বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক : নতুন পাসপোর্টে ইসরায়েলের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন বলেছেন, কোন মহল উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। দুটো দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকার কারণে ইসরায়েলে যেতে পারবে না বাংলাদেশিরা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে বাংলাদেশ কোন ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করছে না। আগের পাসপোর্টে ইসরায়েলে ভ্রমণের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ ছিল। কিন্তু নতুন ই-পাসপোর্টে সেই কথাটি বাদ দেওয়া হয়েছে। ছয় মাস আগে নতুন পদ্ধতির ই-পাসপোর্টে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে। কোন মহল উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিষয়টিকে নিয়ে নানা আলোচনা চালাচ্ছে।
পাসপোর্ট থেকে ইসরায়েলের নাম বাদ দেওয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের বক্তব্যের যৌক্তিকতা এবং ইসরায়েলের প্রতি বাংলাদেশের অবস্থান নমনীয় হচ্ছে কীনা-এসব প্রশ্নে ব্যাপক আলোচনা চলছে।
বাংলাদেশের পাসপোর্টে এই পরিবর্তনের বিষয়টি এমন সময় জানা গেলো, যখন সারা বিশ্বে ফিলিস্তিনি ইস্যুতে নতুন করে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে, বাংলাদেশ-সহ বিভিন্ন দেশে ইসরায়েল বিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে।
বাংলাদেশের পাসপোর্টে সব সময়েই ইসরায়েলের নাম উল্লেখ করে বলা হতো, এই দেশ ছাড়া আর সব দেশ ভ্রমণের জন্য পাসপোর্টটি বৈধ। কিন্তু বাংলাদেশের নতুন ই-পাসপোর্টে ‘ইসরায়েল ব্যতীত’ অংশটি বাদ দিয়ে বলা হয়েছে বিশ্বের ‘সব দেশের’ ক্ষেত্রে এটি বৈধ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নিউজটা বের করেছেন এমন সময়, যখন ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের মধ্যে সংঘাতটা হলো। সেটা যখন তুঙ্গে, এই সময় কোন স্বার্থন্বেষীমহল এটা জোরেশোরে তুলে ধরলেন। কবে আমরা এটা করেছি। আর হঠাৎ করে এটা নিউজ হয়ে আসলো।
তিনি আরও বলেছেন, আমাদের পররাষ্ট্রনীতিতে কোন পরিবর্তন নাই। উই ওয়ান্ট টু স্টেট সল্যুশন। প্যালেস্টাইন তার ১৯৬৭ সালের ম্যাপ অনুযায়ী তাদের স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হবে জেরুসালেমকে রাজধানী করে। এটাই আমরা মনে প্রাণে বিশ্বাস করি। এটাই আমরা প্রমোট করি।
তবে দেশের ই পাসপোর্টে যে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে, সে ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কিন্তু আগে কোন বক্তব্য বা ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যখন বাংলাদেশের পাসপোর্টের পরিবর্তনের বিষয় তুলে ধরে টুইট করা হয়, তার জবাবে রোববার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বক্তব্য দেয়া হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন সাংবাদিকদের কাছে রোববার প্রথমে বলেছিলেন, বিষয়টি শোনার পরে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ফোন করে জানতে পারেন যে, ছয় মাস আগে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানও বিবিসিকে বলেছেন, এই পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়েছে এক বছর আগে এবং তা বাস্তবায়ন শুরু করা হয়েছে ছয় মাস আগে।
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন মনে করেন, বিষয়টা কার্যকর করার ক্ষেত্রে সরকারের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের কারণেও নানা প্রশ্ন উঠেছে। সেখানে সমন্বয়ের একটা অভাব আছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই কাজটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে করতে পারতো। এখানে ভীষণ ঘাটতি ছিল।
মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২সালে স্বাধীন বাংলাদেশে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকার লিখিতভাবে ইসরায়েলের স্বীকৃতি প্রত্যাখ্যান করেছিল। সেই থেকেই বাংলাদেশ অবস্থান রয়েছে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের পক্ষে।
এমন প্রেক্ষাপটে পাসপোর্টে পরিবর্তনের ফলে ইসরায়েলে প্রতি বাংলাদেশের নমনীয় অবস্থানের ইঙ্গিত কীনা- সেই প্রশ্নও উঠেছে।
সাবেক একজন পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বলেছেন, কোন ইঙ্গিত থাকলেও বাংলাদেশের বাস্তবতায় অদূর ভবিষ্যতে কূটনৈতিক নীতিতে বড় পরিবর্তন সম্ভব নয়।
বাংলাদেশের পাসপোর্টে আগে ইসরায়েলের পাশাপাশি তাইওয়ান এবং দক্ষিণ আফ্রিকা ভ্রমণেও নিষেধাজ্ঞা ছিল। অনেক আগেই সেই নিষেধাজ্ঞার তালিকা থেকে তাইওয়ান এবং দক্ষিণ আফ্রিকার নাম বাদ দেয়া হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পাসপোর্টে ইসরায়েলের প্রসঙ্গ বাদ দেয়া হলেও দেশটিতে বাংলাদেশিরা যেতে পারবেন না। যেহেতু ঐ দেশ (ইসরায়েল) আমাদের দ্বারা স্বীকৃত না। আমরা তাদের (ইসরায়েলকে) দেশ হিসাবে স্বীকৃতি দেই না। সেজন্য আমরা কোনভাবেই কাউকে সেখানে যাওয়ার সুযোগ দিতে পারবো না। পাসপোর্টে ইসরায়েলের প্রসঙ্গ বাদ দেয়ার ঘটনাকে তিনি প্রশাসনিক এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার বিষয় বলে তুলে ধরেন।