সোমবার টুইট করে সায়নির যুব তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি হওয়া নিয়ে মন্তব্য করতে তিনি টেনে আনেন ‘শিবলিঙ্গ ও কনডম’ প্রসঙ্গ।
বিজেপি নেতা তথাগত রায় আরও প্রশ্ন তোলেন সায়নিকে গুরুত্ব দিয়ে কি তৃণমূল হিন্দুদের অপমান করতে চাইছে। তার এ বিতর্কিত মন্তব্যের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।
গত শনিবার নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন অভিনেত্রী সায়নী।
সোমবার তথাগত টুইটবার্তায় লেখেন, ‘শিবলিঙ্গে কনডম পরিয়ে (কবে পরিয়েছিলেন সেটা অবান্তর) আমার মতন তাবৎ হিন্দুকে, বিশেষত শিবভক্তদের, চরম অপমান করেছেন সায়নী ঘোষ। তাকে উত্তরোত্তর সম্মান দিয়ে হিন্দুদের কি বলতে চাইছেন মমতা? আমি ভোটে জিতেছি, এবার যা খুশি করব। তোরা অসহায় হিন্দুরা কি করতে পারিস?’
তার এ মন্তব্যের পর ভার্চুয়াল জগতে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। মৌমিতা পাওল নামের এক তরুণী লেখেন, ‘যেদিন দিলীপ ঘোষ (বিজেপির রাজ্য সভাপতি) মা দুর্গার বংশ পরিচয় জানতে চেয়েছিল, তাকে সহ সমগ্ৰ নারী জাতিকে অপমান করেছিল সেদিন আপনার চরম হিন্দুত্ব বোধ কোথায় ছিল? ভাষা সংযত করুন’।
মধুসূধন দাস নামের একজন শিক্ষক তথাগত রায়ের জবাবে রিটুইটে বলেন, ‘আপনি নিজেকে কোন দিক থেকে হিন্দু ভাবেন? আপনি উগ্ৰ হিন্দুত্ববাদীদের আড়ালে লুকিয়ে থাকা এক সাম্প্রদায়িক ব্যক্তি। কোথায় ছিলেন সেদিন যেদিন গোয়ালা বাবু দেবী দুর্গাকে অপমান করেছিলেন- পদ পাবার লোভে সেদিন তো চুপ করে ছিলেন।’
আরেকজন লিখেন, দয়া করে নিজের নির্বুদ্ধিতা, মেরুদন্ডহীনতা এবং অশ্লীলতার পরিচয় দেবেন না।
তথাগত রায়ের উদ্দেশে নিমাই কুমার রায় বলেন, মেয়েদের অবজ্ঞা করবেন না। এতে আপনার সম্মান নষ্ট হচ্ছে।
তথাগত রায়ের উদ্দেশে অশ্বিনী বিশ্বাস নামের একজন বলেন, ‘আপনি নিজেকে কোন দিক থেকে হিন্দু ভাবেন? আপনি উগ্ৰ হিন্দুত্ববাদীদের আড়ালে লুকিয়ে থাকা এক সাম্প্রদায়িক ব্যক্তি। কোথায় ছিলেন সেদিন যেদিন সোনা আবিষ্কারক দিলীপ ঘোষ দেবী দূর্গা মাকে অপমান করেছিলেন- সেইদিন আপনি কোথায় ছিলেন? পদ পাবার লোভে সেদিন তো চুপ করে ছিলেন।’
সোমবার সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বাংলায় হিন্দু-মুসলমান ভাগাভাগি চলে না। সেটা ভোটের রায়েই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কেউ যদি হারের পরেও না শেখে তবে কিছু করার নেই।
তিনি বলেন, গোটা ভোট পর্বেই তো বিজেপি এই সব বলেছে। কিন্তু মানুষের রায় বলে দিয়েছে বাংলায় সাম্প্রদায়িক রাজনীতি চলে না। কে কী টুইট করল তাতে কিছু এসে যায় না।
আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়, ২০১৫ সালে অভিনেত্রী সায়নী ঘোষের টুইটার হ্যান্ডল থেকে একটি গ্রাফিক শেয়ার হয়েছিল। একটি শিবলিঙ্গের ছবি। তাতে কনডম পরাচ্ছেন এক নারী। গ্রাফিক থেকে বোঝা যাচ্ছে, মহিলাকে এইডস সচেতনতার বিজ্ঞাপনের ম্যাসকট ‘বুলাদি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। গ্রাফিকের ভিতরে লেখা, ‘বুলাদির শিবরাত্রি’। পোস্টের ক্যাপশনে ছিল, ‘এর থেকে বেশি কার্যকরী হতে পারেন না ঈশ্বর’।
সেই পোস্টের ৬ বছর পরে গত ১৬ জানুয়ারি মাসে সায়নির বিরুদ্ধে কলকাতার রবীন্দ্র সরোবর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন বিজেপি নেতা ও উত্তর-পূর্বের ৩ রাজ্যের প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত রায়। অভিযোগপত্রে তিনি লিখেছিলেন, ‘আমি শিবের ভক্ত। ১৯৯৬ সালে শিবের পুজো দেওয়ার জন্য পায়ে হেঁটে কৈলাস-মানস সরোবর যাত্রা করেছিলাম। অভিনেত্রী সায়নী ঘোষের এই ছবিটি দেখে আমার ধর্মীয় ভাবাবেগ আহত হয়েছে। আমার আবেদন, আপনারা এই বিষয়ে তদন্ত করে সায়নী ঘোষের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করুন।’
ওই সময় অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ জানিয়েছিলেন, ২০১৫ সালে তার টুইটার অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছিল। তিনি দেখার পরই ওই বিতর্কিত পোস্টটি ডিলিট করে দিয়েছিলেন। যদিও তাতে বিতর্ক থামেনি। বিধানসভা নির্বাচন পর্বে বারবার এই প্রসঙ্গে বিজেপির পক্ষে আক্রমণ করা হয় আসানসোল দক্ষিণের তৃণমূল প্রার্থী সায়নীর বিরুদ্ধে।