বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক: সরকারের নানা উদ্যোগের পরও দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে পণ্যের দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। অথচ রমজান শুরু হতে আর মাত্র ১০ দিন বাকি। দাম কমার পরিবর্তে কিছু পণ্যের দাম উলটো বাড়ছে। সরকার ১ মার্চ থেকে সয়াবিন তেলের দাম লিটার প্রতি ১০ টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত নিলেও বাজারে এর প্রভাব নেই। অতিরিক্ত দামে ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যেই ইফতারি তৈরির পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। দাম বেড়েছে মটরের। একই সঙ্গে মটর ডালের দামও বেড়েছে। ১৫ দিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি মটরের দাম ৫ টাকা করে বাড়িয়েছেন খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। কাচাবাজারে সবজির দামও কিছুটা কমলেও বেড়েছে মাংস ও মাছের দাম। ভোক্তাদের অভিযোগ-১ মার্চ থেকে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১০ টাকা কমার কথা। কিন্তু বাজারে দাম কমার লক্ষণ নেই। আগের মতোই অতিরিক্ত দামে সয়াবিন তেল বিক্রি করছেন। সরকার ভোগ্যপণ্যের ওপর শুল্ক কমিয়েছে। কিন্তু দাম কমবে কখন? এছাড়াও সরকার কোনো পণ্যের দাম বা শুল্ক বাড়ালে ব্যবসায়ীয়রা মিনিটের মধ্যে কার্যকর করেন। আর দাম কমালে কার্যকর হয় না। সরকার নির্ধারিত দাম কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকে। নির্ধারিত দাম বাজারে কার্যকর হয়েছে কিনা, তা যাচাই-বাছাই করারও যেন কেউ নেই। সাধারণ মানুষ অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে একেবারে অসহায়।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী সূত্রে জানা যায়, গত সপ্তাহে ভোজ্যতেলের নতুন দাম নির্ধারণ করে সরকার। প্রতি লিটারে ১০ টাকা কমিয়ে বোতলজাত সয়াবিনের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬৩ টাকা। এছাড়া খোলা সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪৯ টাকা। যা শুক্রবার থেকে কার্যকর হয়েছে। ৫ লিটার ভোজ্যতেলের বোতল ৮০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
কিন্তু সরকার নির্ধারিত দামে ভোজ্যতেল কোথাও বিক্রি হচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা বাজারে ভোজ্যতেলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছেন। প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১৬৩ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও বিক্রি হচ্ছে লিটার প্রতি ১৭০ টাকার বেশি দামে। ৫ লিটারের বোতল বিক্রি হচ্ছে ৮২৫ টাকায়। এদিকে রমজান সামনে রেখে বেড়েছে ছোলার দামও। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ছোলায় ঠাসা। তারপরও ছোলার কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এক সপ্তাহ আগেও মনপ্রতি (৩৭.৩২ কেজি) ছোলা ছিল ৩ হাজার ৬০০ টাকা। বা প্রতি কেজি ৯৭ দশমিক ৮১ টাকার মতো। এখন বস্তাপ্রতি ১০০ টাকার কাছাকাছি বেড়েছে। খুচরা বাজারে আরও অতিরিক্ত দামে ছোলা বিক্রি হচ্ছে।
ছোলার আড়তদার কামরুল হুদা রাসেল জানান, এখন বাজারে ছোলার দাম বাড়তি। গত সপ্তাহের চেয়ে চলতি সপ্তাহে মনপ্রতি ১০০ টাকা বেড়েছে। প্রতিমন ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৭০০ টাকায়।
অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে প্রতি টনে আমদানি শুল্ক কমিয়ে এক হাজার টাকা করা হয়েছে, আগে যা ছিল দেড় হাজার টাকা। আর পরিশোধিত চিনি আমদানিতে টনপ্রতি শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে দুই হাজার টাকা, যা আগে ছিল তিন হাজার টাকা। প্রতি কেজি চিনিতে আমদানিকারকরা গড়ে শুল্ককর দিয়েছেন ৪০ দশমিক ৩৫ টাকা। এখন শুল্ক করে ছাড় দেওয়া হয়েছে কেজিতে ৭৫ পয়সা। কিন্তু চিনি বিক্রি হচ্ছে আগের মতোই। প্যাকেটজাত চিনির কেজি ১৪৮ টাকা এবং খোলা চিনি কেজি ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বেশকিছু ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। প্রতি কেজি ছোলা ১০০ থেকে ১১০ টাকা, অ্যাংকর ডাল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, ডাবলি ৭৫ টাকা, মোটা দানার মসুর ১০৫ থেকে ১১০ টাকা, চিকন মসুর ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা, মোটা দানার মুগ ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা, চিকন মুগ ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, খেসারি ১০৫ থেকে ১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য পণ্যের মধ্যে খোলা আটা ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, প্যাকেট আটা ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা, খোলা ময়দা ৬৫ থেকে ৭০ টাকা এবং প্যাকেট ময়দা ৭৫ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
চালের দাম কমানো লক্ষে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নিয়েছে সরকার। সেই সঙ্গে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বা রেগুলেটরি ডিউটি ২৫ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। আগে চাল আমদানিতে কেজিতে করভার ছিল ৩১ টাকা। এখন তা কেজিতে সাড়ে ২৩ টাকা কমবে। কিন্তু চালের দামও আগের মতোই। চালের পাইকারি বাজারখ্যাত চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ও পাহাড়াতলী বাজারে প্রতি বস্তা চালের দাম বেড়ে ২০০ টাকার পর বস্তা প্রতি ৫০ টাকা কমেছে। মিলাররা সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাইকারদের। বর্তমানে চালের দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই বলেও জানান তারা। ক্রেতাদের অভিযোগ-বাজারে চালের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অতিরিক্ত দাম হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।