বঙ্গ নিউজ বিডি প্রতিনিধি : বাংলাদেশের অন্যতম ব্যস্ততম আন্তর্জাতিক প্রবেশদ্বার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নিয়ে এক গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। বিদেশগামী যাত্রীদের বিনা কারণে ইমিগ্রেশনে বাধা দেওয়া, অনৈতিকভাবে আটকে রাখা ও হয়রানি করার অভিযোগে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একজন সিনিয়র আইনজীবী সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ দিয়েছেন।
নোটিশে দাবি করা হয়েছে, এই ধরনের কর্মকাণ্ড সংবিধান, মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে। তাই অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা ও নিরীহ যাত্রীদের হয়রানি বন্ধ করতে প্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও আদালতের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।
ইমিগ্রেশনে হয়রানি— কেন এই নোটিশ?
বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, দেশের প্রতিটি নাগরিকের সুবিধাজনকভাবে চলাচলের অধিকার রয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি বিদেশগামী অনেক যাত্রীকে ইমিগ্রেশনে আটকানো, অতিরিক্ত জিজ্ঞাসাবাদ করা এবং বিনা কারণে বিদেশ যাত্রা থেকে বিরত রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
আইনি নোটিশে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী উল্লেখ করেছেন, “নির্দোষ ও বৈধ যাত্রীদের যাতায়াতে বাধা দেওয়া একটি বেআইনি, স্বেচ্ছাচারী ও মানবাধিকার লঙ্ঘনমূলক কাজ। রাষ্ট্রের দায়িত্ব নাগরিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষা করা, তা হরণ করা নয়।”
আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে ইমিগ্রেশন হয়রানি:
আইনি নোটিশে বাংলাদেশের সংবিধান, ১৯৪৮ সালের মানবাধিকার ঘোষণাপত্র ও আন্তর্জাতিক আইনের বিভিন্ন ধারা উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে—
✅ বিনা কারণে কোনো নাগরিকের চলাচলের অধিকার হরণ করা যায় না।
✅ যাত্রীদের আটকে রাখা বা বিদেশ যেতে বাধা দেওয়া আইনি প্রক্রিয়াবহির্ভূত হলে এটি একটি গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।
✅ কোনো ব্যক্তি যদি সত্যিকারের অপরাধী না হন, তবে শুধুমাত্র সন্দেহের ভিত্তিতে তাঁর চলাচল বন্ধ করা সংবিধানের ৩৬ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী।
আইনি বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি কোনো যাত্রীর বিরুদ্ধে আদালতের আদেশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্দিষ্ট নির্দেশনা না থাকে, তবে তাঁকে বিনা কারণে ইমিগ্রেশনে আটকে রাখা আইনগতভাবে অবৈধ।
১৫ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে আইনি পদক্ষেপ:
আইনি নোটিশে ১৫ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। অন্যথায়, সুপ্রিম কোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
আইনি নোটিশ প্রদানকারী আইনজীবী বলেন, “যদি যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, তবে আমরা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হব এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
দেশবাসীর প্রতি আহ্বান
এই ধরনের হয়রানি শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তির সমস্যা নয়, বরং এটি একটি জাতীয় ইস্যু। বিদেশগামী যাত্রীরা ব্যবসায়িক, শিক্ষাগত ও পারিবারিক কাজে দেশত্যাগ করেন। কিন্তু যদি তাঁদের অহেতুক আটকে রাখা হয়, তাহলে এটি দেশের ভাবমূর্তি ও অর্থনীতির ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
সাধারণ মানুষ, মানবাধিকার সংস্থাগুলো এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ জানানো হচ্ছে— এ ধরনের অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে এবং সঠিক তথ্য প্রকাশ করতে।
শেষ কথা:
বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক ও আইনের শাসনপ্রধান দেশ। যদি সাধারণ নাগরিকেরা বিনা কারণে হয়রানির শিকার হন, তবে এটি শুধু ব্যক্তি নয়, বরং রাষ্ট্রের নীতির প্রতিই প্রশ্ন তোলে। তাই সংশ্লিষ্ট প্রশাসন, আদালত ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর উচিত দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া।
বিদেশগামী যাত্রীদের অবাধ ও হয়রানিমুক্ত যাতায়াত নিশ্চিত করার জন্য এখন সমাজের প্রতিটি স্তরে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন।