বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক: গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বারতোপা এলাকার কাপড়ের দোকানি নুরুল আমীন। তার স্ত্রী শাহনাজ পারভীন স্বামীর ব্যবসার জন্য ২০১৭ সালে ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ (টিএমএসএস) নামে একটি এনজিও থেকে এক লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। যা মেয়াদান্তে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা দাঁড়ায়।
শাহনাজের স্বামী নুরুল আমিন জানান, শাহনাজ নিয়মিত প্রতি মাসের কিস্তি হিসেবে ৯ হাজার ৫০০ টাকা করে পরিশোধ করতেন। কিন্তু নানা সমস্যার কারণে যথাসময়ে তিনি দুটি কিস্তি দিতে ব্যর্থ হন।
পরে এনজিওকর্মীর পীড়াপীড়িতে দুই মাস পরই দুটি কিস্তি দিয়ে ঋণ পরিশোধ করেন শাহনাজ। তবুও ঋণ পরিশোধ না করার দায়ে শাহনাজের বিরুদ্ধে এনজিওর পক্ষ থেকে মামলা করা হয়। যা শাহনাজ বা তার স্বামী কেউই জানতেন না।
সোমবার বিকেলে ছয় মাসের দুগ্ধপোষ্য শিশুকে রেখে ওই মামলায় গ্রেপ্তারী পরোয়ানা মূলে শাহনাজ পারভীনকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ। মা’কে দীর্ঘক্ষণ না পেয়ে থেমে থেমে কাঁদছে শিশুটি।
শাহনাজের স্বামী নুরুল আমীন আরও বলেন, ঋণ গ্রহণের পর দুটি কিস্তি পরিশোধ করতে কিছুটা সময় লাগে। দুই মাস পরই ঋণের টাকা পরিশোধ করা হয়। এ সময় এনজিও আমাদের ঋণ পরিশোধের প্রত্যয়নও দেয়।
যদিও পরে তারা আমার স্ত্রীর নামে মামলা করেন। এ মামলার বিষয়ে আমরা কেউ কিছু জানতাম না। হঠাৎ করে সোমবার শ্রীপুর থানা পুলিশ গিয়ে আমার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, সমস্যা হয়েছে আমার ছয় মাসের শিশু ফাতেমার জন্য। সে এখনও তার মায়ের দুধ ছাড়া কিছুই খায় না। বিকেল থেকেই মায়ের জন্য সে কান্নাকাটি করছে।
এ বিষয়ে শ্রীপুর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) গোলাম সারোয়ার বলেন, এনজিওর মামলায় আদালতের পরোয়ানা মূলে ওই নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মঙ্গলবার তাকে আদালতে পাঠানো হবে।
কালিয়াকৈর সার্কেলের (শ্রীপুর-কালিয়াকৈর থানা) এএসপি মো. আল মামুন জানান, ওয়ারেন্টমূলে তাকে গ্রেপ্তারের পর আর ছাড়ার উপায় থাকে না। তাকে আদালতে পাঠাতেই হবে।
এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবেন আদালত। তবে থানা হাজতের ভালো কক্ষে বাচ্চাসহ যাতে ওনি থাকতে পারেন, বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে পারেন তারজন্য ব্যবস্থা নিতে বলে দিয়েছি।
এ ব্যাপারে টিএমএসএসের শ্রীপুর ১ শাখার ব্যবস্থাপক আব্দুল আলীম সাংবাদিকদের বলেন, শাহনাজ পারভীন নামে বর্তমানে আমাদের কোনো সদস্য নেই, তবে আগে ছিল।
তখন আমি এ শাখার ব্যবস্থাপক ছিলাম না। তার কাছে আমাদের কোনো দেনা পাওনা নেই। তবে তার বিরুদ্ধে কেন মামলা হলো তা আমি কিছুই বলতে পারব না। আমার আগে যিনি দায়িত্বে ছিলেন বিষয়টি তার জানা থাকতে পারে।
টিএমএসএসের গাজীপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক আতাউর রহমান বলেন, মামলা ও নারীকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। স্থানীয় ব্যবস্থাপকের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম বলেন, যদি এনজিওর ঋণের টাকা পরিশোধের পরও মামলা ও দুগ্ধপোষ্য শিশু রেখে একজন নারীকে গ্রেপ্তার করা হয় তা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক।
বিষয়টি যদি সত্যি হয়ে থাকে তবে সরকারি আইনজীবিকে (জিপি) ঘটনাটি আদালতের নজরে আনার অনুরোধ করছি।