শনিবার আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন মিতু হত্যা মামলার অন্যতম আসামি এহতেশামুল হক ভোলা।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিনের আদালতে ভোলা এ জবানবন্দি প্রদান করেন বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, দেশজুড়ে আলোচিত এ হত্যা মামলার তদন্তের বিভিন্ন পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কয়েকজনকে গ্রেফতার করলেও হত্যার মাস্টারমাইন্ড কে, তা নিয়ে এতদিন ছিল রহস্য। এ ঘটনায় স্বামী বাবুল আক্তার জড়িত বলে অভিযোগ ওঠে। মিতুর বাবা বিভিন্ন সময় তার বক্তব্যে বাবুলকে দায়ী করেন। একপর্যায়ে তাকে গ্রেফতারও করা হয়। বর্তমানে বাবুল আক্তার ফেনী জেলা কারাগারে আটক আছেন। শনিবার ভোলার জবানবন্দির মাধ্যমে বাবুলের সম্পৃক্ততার বিষয়টি অনেকটাই স্পষ্ট হলো।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা জানান, ‘মিতু হত্যা মামলার আসামি ভোলা শনিবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি মিতু হত্যা মামলার আলোচিত আসামি মুসা সম্পকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেওয়ার পাশাপাশি মিতু হত্যায় অস্ত্র সরবরাহ করার কথা স্বীকার করেছেন। জবানবন্দি শেষে আদালত ভোলাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।’
পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের পুলিশ সুপার নাঈমা সুলতানা জানান, ‘গ্রেফতারের পর ভোলা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। বলেছেন, মিতুকে হত্যায় স্বামী বাবুল আক্তারের নির্দেশে মুসাকে অস্ত্র সরবরাহ করেছিল ভোলা। শুধু তাই নয়; মিতু হত্যায় বাবুল আক্তার তথা মুসার ভূমিকা নিয়ে নানা তথ্য দেন। আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতেও ভোলা এসব বলেছেন।’
এর আগে ভারতে পালানোর সময় মিতু হত্যা মামলায় ‘অস্ত্র সরবরাহকারী’ এহতেশামুল হক ভোলাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। শুক্রবার তাকে দেশের সীমান্তবর্তী এলাকা যশোরের বেনাপোল থেকে গ্রেফতারের পর শনিবার দুপুরে আদালতে সোপর্দ করা হয়। ভোলাকে মিতু হত্যার ঘটনায় বাবা মোশাররফ হোসেনের দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
এর আগে মিতু হত্যা মামলায় ভোলাকে চার সপ্তাহের জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।একইসঙ্গে জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে তাকে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়। গত ১৪ অক্টোবর চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমানের আদালতে জামিনের সময় বাড়ানোর আবেদন করলে ভোলার আবেদন নামঞ্জুর করেন।
ভোলা হাইকোর্টের নির্দেশনা পালন না করায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। মিতুকে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা এ মামলা ছাড়াও মিতুকে হত্যায় অস্ত্র সরবরাহ করার অভিযোগে ভোলাসহ তার এক সহযোগীর বিরুদ্ধে পুলিশ বাকলিয়া থানায় অস্ত্র মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় আদালতে সাক্ষগ্রহণ চলছে।
২০১৬ সালের ৫ জুন নগরীর জিইসি মোড় এলাকায় প্রকাশ্যে গুলি করে ও ছুরিকাঘাতে খুন করা হয় বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতুকে। এ ঘটনায় বাবুল আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে পাঁচলাইশ থানায় মামলা দায়ের করেন।
সম্প্রতি পিবিআই’র তদন্তে মিতু হত্যায় তার স্বামী বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা ওঠে আসে। এরপর মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে বাবুল আক্তারকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় বাবুল আক্তারসহ ৫ জন কারাগারে রয়েছেন।