জালালুর রহমান, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের জুড়ীতে টানা কয়েকদিনের প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে আবারো জুড়ী উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। বন্যার ফলে, জুড়ী উপজেলার প্রায় অর্ধলক্ষাধীক মানুষ পানি বন্দি। মানুষজন গরু বাছুর, হাঁস, মুরগিসহ অন্যান্য প্রাণী নিয়ে দূর্ভোগের সাথে দিনাতিপাত করছেন। অত্রাঞ্চলের বন্যার পানি দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিস্থিতি এখন ভয়াবহতার রূপ ধারন করছে। বর্তমানে উপজেলার প্রায় ৫০ ভাগ মানুষ অসহায় ও দূর্ভোগের সাথে যুদ্ধ করে কোনো রকমে বেঁচে আছেন। এ পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে যতটুকু ত্রাণ সহায়তার দরকার তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। বন্যার্তদের জন্য প্রসাশনের পক্ষ থেকে যতটুকু সহযোগীতার প্রয়োজন তা তাদের পক্ষ থেকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না বলে অভিযোগ অত্রাঞ্চলের বন্যার্তদের অনেকের। বন্যার পানি দিন দিন এতই বৃদ্ধি পাচ্ছে যে, অত্রাঞ্চলের বেশিরভাগ বাড়িঘর, রাস্তা ঘাট, হাট-বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মন্দিরসহ বিভিন্ন স্থান তলিয়ে গেছে। বন্যায় শত শত ফিশারীর মাছ পানিতে ভেসে গেছে। আর খামারীসহ অন্যান্য মানুষের গরু-বাছুর নিয়ে থাকার ব্যবস্থা দূরহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অত্রাঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষজন মাথা পেতে কোনো রকমে দূযোর্গের মধ্যে বেঁচে আছেন। এমতাবস্থায় তাদের দূভোর্গের অন্ত নেই। এছাড়াও একাধিক পোল্ট্রির খামারের ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় যাদের নৌকা কিংবা কলার ভেলা আছে তারা কোনো রকমে অন্যত্র যাতায়াত করতে পারলেও, যাদের নেই তাদের কষ্টের অন্ত নেই। বন্যায় উপজেলার প্রায় সব সড়কে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এরপরেও মানুষজন বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতের জন্য অধিক টাকা খরচ করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অন্য স্থানে চলাচল করছেন। সরজেমিনে গিয়ে উপজেলার কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, হাকালুকির উত্তাল ঢেউয়ে মানুষজন ঘর বাড়িতে থাকতে পারছেনা। তারপরও মানুষজন জীবনকে বাজি রেখে মাচার উপর ঠাঁই নিয়েছে। এছাড়াও যারা বাড়ি-ঘরে থাকতে পারছেনা তারা তাদের গরু-বাছুর ও অন্যান্য মালামাল নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। বন্যা দূর্গতদের আশ্রয়ের জন্য প্রসাশনিকভাবে ১৯টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। জুড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার লুসিকান্ত হাজং এর সত্যতা স্বীকার করে বলেন, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় পানিবন্দী লোকদের উদ্ধারের লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে প্রয়োজনীয় তৎপরতা চালানো হচ্ছে। ৮০ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। নগদ ৮০ হাজার টাকার শিশু খাদ্য ও ৮০ হাজার টাকার গো-খাদ্য বিতরণের কাজ চলমান রয়েছে। ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদ থেকে বরাদ্দকৃত ৫ লাখ টাকার বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী ক্রয় করে বিতরণ করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় ২৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।