এস এম শাহজালাল সাইফুল ঃ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ৯৫ শতাংশ মুসলমানের দেশের স্কুল-কলেজ থেকে ইসলামী শিক্ষা তুলে দেয়াসহ সামগ্রীকভাবে ধর্মীয় তথা ইসলামী শিক্ষা সংকোচন এবং জাতিকে মাদকাসক্ত করতে মাদকের বিক্রয় সহজ করে দেশকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। তিনি মাদকের বিস্তার রোধ ও ইসলামী শিক্ষা সংকোচনের প্রতিবাদে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আগামী ৩১ মার্চ ঢাকায় জাতীয় মহাসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।
শনিবার সকালে ঐতিহাসিক চরমোনাই মাহফিলের দ্বিতীয় দিনে আয়োজিত ওলামা-বুদ্ধিজীবী সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, সরকারের কিছু কর্মকাণ্ডে মনে হচ্ছে তারা বাংলাদেশে হিন্দুত্ববাদী সংস্কৃতি চালুর অপচেষ্টায় মেতে উঠেছে। স্বপ্নের বাংলাদেশ আজ লুটেরা, সন্ত্রাসী দুর্নীতিবাজদের কবলে। প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে এ বেহালাবস্থা থেকে উদ্ধারে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বিপথগামী মানুষদের আত্মশুদ্ধি করার পাশাপাশি রাষ্ট্রশুদ্ধির কাজে নিয়োজিত রয়েছে।
নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, সদ্যসমাপ্ত ইউপি নির্বাচনে দেখা গেছে জনগণ আগে ভোট দিতে পারতোনা,আর এখন প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতেও পারেনা। এতে প্রমাণিত হয়- দলীয় সরকারের অধীনে আগামীতে কোন সুষ্ঠ নির্বাচন হবে বলে মনে হয় না।
ওলামা-বুদ্ধিজীবী সম্মেলনে দেয়া বক্তব্যে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মুহাম্মাদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে হাতপাখাকে বিজয়ী করতে একযোগে সবাইকে কাজ করতে হবে। কুরআন, হাদীসের শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই বলেন, কারাগারে বন্দী ওলামায়ে কেরামদের মুক্তি দিতে হবে।
লক্ষীপুরের চরকাদিরা ইউনিয়নে হাত পাখা প্রতিকে নির্বাচিত আলোচিত চেয়ারম্যান খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন, সমগ্র দেশ দুর্নীতির অতল সাগরে ডুবে আছে। সরকারের দায়িত্বশীলরা স্বীকার করে সর্বত্র দুর্নীতি। ক্ষমতাসীনদের দিয়ে দুর্নীতি দমন করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, যে যত শিক্ষিত ও যত বড় পদের অধিকারী সে তত বড় দুর্নীতিবাজ।
শায়খ জাকারিয়া ইসলামী রিসার্চ সেন্টারের মহাপরিচালক মুফতী মিজানুর রহমান সাঈদ বলেন, আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়েম করা ফরজে আইন। কায়েম করা সম্ভব না হলে চেষ্টা করা ফরজে আইন।
সরকারে সাবেক সচিব এম এম নিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য ইসলামী আন্দোলনের মাধ্যমে শক্তি সঞ্চয় করে কাজ করতে হবে। আমাদের জ্ঞান অর্জন করতে হবে। সন্তানদেরকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারলে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।
জামেয়াতুস সুন্নাহ মাদারীপুরের মুহতামিম নেয়ামতুল্লাহ আল ফরিদী বলেন, ধর্মের নাম দিয়ে ইসলামের বিরোধীতা করার কোন ধর্ম নেই, তাই ইসলাম বিরোধীরা ধর্মহীনতাকে দিয়ে ইসলামের মোকাবেলা করতে চায়। পৃথিবীর ২০০ কোটি মুসলমান বিশ্বাস করে আল্লাহ ছাড়া কারো আইন মানিনা। রাষ্ট্রীয়ভাবে, শিক্ষা ও বিচারের ক্ষেত্রে যা করছে তার সাথে কালেমার কোন সম্পর্ক নেই।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল লতিফ মাসুম বলেন, এ দেশের নেতারা দুনিয়ার কথা বলেন। অনেক আলেম ওলামা আখেরাতের কথা বলেন। আর চরমোনাই পীর সাহেব দুনিয়া ও আখেরাতের কথা বলেন। বুলেটের বিপরীতে ব্যলট অস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই ব্যালটের মাধ্যমে ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠায় সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতে হবে।
চরমোনাইতে আসা মেহমানদের মধ্যে অসুস্থ ব্যক্তিদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসার জন্য ১০০ শয্যার অস্থায়ী হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) সকাল ৮ টায় আখেরী মোনাজাতের মাধ্যমে চরমোনাইর তিন দিনব্যাপী মাহফিল শেষ হবে।