বঙ্গ নিউজ বিডি ডেস্ক: ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানে আনন্দ। টানা এক মাস সংযমে থেকে পরিশুদ্ধ হৃদয়ে কলুষমুক্ত জীবন, পরিবার ও সমাজ গঠনের অঙ্গীকারে একে অপরকে পরমাবেগে বুকে জড়িয়ে ধরার নামই হলো ঈদ। রমজানের বরকত লাভের জন্য ত্যাগ, কষ্ট-ক্লেশ ও আয়াস সাধ্য-সাধনার পর বহুল প্রতীক্ষিত ঈদ আমাদের জীবনে বয়ে আনে অনাবিল আনন্দ ও সুখ-সমৃদ্ধি।
এ আনন্দ পরকালীন জীবনের জন্য শান্তি ও মুক্তি লাভের এক অনন্য আধ্যাত্মিক অনুভূতি। তাই রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মহিমাময় রমজান শেষে আকাশে শাওয়ালের নতুন চাঁদ দেখামাত্রই খুশির জোয়ার বয়ে যায় প্রতিটি রোজাদারের দেহ-মনে। আনন্দ-খুশির কল্লোল ছড়িয়ে পড়ে ধনী-গরিব, ছোট-বড়, আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবার মাঝে। প্রতিটি প্রাণে দোলা দেয় ঈদের আনন্দ।
ঈদের দিন যেমন বিশেষ কিছু আমল আছে, তেমনি আছে ঈদের আগের রাতেও। ঈদের আগের রাতের বিশেষ কিছু আমল সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো।
ঈদের আগে সদকাতুল ফিতর আদায় করা-
পবিত্র রমজানের ইবাদতের মধ্যে সদকাতুল ফিতর আদায় করা অন্যতম একটি ইবাদত। রমজানের রোজার ভুলত্রুটি পরিপূর্ণতার জন্যই এটি আবশ্যক করা হয়েছে। সদকাতুল ফিতর হলো নামাজের সিজদায়ে সাহুর মতো। অর্থাৎ নামাজে ত্রুটি-বিচ্যুতি হলে সিজদায়ে সাহু যেমন এটার পূর্ণতা দেয়, তেমনি রোজার ত্রুটি-বিচ্যুতি হলে সদকাতুল ফিতর দ্বারা এর প্রতিকার লাভ হয়।
আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) সদকাতুল ফিতর আদায় করাকে ওয়াজিব করেছেন। এর পরিমাণ হলো এক সা যব বা এক সা খেজুর। ছোট-বড়, স্বাধীন-পরাধীন সবার ওপরই এটি আদায় করা আবশ্যক। (বুখারি, হাদিস : ১৫১২)।
আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) রোজা পালনকারীর জন্য সদকাতুল ফিতর আদায় অপরিহার্য করে দিয়েছেন, যা রোজা পালনকারীর অনর্থক, অশ্লীল কথা-কাজ পরিশুদ্ধকারী এবং অভাবী মানুষের জন্যে আহারের ব্যবস্থা। যে ব্যক্তি ঈদের সালাতের আগে এটি আদায় করবে, তা সদকাতুল ফিতর হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে। আর যে ঈদের সালাতের পরে আদায় করবে, তখন তা অপরাপর নফল সদকা হিসেবে গৃহীত হবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৬০৯),
নতুন চাঁদ দেখা ও দোয়া পড়া-
মহিমাময় পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ তথা নতুন চাঁদ দেখে দোয়া পড়া সুন্নত। হজরত তালহা ইবনু উবায়দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) নতুন চাঁদ দেখলে এই দোয়াটি পাঠ করতেন- উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল য়ুমনি ওয়াল ঈমান, ওয়াস সালামাতি ওয়াল ইসলাম; রাব্বি ওয়া রাব্বুকাল্লাহ। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫২৬)।
অর্থ : হে আল্লাহ! এ চাঁদকে ঈমান ও নিরাপত্তা, শান্তি ও ইসলামের সঙ্গে উদিত করুন। আমার ও তোমার প্রভু আল্লাহ।
আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রা.) থেকে বর্ণিত অন্য বর্ণনায় দোয়াটি এভাবেও এসেছে- উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল য়ুমনি ওয়াল ঈমান, ওয়াস সালামাতি ওয়াল ইসলামি ওয়াত্তাওফিক; লিমা তুহিব্বু ওয়া তারদ্বা, রাব্বি ওয়া রাব্বুকাল্লাহ। (সুনানে দারিমি, হাদিস : ১৬৯৭)।
অর্থ : হে আল্লাহ! এ চাঁদকে ঈমান ও নিরাপত্তা, শান্তি ও ইসলাম এবং যে জিনিসটি আপনি পছন্দ করেন ও সন্তুষ্ট হন, সেটার তাওফিকের সঙ্গে উদিত করুন। আমার ও তোমার প্রভু আল্লাহ।
ঈদের রাতে নফল ইবাদত-
ঈদ আমাদের মাঝে আনন্দের বার্তা যেমন নিয়ে আসে, তেমনি নিয়ে আসে আল্লাহর নৈকট্য লাভের মহাসুযোগ। বিশেষত ঈদের রাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ফজিলতমণ্ডিত। হাদিসে বর্ণিত আছে- আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির লাভের জন্য দুই ঈদের রাত জেগে ইবাদতে মশগুল হবে, কিয়ামতের কঠিনের দিনেও তার অন্তর মরবে না, যেদিন ভয়ংকর ও বিভীষিকাময় পরিস্থিতির কারণে মানুষের অন্তর মারা যাবে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৭৮২)।
ঈদের দিনে বিশেষ সুন্নত আমল-
এক. গোসল করা ও পবিত্রতা অর্জন করা। ঈদের নামাজের জন্য গোসল করা ও মিসওয়াক করা সুন্নত। (বুখারি : ১/১৩০)
দুই. সুন্দর ও উত্তম পোশাক পরিধান করা। (বায়হাকি, হাদিস : ৬৩৬৩)।
তিন. ঈদগাহে যাওয়ার আগে পানাহার করা। (বুখারি, হাদিস : ৯৫৩)।
চার. ঈদগাহে যাতায়াতের সময় তাকবির বলা। (সিলসিলাতুল আহাদিস আস সহিহাহ : ১৭১)।
পাঁচ. ঈদগাহে আসা-যাওয়ার রাস্তা পরিবর্তন করা। ঈদগাহে যাতায়াতের রাস্তা পরিবর্তন করা সুন্নাত। (সহিহুল বুখারি, হাদিস : ৯৮৬)
ছয়. পায়ে হেঁটে ঈদগাহে গমন। কোনো ধরনের অপারগতা ও অক্ষমতা না থাকলে পায়ে হেঁটে ইদগাহে গমন করা সুন্নত। (তিরমিজি, হাদিস : ১২৯৫)।
সাত. ঈদগাহে যেতে শিশুদের সঙ্গে নেওয়া। (সুনানে কুবরা বায়হাকি, হাদিস : ৬৩৪৯)।
আট. ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা। ঈদের দিন একে অপরের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে শুভেচ্ছা বিনিময় করা সুন্নত। হাদিসে বর্ণিত আছে, যুবাইর ইবনে নুফাইর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজি (সা.) সাহাবায়ে কিরাম ঈদের দিন পরস্পর সাক্ষাৎ হলে বলতেন ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়ামিন কুম।’ আল্লাহ আমার ও আপনার যাবতীয় ভালো কাজ কবুল করুক। (ফাতহুল কাদির : ২/৫১৭)।
নয়. ঈদের খুতবা শ্রবণ করা। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১০৭৩)।
দশ. ঈদগাহ থেকে ফিরে নফল আদায় করা। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১২৯৩)।
ঈদের দিনের এসব চমৎকার আমল ও আয়োজন আমাদের ঈদ আনন্দ বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে ইনশা আল্লাহ। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফিত দান করুক। আমিন।