আজ বুধবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ রুমে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
প্রশাসনে নিয়ন্ত্রণ আনার জন্য রদবদল করবেন কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি আলমগীর বলেন, অনেকে নিজেদের ভাবনা থেকে এগুলো বলেন। আইনের ব্যাখ্যাটা হলো আরপিও অনুযায়ী পুলিশের কমিশনার, বিভাগীয় কমিশনার এবং এর নিচে যত কর্মকর্তা আছেন, তারা নির্বাচন কমিশনের অনুমতি ছাড়া বদলি হতে পারবেন না। সরকার চাইলে এদের বদলি করতে পারবে না। সবাই আমাদের অধীনে এসেছে, এ আইনটি আপনারা কোথায় পেলেন? যদি এটা দেখাতে পারেন তাহলে আমরা এর উত্তর দিতে পারব।
তিনি বলেন, যদি নির্বাচন কমিশনের কাছে মনে হয়, কোনো বিভাগের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর আচরণ নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিপক্ষে, তখন নির্বাচন কমিশন সে বিভাগ বা কর্মকর্তাকে বদলি করতে পারে। রিটার্নিং অফিসার যাদের নিয়ে নির্বাচন করবেন অর্থাৎ প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার, এদের জেলার বাইরে বদলি করা যাবে না। পুরো সরকারি আইন ও রাষ্ট্র আমাদের অধীনে এসেছে, এটা আপনাদের কে বলেছে? এটা কোথায় পেয়েছেন। টকশো দিয়ে দেশ চলে না। সংবিধানে আছে নির্বাচন কমিশন নির্বাহী বিভাগের সহায়তা চাইলে তারা দিতে বাধ্য। আরওপিওতে আছে নির্বাচন কমিশন কোনো সংস্থা ও বিভাগের সহায়তা চাইলে তারা দিতে বাধ্য।
তিনি বলেন, বদলি করলে তাদের টিএ বিল দিতে হবে, এই বিলের টাকাটা কে দেবে? প্রচুর টাকা লাগবে, কয়েক শ কোটি টাকা টিএ বিল লাগবে। আপনারা জানেন, একজন কর্মকর্তাকে বদলি করা হলে তার ফ্যামিলির যাওয়া-আসার খরচ ও মালামাল পরিবহনের খরচ দিতে হয়। অনেক টাকা দিতে হয়। তারপরে বাসা পরিবর্তন করতে হয়। নতুন অফিসার এসে বলবে বাসায় রং করো, তার একটা খরচ আছে। কারণ আগের বাসায় তিনি থাকবেন না। এই টাকা কে দেবে? মুখ দিয়ে বদলি বললেই হয় না। বদলি করতে টাকা লাগে। হ্যাঁ, আমরা অবশ্যই বদলি করবো যদি তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকে এবং প্রমাণ পাই।
বিরোধী দল অভিযোগ করছে সরকার নিজের মতো প্রশাসন সাজিয়ে রেখেছে? এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি আলমগীর বলেন, এই অভিযোগ আমি ১৯৭০ সাল থেকে শুনে আসছি। আমি তখন ছোট ছিলাম, প্রাইমারি স্কুলের ছাত্র। তখন ইত্তেফাক পত্রিকা পড়েই দেখতাম এসব অভিযোগ। এর পরে যত নির্বাচন বাংলাদেশে হয়ে এসেছে, এ ধরনের অভিযোগ শুনে এসেছি। এ অভিযোগ কেয়ামত পর্যন্ত থাকবে।
ইসি আলমগীর বলেন, আচরণবিধিতে যা বলা আছে তাই হবে। তবে আপনাদের বুঝতে হবে আচরণবিধিতে সবগুলো নিষিদ্ধ নয়। এ ছাড়া পত্র-পত্রিকায় বলেছে, বিশেষ করে মনোনয়নপত্র কেনার সময় বিভিন্ন পার্টির অফিসের সামনে জটলা- সেটা আমাদের আচরণবিধির মধ্যে পড়ে না। তবে আমাদের রিটার্নিং অফিসারের (কার্যালয়ের) সামনে করলে এটা (আচরণবিধি লঙ্ঘন) হতো।
তিনি বলেন, এটা হলো তাদের পার্টির অফিস। অফিসের ভেতরে তাদের রাজনৈতিক কাজ কী করলো না করলো এটা তাদের বিষয়, তাদের অধিকার আছে। তবে এটা নিয়ে বক্তব্য নেই। পার্টি অফিসের ভেতরের কার্যক্রম আচরণবিধির মধ্যে পড়ে না। তবে যদি রিটার্নিং অফিসারের সামনে এটা হলে আচরণবিধির মধ্যে পড়বে।
ইসি আলমগীর আরও বলেন, গাড়ি ও মোটরসাইকেল শোডাউন ও মিটিং-মিছিল করতে পারবে না। মনোনয়নপত্র কিনলে উল্লাস তো করবেই। অফিসে আনন্দ উল্লাস করতে পারবে। এখন সুনির্দিষ্টভাবে কিন্তু কারোর জন্য ভোট চাচ্ছে না। যেহেতু এখন কোনো প্রার্থী নেই, সুতরাং তারা দলের জন্য ভোট চাইছে, কোনো নির্দিষ্ট কারও পক্ষে তো ভোট চাইছে না। যেহেতু বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলো নিবন্ধিত, তাদের প্রতীক তো সুনির্দিষ্ট। সুনির্দিষ্ট প্রার্থী ও মার্কায় ভোট চাইলে হতো। এখন তো সবাই ওপেন ভোট চাইছে। সেটা কারও পক্ষে চাচ্ছে না। প্রার্থী হওয়ার পরে এটা করা যাবে না।
বিদেশি পর্যবেক্ষক প্রসঙ্গে ইসি আলমগীর বলেন, এখানে ধারণা হয়ে থাকে খরচ আমরা বহন করব। এটা কিছুটা ভুল কিছুটা সঠিক। নির্বাচন কমিশনগুলোকে বিশেষ করে ফ্যামবুসা, ওআইসি ও অন্য দেশের কমিশনকে দাওয়াত করেছি, তাদের লোকাল হসপিটালিটি দেবো, তবে বিমান ভাড়া দেবো না। লোকাল খরচ বলতে হোটেল ভাড়া, যাতায়াত ও খাওয়ার খরচ দেওয়া হবে। তবে যারা সাংবাদিক তারা নিজের খরচে আসবেন। এটা একটা ট্রেডিশন হিসেবে হয়ে আসছে। আমরাও যাই। কিছুদিন আগে ভারতের একটা নির্বাচনে আমাদের দাওয়াত দিয়েছিল, আমরা গিয়েছিলাম। এটা একটা মিউচ্যুয়াল এক্সচেঞ্জ। এটা পৃথিবীর সব দেশে হয়ে আসছে।