বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক: অন্যত্রে বিয়ে করায় মাইনুল মীর (২৩) নামের এক যুবককে হত্যা করেছে ইশরাত জাহান মীম (২০) নামের এক তরুণী। তিনি মাইনুলের সাবেক প্রেমিকা ছিলেন। নিহত মাইনুল মীর নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল পৌর এলাকার দক্ষিণ চরপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল ফেলু মীরের ছেলে। তিনি স্থানীয় এক দাঁতের চিকিৎসকের সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। অন্যদিকে অভিযুক্ত প্রেমিকা ইশরাত জাহান মীম উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের খিলপাড়া গ্রামের ইমরান হোসেনের মেয়ে। তিনি স্থানীয় একটি হাসপাতালে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করেন।
শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাতে মীমকে আটক করে পুলিশ। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মীমই এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। গ্রেপ্তারকৃত মীমের বরাত দিয়ে পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ইলিয়াছ জানান, মীম ও মাইনুল স্কুল জীবন থেকেই একে অপরের পরিচিত। দুজন স্থানীয় মুসা বিন হাকিম কলেজে একসঙ্গে পড়তেন। এক সময় দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিছুদিন পর ওই সম্পর্কে ফাটল ধরে। গত বছরের মাঝামাঝিতে মীম আরেক ছেলেকে বিয়ে করে ফেলেন। তিন মাস পর সেই বিয়ে ভেঙে যায়। এরপর আবার মাইনুলের সঙ্গে পুরোনো সম্পর্ক জোড়া লাগে মীমের। কিন্তু এরই মাঝে শ্রাবন্তীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছেন মাইনুল। গোপনে একই সঙ্গে দুজনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক চালাতে থাকেন মাইনুল।
এরপর পরিবারকে না জানিয়ে গত ৬ ফেব্রুয়ারি শ্রাবন্তীকে বিয়ে করেন মাইনুল। এরপর স্ত্রীকে নিয়ে নিজ বাসায় বসবাস করতে থাকেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার কর্মস্থলে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হন মাইনুল। রাতে বাড়িতে ফিরে না আসায় স্ত্রী ও স্বজনেরা কল করে মোবাইল ফোন বন্ধ পান। এরপর বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করে তাঁরা। এরপর শুক্রবার সকালে বিষয়টি স্থানীয় পুলিশকে জানানো হয়।
তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, একই এলাকার তরুণী মীমের সঙ্গে মীরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল মাইনুলের। তখন ওই মেয়ের বাড়িতে যায় পুলিশ। তবে মাইনুলের ব্যাপারে তাঁর কাছে কোনো তথ্য নেই দাবি করেন মীম। যদিও প্রযুক্তিগত তদন্তে মাইনুলের সঙ্গে মীমের একাধিকবার কথা বলার তথ্য পায় পুলিশ।
এরপর শনিবার বিকেল ৪টার পর মাইনুলের ডেন্টাল চিকিৎসক ডা. শিহাবুল হক প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তালা খোলার পর অভ্যর্থনা কক্ষে মাইনুলকে গলা কাটা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। এরপর তিনি দ্রুত পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। এরপরই সন্দেহভাজন মীমকে বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। একপর্যায়ে মীম সব স্বীকার করেন।
পুলিশকে মীম জানান, মাইনুলের বিয়ে করার কথা জানতে পেরেই চেতনানাশক ইনজেকশন কেনেন মীম। কৌশলে মাইনুলকে তাঁর কর্মস্থলে ডেকে নেন। কেন তাঁকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা রক্ষা করা হলো না, সেটা জানতে চান। একপর্যায়ে মাইনুলের ঘাড়ে ইনজেকশন পুশ করেন মীম। দু-তিন মিনিটের মধ্যে অচেতন হয়ে পড়েন মাইনুল। এরপর ছুরি দিয়ে গলায় আঘাত করে মাইনুলের মৃত্যু নিশ্চিত করে তালাবদ্ধ করে পালিয়ে যান তিনি।
পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ইলিয়াছ জানান, এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই সাইদুর মীর বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় ইসরাত জাহান মীমকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কি না সে বিষয়েও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।