বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক: কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, যেই নৌকা দেখলে মানুষের চোখে পানি আসত এখন সেই নৌকাকে মানুষ এত ভালোবাসে না। ২০১৮ সালে কি একটা ভোট হয়েছে, তারপরও আপনারা নেতা, নৌকা মার্কা হইলেই পাশ। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশটা কি ডুবে যাক, যদি না চান তাহলে মানুষের কাছে যান।
শুক্রবার দুপুরে কুমিল্লার হোসেনপুর গ্রামের সদ্য কারামুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা রাখালচন্দ্র নাহার বাড়িতে তাকে দেখতে গিয়ে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি বীরউত্তম কাদের সিদ্দিকী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা, জাতির পিতাই হওয়া উচিত ছিল, আওয়ামী লীগের না। এ দেশটাকে চেয়েছিলাম মানুষের দেশ, দানবের নয়। মুক্তিযুদ্ধ করে ছিলাম সাধারণ মানুষের জন্য, কিন্তু তা হয় নাই। পাকিস্তান আমলে অফিসার ও দারোগা পুলিশরা যা ছিলেন তার চেয়ে দেশ অনেক খারাপ হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কোনো মুক্তিযোদ্ধার একটি অপরাধে বা একটি মামলায় ফাঁসি হতে পারে না, বীর মুক্তিযোদ্ধা রাখাল নাহার ওপর অবিচার করা হয়েছে, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ১৪ বছরের স্থলে তাকে ২৪ বছর কারাভোগ করতে হয়েছে।
এ সময় কাদের সিদ্দিকী ও লতিফ সিদ্দিকী মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের ‘বীরনিবাসের বরাদ্দের চিঠি’ ও ব্যক্তিগত তহবিল থেকে নগদ দুই লাখ টাকা রাখালচন্দ্র নাহার হাতে তুলে দেন।
রাখালচন্দ্র নাহা বলেন, আমি এখন মুক্ত আকাশের নিচে আছি, শান্তিতে আছি, কারাগারে নাই। আমার মুক্তির জন্য দেশবাসী অনেক আন্দোলন করেছেন, আপনাদের কারণে মৃত্যুর দরজা থেকে ফিরে এসেছি, তাই সবার কাছে কৃতজ্ঞ।
উপজেলার হোসেনপুর গ্রামে ১৯৯৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেশী দীনেশ চন্দ্র দত্তকে হত্যার অভিযোগে ২০০৩ সালের ২০ জানুয়ারি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (প্রথম আদালত) খান আবদুল মান্নান বীর মুক্তিযোদ্ধা রাখালচন্দ্রকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এরপর ২০০৮ সালের ৭ এপ্রিল মধ্যরাতে রাখালচন্দ্র নাহার মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকরের সিদ্ধান্ত হয়। পরে ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ সংগঠন ও দেবিদ্বার উপজেলা প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে দেবিদ্বারে এবং ৫ এপ্রিল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে ফাঁসির দণ্ড রহিত করার জন্য দাবি জানানো হয়। এ আন্দোলনে যোগ দেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীও।
পর দিন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে ‘মুক্তিযোদ্ধার ফাঁসি কাল’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদের অনুরোধে রাষ্ট্রপতি ইয়াজ উদ্দিন তার মৃত্যুদণ্ড মওকুফ করেন।
অবশেষে বীর মুক্তিযোদ্ধা রাখালচন্দ্র নাহা যাবজ্জীবন সাজা ভোগ করে পাঁচ বছর সাত মাস সাজা রেয়াত পাওয়ায় দীর্ঘ ২৪ বছরের কারা জীবনের অবসান ঘটে এবং গত ৩ জুলাই দুপুরে কুমিল্লা কারাগার থেকে তিনি মুক্তি লাভ করেন।