বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক : ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় মুখ পরীমনিকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। এমনকি তাকে মেরে ফেলারও চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পরীমনির।
ধর্ষণচেষ্টার পর ৪ দিন পরীমনির জীবনে ঝড় বইয়ে গেছে। এসময় কেউ তার পাশে দাঁড়াননি বলে অভিযোগ ঢালিউড নায়িকা। সবাই তাকে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু দৃঢ়চেতা পরীমনি জানালেন তিনি সহজে দমবেন না। এ ঘটনার বিচার দেখে ছাড়বেন।
ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ নিয়ে নিয়ে গেলে পুলিশ সহায়তা করেনি পরীমনিকে। চলচ্চিত্র শিল্পীদের সংগঠন থেকেও সাড়া পাননি এই নায়িকা। পরেও যারা ঘটনাটি জেনেছেন তাদের অনেকেও উল্টো তাকেই দমিয়ে রাখার চেষ্টা করেছেন।
রোববার রাতে বনানীর বাসায় দফায় দফায় গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন পরীমনি। তিনি বনানী থানার সহযোগিতা পাননি অভিযোগ করার পর মধ্যরাতে তার বাসায় আসেন রূপনগর থানার ওসি আরিফুর রহমান সরদারের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল। তারা পরীমনির কাছে ঘটনার বিবরণ শোনেন। ওসি পরীমনিকে বলছিলেন, তারা ঘটনা সাজিয়ে লেখে পরীমনিকে দেখিয়ে তার স্বাক্ষর নেবেন।
পরীমনি ও তার স্বজনেরা পুলিশের সঙ্গে কথা বলার সময় বারবারই ঘটনার রাতে বনানী থানায় গিয়ে সহায়তা না পাওয়ার কথা বলেছেন।
বনানী থানায় যাওয়ার পর থেকে পুলিশের সঙ্গে কথোপকথন তারা রেকর্ড করেছেন বলে জানান। কর্তব্যরত কর্মকর্তা তাকে পরদিন সকাল ১০টায় ‘ওসি স্যার’ আসার পর থানায় আসতে বলেন।
‘এরপর কতো ১০টা চলে গেছে’ কথাটির কয়েকবার পুনরাবৃত্তি করেন পরীমনি। কথা বলতে বলতে মাঝে মধ্যেই কেঁদে ফেলছিলেন ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী।
ধর্ষণ চেষ্টা প্রকাশ্যে না আনতে পরীমনিকে বারবার বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তুমি মেয়ে, তুমি সিনেমার নায়িকা, তুমি এসব অভিযোগ করলে উল্টো তোমার দিকে আঙুল উঠবে- এসব কথা বলে বলেই তো আমাকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু আমি তো দমবো না।
এই সবাই কারা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবাই, থানার পুলিশ থেকে শুরু করে সবাই। আমাকে বারবারই বোঝানো হয়েছে, আরে লোকে কী বলবে, তোমার ইজ্জত থাকবে? আরে ভাই যে আমার ইজ্জত নেওয়ার চেষ্টা করছে তার নাম আমি বলব না? তার নাম বললে আমার ইজ্জত চলে যাবে?
প্রকাশ্যে অভিযোগ করতে চারদিন সময় কেন লাগল তার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে পরীমনি বলেন, আমাকে সবাই আশার আলো দেখিয়েছে। সবাই মাথায় হাত বুলিয়ি বলেছে ‘আচ্ছা দেখতিছি দেখতিছি’। কিন্তু কেউ কিছু করেনি।
গত চারদিনের দুর্বিসহ অবস্থা জানিয়ে পরীমনি বলেন, এই চারদিন ধরে আমি ঘুমাতে পারছি না, খেতে পারছি না। সবার নীরবতার কারণে নিজেই সব প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিই। আমি ভিক্টিম, আমার ওপর অন্যায় হয়েছে। আমি বিচার চাই।
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানের কাছে বিষয়টি নিয়ে গেলে তিনিও ‘দেখতেছি, দেখতেছি’ করে এড়িয়ে যান বলে পরীমনির অভিযোগ।
ধর্ষণচেষ্টার মতো গুরুতর অভিযোগ নিয়ে যাওয়ার পরও শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কেন তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখালেন না- জানতে চাইলে জায়েদ খান উল্টো প্রশ্ন রেখে বলেন, শিল্পী সমিতি কি কোনো আদালত?
তিনি বলেন, আমি তাকে (পরীমনি) শিল্পী সমিতিতে একটা লিখিত দিতে বললাম। বললাম যে আইজিপি রাজশাহীতে গেছেন। উনি ফিরুক, তারপরে রোববার দেখা হতে পারে। পরীমনি থানা পুলিশের কাছে যেতে চাচ্ছিলেন না।
জায়েদ খান আরও বলেন, ‘আমার কাছে পরিমনি কোনো অভিযোগই করেননি, তাহলে শিল্পী সমিতির নেতা হিসাবে কিসের বিচার করব?
কার বিচার করব? সমিতি বিচার করেনি, পরিমনির এসব অভিযোগ অবান্তর। যদি সত্যিই তার সঙ্গে খারাপ কিছু হয়ে থাকে, তাহলে আমিও চাই, তিনি সুষ্ঠু বিচার পাক।’
এদিকে পরিমনির স্টেটাসের বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স) মো. সোহেল রানা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তিনি অবশ্যই ন্যায়বিচার পাবেন। আমরা তার ন্যায় বিচারের জন্য কাজ করব।
প্রসঙ্গত, নড়াইলের মেয়ে শামসুন্নাহার স্মৃতি চলচ্চিত্রে পরীমনি নাম নিয়ে ২০১৫ সালে নামার পর দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ইতোমধ্যে দুই ডজন চলচ্চিত্রে নায়িকার চরিত্র রূপায়ন করেছেন তিনি।
রোববার রাতে ফেসবুকে নিজের ভেরিফাইড পেজে এক স্টেটাসের মাধ্যমে এমন অভিযোগ করেন তিনি। তবে শুরুতে কার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেটা তিনি স্পষ্ট করে কিছু বলেননি।
ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি লিখেছেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমি পরীমনি এই দেশের একজন বাধ্যগত নাগরিক। আমার পেশা চলচ্চিত্র। আমি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমাকে রেপ এবং হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।’
এরপর রাতেই রাজধানীর গুলশানে নিজের বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে অভিযুক্তের নাম প্রকাশ করেন পরিমনি। তার অভিযোগ নাসির উদ্দিন নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
সংবাদ সম্মেলনে পরিমনি বলেন, ‘একটা কাজে আমার পূর্ব পরিচিত অমি নামে একজনের অনুরোধে তার সঙ্গে আমি উত্তরায় নাসির উদ্দিনের কাছে যাই।
তিনি নিজেকে তখন উত্তরা বোট ক্লাবের সভাপতি বলে পরিচয় দিয়েছেন। সেখানে যাওয়ার পর আমাকে মদ্যপান করতে বলা হয়। আমি সেটা না করলে এরপর আমাকে নির্যাতন করা হয়। ধর্ষণ করার চেষ্টা করা হয়। এমনকি হত্যা করবেন বলেও হুমকি দেন। ঘটনাটি ঘটেছে চার দিন আগে।’
এদিকে আইনি ব্যবস্থা না নিয়ে সরাসরি স্টেটাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে কেন বিচার চাইছেন, সংবাদ সম্মেলনের আগে এমন বিষয়ে জানতে চাইলে পরিমনি বলেছেন, ‘আমি অনেক দৌড়াদৌড়ি করেছি। থানা, শিল্পী সমিতি, সবখানে গেছি। কিছু হয়নি।’