বঙ্গ নিউজ বিডি ডেস্ক : অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্য নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে। ২৪ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদের অন্তত ১৩ জনের জন্মস্থান চট্টগ্রাম বিভাগে। এই ১৩ উপদেষ্টার দপ্তর-উপ দপ্তরেও তাদের নিজস্ব এলাকার ব্যক্তিদের গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। উপদেষ্টা পরিষদে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঢাকা বিভাগের রয়েছেন ৭ জন। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের কেউ উপদেষ্টা পরিষদে নেই। খুলনা ও বরিশাল বিভাগের একজন করে আছেন। একক জেলা হিসেবে চট্টগ্রাম এবং কুমিল্লা জেলা থেকে উপদেষ্টা হয়েছেন বেশি।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকেই এই বৈষম্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এমন বৈষম্য দূর করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মসূচিও পালন করা হয়েছে।
রাজনৈতিক সরকারের সময়েও মন্ত্রী নিয়োগের ক্ষেত্রে বিভাগ ও অঞ্চল বিবেচনা করে নিয়োগ দেয়া হয় যাতে সব অঞ্চল ও এলাকার প্রতিনিধিত্ব থাকে। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে এক্ষেত্রে বড় বৈষম্য তৈরি হয়েছে অঞ্চল বিবেচনায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে উপদেষ্টা পরিষদে এই অঞ্চল বৈষম্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম। এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘শুধু ১টা বিভাগ থেকে ১৩ জন উপদেষ্টা; অথচ উত্তরবঙ্গের রংপুর, রাজশাহী বিভাগের ১৬টি জেলা থেকে কোনো উপদেষ্টা নাই! তার উপর খুনি হাসিনার তেলবাজরাও উপদেষ্টা হচ্ছে!’
ওদিকে রোববার রাতে তিন উপদেষ্টার শপথ নেয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অঞ্চল বৈষম্য নিরসন দাবি করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন উত্তরাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে রাষ্ট্র বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. নূরুল আমীন বেপারী বলেন, বিভিন্ন জায়গায় কথা উঠেছে সরকার এক বিভাগ থেকেই বেশি উপদেষ্টা নিয়েছে। এ কারণে সরকার বেশি সফলতা পাচ্ছে না বলে মনে করা হচ্ছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জন্মস্থান চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নে। শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের জন্মস্থানও চট্টগ্রাম বিভাগের নোয়াখালী জেলায়।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের পৈতৃক নিবাসও চট্টগ্রাম বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়। যদিও তার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা ঢাকায়। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলও চট্টগ্রাম বিভাগের কুমিল্লা জেলার। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারও চট্টগ্রাম বিভাগের কুমিল্লা জেলার বাসিন্দা। একই জেলার যুব ও ক্রীড়া এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপের অধিবাসী। একই জেলার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীরপ্রতীক। ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনের বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায়। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার চট্টগ্রামের চন্দনাইশের বাসিন্দা। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগমের পৈতৃক বাড়িও চট্টগ্রামে। বিয়ে ও পরিবার সূত্রে তিনি ঢাকার ধামরাইয়ের বাসিন্দা। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমার বাড়ি চট্টগ্রাম বিভাগের খাগড়াছড়িতে। সর্বশেষ উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেয়া মো. মাহফুজ আলমের বাড়ি চট্টগ্রাম বিভাগের লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফের জন্ম কলকাতায়। কলকাতা কোর্টে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করে পরে তিনি ঢাকায় আসেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ঢাকা বিভাগের নরসিংদী জেলার অধিবাসী। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ঢাকা বিভাগের মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার বাসিন্দা। শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানও একই জেলার। বন ও পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার অধিবাসী। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ঢাকা জেলার বাসিন্দা। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়া মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী ঢাকার বাসিন্দা।
নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বরিশাল বিভাগের একমাত্র উপদেষ্টা।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দারের জন্মস্থান সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জে। যদিও তিনি কর্মসূত্রে ময়মনসিংহে স্থায়ী। তাকে বাদ দিলে সিলেট বিভাগের একমাত্র উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। আর গণশিক্ষা উপদেষ্টাকে সিলেটের বাসিন্দা ধরলে ময়মনসিংহ বিভাগেরও কোনো উপদেষ্টা নেই। সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ ঢাকার অধিবাসী। খুলনা বিভাগ থেকে একমাত্র উপদেষ্টা হয়েছেন সেখ বশির উদ্দীন। তিনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন।