অভিযোগের প্রেক্ষাপটে ওয়েব প্ল্যাটফর্ম গিটহাব কর্তৃপক্ষ ওপেন সোর্স অ্যাপটি বন্ধ করে দিয়েছে।
এক বিবৃতিতে কর্তৃপক্ষ বলেছে, এ ধরণের কর্মকাণ্ডের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তের পর আমরা ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছি।’
তবে এ ধরনের কার্যক্রম মুসলিম নারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে। ওই অ্যাপটিতে যেসব নারীর ছবি ও প্রোফাইল দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে সাংবাদিক, রাজনৈতিক কর্মী, শিল্পী কিংবা গবেষক রয়েছেন। অনেকে তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছেন। অনেকে বলছেন, তারা আরও হয়রানির আশঙ্কা করছেন।
বিবিসি হিন্দি সার্ভিসকে আরেক নারী বলেছেন, ‘আপনি কতটা শক্তিশালী তা ব্যাপার না, কিন্তু আপনার ছবি ও অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য জনসম্মুখে প্রকাশ হলে তা আপনাকে আতঙ্কিত, বিব্রত করবে।’
এ সম্পর্কে স্থানীয় কংগ্রেস পার্টির নেত্রী হাসিদা আমিন বলেন, ভুয়া আইডি দিয়ে এরা এসব অ্যাপ খুলে থাকে। তিনি বলেন, (সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের) কয়েকটি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে প্রায় প্রতিদিনই মুসলিম নারীদের টার্গেট করা হয়।
এ ব্যাপারে গিটহাব কর্তৃপক্ষকে নোটিশ পাঠিয়েছে দিল্লি পুলিশ। এই সংক্রান্ত বিশদ তথ্য চেয়ে পাঠানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে দিল্লি পুলিশের মুখপাত্র চিন্ময় বিসওয়াল জানান, ইতোমধ্যে যৌন হেনস্থার মামলা হয়েছে। সাইবার ক্রাইম ইউনিট এই মামলায় দায়ের করেছে। মামলার তদন্তে নেমেছে পুলিশ।