বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক :এপ্রিলে হবে গুনাহ মাফের মাস রমজান। পবিত্র এই মাসকে ঘিরে মুসলমানদের রয়েছে হাজারো পরিকল্পনা। কিন্তু সারাদিন রোজা রাখা, ইফতার, আল্লাহর ইবাদত করা ইত্যাদি কীভাবে কি করবেন তা নিয়ে আগে থেকেই প্রস্তুত থাকা উচিত।
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সময়ে রমজান যতই ঘনিয়ে আসত, রমজান নিয়ে নবীজির আগ্রহ, আলোচনা ও আমলের মাত্রা ততই বেড়ে যেত। সঙ্গে তিনি সাহাবিদের রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দিতেন। চলুন জেনে নেয়া যাক রমজানের কোন কোন দিক থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করা জরুরি-
রমজানের দু-এক দিন আগে রোজা না রাখা :
রমজানের প্রস্তুতির মধ্যে এটিও একটি বিষয়- রমজানের মর্যাদা রক্ষার জন্য এর দু-এক দিন আগে রোজা না রাখা। তবে কেউ আগে থেকে রোজা রাখতে অভ্যস্ত হলে তার ব্যাপার আলাদা।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন রমজানের এক দিন কিংবা দুই দিন আগে অবশ্যই রোজা না রাখে। তবে হ্যাঁ, কারও (আগে থেকেই) এদিনে রোজা রাখার অভ্যাস থাকলে সে ওই দিনেও রোজা রাখতে পারে।’ (বুখারি, হাদিস : ১৮১৫; মুসলিম, হাদিস : ২৫৭০)
রমজানের ব্যক্তিগত প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা :
রমজান মুমিনের চাওয়া-পাওয়ার উপযুক্ত সময়। কাজেই আল্লাহর আনুগত্যে রমজানের রাত-দিন কাটানোর জন্য কার্যকর একটি পরিকল্পনা তৈরি করা উচিত।
>> রমজানে ইবাদতে কাটানোর জন্য কিছু কাজকর্ম, অনুষ্ঠান, ভ্রমণ ইত্যাদি রমজানপূর্ব সময়ে সেরে নেয়া।
>> বিশেষ কোনো রোগব্যাধি থাকলে রমজানের আগেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রমজানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবস্থাপত্র গ্রহণ করা।
>> হাট-বাজারে সময় নষ্ট না করার জন্য যথাসম্ভব হাট-বাজার রমজানের আগেই সেরে নেয়ার চেষ্টা করা।
>> রমজানে পালনীয় ইবাদত-বন্দেগি সংক্রান্ত বিধি-বিধান রমজানের আগেই জেনে নেয়া।
রমজানের পারিবারিক প্রস্তুতি :
রমজানের বরকত ও পুণ্য অর্জনে পরিবারকে আগ্রহী করতে পারিবারিক তালিম করা। পরিবারের কোনো সদস্য কোরআন তিলাওয়াত করতে না পারলে, তাকে শেখানোর ব্যবস্থা করা। রমজানে পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন কাজ ভাগাভাগি করে নেয়া এবং পরস্পরকে সহযোগিতা করা।
আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো। ’ (সুরা : তাহরিম, আয়াত : ৬)
রমজানের সামাজিক প্রস্তুতি :
রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানপূর্ব সময়ে সমাজের লোকদের রমজান আগমনের বার্তা দিতেন, রমজানের সুসংবাদ জানাতেন এবং সবাইকে রোজা রাখার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করতেন।
আল্লাহ বলেন, ‘তুমি উপদেশ দিতে থাকো, কারণ উপদেশ মুমিনদের উপকারে আসবে। ’ (সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ৫৫)
রমজানের অর্থনৈতিক প্রস্তুতি :
রমজানপূর্ব সময়ে অর্থনৈতিকভাবেও প্রস্তুতি গ্রহণ করা উচিত। যেমন— রমজানে সাহরি-ইফতার, অন্যকে সহযোগিতা করা, জাকাত আদায় ইত্যাদি খাত তৈরি হয়। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনের অতিরিক্ত জিনিস কেনা থেকে বিরত থেকে এসব জরুরি খাতে অর্থ ব্যয়ের প্রস্তুতি গ্রহণ করা।
রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়িয়ে বাড়তি ফায়দা লোটার চেষ্টা না করা। উমর (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘কেউ যদি মুসলমানদের থেকে নিজেদের খাদ্যশস্য আটকে রাখে (কৃত্রিম উপায়ে খাদ্য গুদামজাত করে সংকট তৈরি করে) আল্লাহ তার ওপর মহামারি ও দারিদ্র্য চাপিয়ে দেন। ’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২১৫৫)
রমজান মহান আল্লাহর রহমতের বারিধারায় সমৃদ্ধ, ইবাদতের বসন্ত, মুমিনের প্রার্থিত মাস। আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে যথার্থভাবে রমজান উদযাপন করতে পারাই সবার কাম্য হওয়া উচিত।