বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক : কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ আয়োজিত ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় এক অধ্যাপকের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও পরবর্তী সময়ের ইতিহাসকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করার অভিযোগ উঠেছে। ১৫ আগস্ট রাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় এ ঘটনা ঘটে।
ওই কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল লতিফ মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও পরবর্তী সময়ের ইতিহাসকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন ও বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন।
ওই শিক্ষকের বিতর্কিত বক্তব্যে কুমিল্লাজুড়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। ভার্চুয়াল ওই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন কুমিল্লা-৬ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। আলোচনায় অংশ নেন বিতর্কিত বক্তব্য দেওয়া ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল লতিফ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. আবু জাফর খান। ওই শিক্ষকের বিতর্কিত বক্তব্য দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কড়া ভাষায় প্রতিবাদ জানান এমপি বাহার।
বক্তব্য দেওয়ার মাঝখানে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল লতিফকে থামিয়ে দিয়ে বক্তব্যের বিষয়টি কোথায় পেয়েছেন জানতে চান এমপি বাহার। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বয়স কত ছিল প্রশ্ন রাখেন।
ইতিহাসের বিকৃত বক্তব্য শুনে ক্ষুব্ধ এমপি বাহার ইতিহাস বিকৃত করে এ সমস্ত বক্তব্য দেওয়া বন্ধ করতে বলে বিতর্কিত শিক্ষককে আলোচনা থেকে সরিয়ে দিতে বলেন।
অনুষ্ঠানটি কলেজের ফেসবুক আইডি ও অন্য পেজ থেকে শেয়ার হওয়াতে অনেকেই সরাসরি দেখছিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই এটি ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। গত দুই দিন ধরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলে কুমিল্লার সুধীমহলে।
সর্বশেষ তথ্যে জানা যায়, কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের নির্দেশ অনুযায়ী ইতিহাস বিকৃতির জন্য ১৬ আগস্ট অধ্যাপক আবদুল লতিফকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ওই অনলাইন সভার উদ্বোধক ছিলেন জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক, সাবেক সচিব ড. কামাল আবু নাসের চৌধুরী।
বিশেষ অতিথি ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) প্রফেসর শাহেদুল খবির চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর কুমিল্লা অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর সোমেশ কর চৌধুরী।
আপলোড হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, শিক্ষক আবদুল লতিফ তার বক্তব্যে বলছেন- দেশ স্বাধীন হবার পর এ দেশের মানুষ ‘আসসালামু আলাইকুম’, ‘বিসমিল্লাহ’, ‘খোদা হাফেজ’ বলতে পারতেন না। বলতে হতো ‘সুপ্রভাত’। বঙ্গবন্ধু ১০ জানুয়ারি দেশে ফেরার পর এই পরিস্থিতি আর ছিল না…। এ বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গে এমপি বাহার বক্তা আবদুল লতিফকে বক্তব্য থামাতে বলেন। কিন্তু লতিফ বক্তব্য দিতে থাকলে এমপি বাহার পরপর কয়েকবার ‘স্টপ ইট, স্টপ ইট’ বলে তাকে থামান।
এ সময় এমপি বাহার বলেন, মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি, ইতিহাস বিকৃতি পছন্দ করি না। পরে আবার প্রশ্ন করেন আপনি এ কাহিনী কোথায় পেয়েছেন? মুক্তিযুদ্ধের সময় আপনার বয়স কত ছিল? লতিফ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর আমার জন্ম। তাহলে এ কাহিনী কোথায় পেলেন?
এমপির এ প্রশ্নের জবাবে লতিফ বলেন, বই-পুস্তকে পেয়েছি। এমপি বাহার বলেন, তথ্য-প্রমাণসহ আমার কাছে আসুন। এ নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ উত্তেজিত থাকেন এমপি বাহার। পরে অধ্যাপক আব্দুল লতিফকে আলোচনা থেকে সরিয়ে নির্ধারিত বক্তাদের নিয়ে অনুষ্ঠান শেষ করা হয়।
এ ঘটনার পর ভিক্টোরিয়া কলেজের ফেসবুক পেজ থেকে ভিডিওটি সরিয়ে ফেলা হয়। তবে সাধারণ মানুষের পেজে ভিডিওটি রয়ে গেছে। এ নিয়ে ওই শিক্ষকের বিচার দাবি করেন রাজনৈতিক কর্মী, সূধী মহল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মীসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
এ ঘটনায় ফেসবুক পেজে ওই শিক্ষকের বিতর্কিত বক্তব্যের বিষয়ে কড়া প্রতিবাদ করায় এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারকে ধন্যবাদ জানিয়ে কমেন্টস করেন অনেকে।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, আবদুল লতিফ নির্ধারিত কোনো আলোচক ছিলেন না। তাকে ওই অনুষ্ঠানে যোগদানের ব্যবস্থা করেন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবু জাফর খান।
ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুল লতিফের বিতর্কিত বক্তব্যের বিষয়ে সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, সে সহযোগী অধ্যাপক লতিফ রাজাকারের উত্তরসূরি। এখনো প্রমাণ নিয়ে আসেনি। তাকে শোকজ করতে বলেছি। তার বিরুদ্ধে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করতে প্রিন্সিপালকে বলেছি। ইতিহাস বিকৃতির ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তার এ বক্তব্য গোটা মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে। সব মুক্তিযোদ্ধাকে অবমাননা করা হয়েছে।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ার কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবু জাফর খান বলেন, ইসলামের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবদুল লতিফ ভূঁইয়াকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ৫ কর্মদিবসের মধ্যে তাকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। তার বক্তব্য সন্তোষজনক না হলে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ওই শিক্ষকের দেওয়া বক্তব্যটি বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন জাতীয় অধ্যাপক তালুকদার মনিরুজ্জামান তার ‘পলিটিক্স ও সিকিউরিটি অব বাংলাদেশ’ গ্রন্থে কথাগুলো লিখেছিলেন।