মোঃ জাহিদুর রহিম মোল্লা জেলা সংবাদদাতা : ওয়াসার প্রকৌশলী নির্বাহী প্রকৌশলী আল আমিন ঢাকায় একাধিক জমি ফ্লাট, গাজীপুরে রিসোর্ট, রাজবাড়ীতে গ্রামের বাড়ীতে আলিশান বাড়ী, গরুর খামার, বাড়ীতে বিদেশী কুকুর, কবুতর, শত বিঘা জমি সহ অঢেল সম্পদ গড়ে তোলার অভিযোগ উঠেছে। গত ২১ জানুয়ারী দুর্ণীতি দমন কমিশন ঢাকা প্রধান কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক তাছলীমা আক্তার একপত্রে অনুসন্ধানের লক্ষে ঢাকা ওয়াসা কারওয়ান বাজার প্রধান কার্যালয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে আগামী ২৯ জানুয়ারীর মধ্যে চাহিদা মোতাবেক রেকর্ডপত্র দুর্ণীতি দমন কমিশন প্রধান কার্যালয়ে প্রধানের জন্য প্রদান করেছেন।
এরআগে অবৈধ সম্পদ ও সম্পত্তি অনুসন্ধান ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়ে গত বছরের ৯ জুন দুর্নীতি দমন কমিশন ফরিদপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ও ঢাকা প্রধান কার্যালয়ে পৃথক পৃথক অভিযোগ দায়ের করেছেন, বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া ইউনিয়নের খালিয়া গ্রামের আব্দুর রহমান ও বালিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের শালমারার রাকিবুল ইসলাম।
লিখিত অভিযোগে বলেন, রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের শালমারা গ্রামের মৃত শেখ মোয়াজ্জেমের ছেলে ঢাকা কাওরান বাজার ওয়াসা প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আল আমিন। তার ঢাকা সাভারের একটি ৬ ছয় তলা বিল্ডিং, ঢাকা মোহাম্মদপুর বেঁড়িবাঁধে ১১ তলা বিল্ডিং, একটি ফ্ল্যাট, গাজীপুরে রিসোর্ট ও গ্রামের বাড়ী শালমারাতে ৭-৮ কোটি টাকা ব্যায়ে ৩তলা আধুনিক ডিজাইনের নির্মানাধীন ভবন, গরুর খামার, একাধিক অবৈধ স্থাপনা, বিভিন্ন ব্যাংক এ্যাকাউন্টে তার এবং তার পরিাবরের নামে অস্বাভাবিক ব্যাংক ব্যালেন্স রয়েছে। বাড়ীতে ছোট একটি ৩০ ফুটের টিনের ঘর এখনো রয়েছে। পাশের শরীকদের এক প্রকার জোড়পুর্বক সরিয়ে দিয়ে আলিশান বাড়ী তৈরী করছেন। গ্রামের বাড়ীতে বিদেশী কুকুর, কবুতর ও গরুর খামার গড়ে তুলেছেন। মাঠে শত বিঘা জমি ক্রয় করেছেন। সরকারী খাল দখল করে বাড়ীতে প্রবেশের রাস্তা নির্মাণ করেছেন। রাস্তা নির্মাণ করতে গিয়ে খালের পাশের কয়েকটি গাছ ফিল্মিস্টাইলে কেটেছে প্রকাশ্যে দিবালোকে। নির্বাহী প্রকৌশলী আল আমিনের বিরুদ্ধে বালিয়াকান্দি থানায় একটি গাছ চুরি মামলা দায়ের হয়। তিনি তার ও পরিবারের নামে থাকা অবৈধ সম্পত্তি সম্পর্কে অনুসন্ধান করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানান।
স্থানীয় বাসিন্দা এ্যাড. গোলাম মোস্তফা বলেন, প্রকৌশলী আল আমিন কয়েক বছর চাকুরী করেই তার ভাগ্যে খুলেছে। জানতে পেরেছি ঢাকার মোহাম্মদপুর বসিলায় ১০ শতাংশ জমির উপর ১২তলা ভবনের ২টি ফ্লাট,তার পাশেই বোনের নামে ৮শতাংশ জমি, ২তলা ভবন, আশুলিয়ার জামগড়াতে জমি, হেমায়েতপুর, ফরিদপুরের এক বন্ধুর সাথে জমি, গাজীপুরের জয়দেবপুরে রিসোর্ট, গ্রামের বাড়ীতে আলিশান বাড়ী নির্মাণ, মাঠে শত শত বিঘা জমি ক্রয়, গরুর খামার গড়ে তুলেছেন। সরকারী গাড়ী নিয়ে বাড়ীতে আসে। স্থানীয় লোকজনের সাথে খারাপ আচরণ করে।
ফ্রিজের মিস্ত্রি টোকন বলেন, আল আমিনের বাড়ী আর তার বাড়ী একই। আল আমিন তার বাড়ীর সৌন্দর্য্য করতে তাকে পাশেই বাড়ী করে দিয়েছেন। তার বাড়ী করতে খরচও দিয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মোক্তার হোসেন, জহির, ময়না, আঃ করিম বলেন, আল আমিনের বাবা ফায়ার সার্ভিসে চাকুরী করতো। কোন রকম ভাবে সংসার চলতো। আল আমিন চাকুরী পাওয়ার ৩-৪ বছরের মধ্যে বাড়ীতে থাকা টিনের ঘরের সামনে আলিশান ৩ তলা ভবন নির্মাণ করছেন। বাড়ীতে গরুর খামার, বিদেশী কুকুর, কবুতর পালন করেন। সরকারী খাল দখল করে বাড়ী থেকে বের হওয়ার পথ তৈরী করেছেন। সরকারী গাড়ী নিয়ে বাড়ীতে আসেন। মাঠে জমি পেলেই জমি ক্রয় করেন। এ ভাবে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। শুনেছি ঢাকায় একাধিক বাড়ী, ফ্লাট সহ বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে। মাত্র কিছু দিন চাকুরী করে এতো সম্পদ কিভাবে গড়ে তুলেছেন। বাড়ীতে আসেন সরকারী গাড়ী নিয়ে, চলেন রাজকীয় হালে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে দুদককে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানান।
নির্বাহী প্রকৌশলী আল আমিনের মাতা হোসনে আরা বেগম রুবি বলেন, বাড়ীতে যে ভবন করা হচ্ছে তার স্বামীর টাকায় করা। তিনি গরুর খামার সহ অন্যান্য ভাবে প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা আয় করেন। বাড়ীর পথ নিয়ে বিরোধের কারণে তার ছেলের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করছেন। সব অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবী করেন।
তিনি আরও বলেন, ছেলে মাঝে মাঝে সরকারী গাড়ী নিয়েই বাড়ীতে আসেন। প্রতি বছর বিদেশে যায়। এবারও বিদেশে যাবে। এ কারণে বাড়ীতে আসতে দেরী হবে।
ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী আল আমিন বলেন, তার গ্রামের বাড়িতে আনুমানিক ৭০ লক্ষ টাকা ব্যায়ের মাধ্যমে নির্মাণাধীন ৩ তলা ভবন, মোহাম্মদপুর বসিলায় দয়াল হাউজিং এ ১.০২ শতাংশ জমি, শালমারা, উত্তর শালমারা, শালকি ও সোনাইকুড়ি মৌজায় ২০.৭ লক্ষ টাকায় ৩.২ বিঘা ক্রয়কৃত কৃষি জমি রয়েছে। তার আয়কর নথিতে ঢাকার জমিসহ সকল সম্পদের বিবরণী অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ৭৯৯৪৯৪৮৬৮৫৭৯ নং আয়কর নথিতে ২০২৪ সালের ২৮ জানুয়ারী তথ্য অনুসারে ৮৪ লক্ষ ৭৫ হাজার ৭৫ টাকার স্থাবর অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। ওই নথি অনুযায়ী তিনি বাৎসরিক ৬ লক্ষ ৬৬ হাজার ৪ শত টাকা বেতন, ইন্টারেস্ট অন সিকিউরিটি ১ লক্ষ ৬৫ হাজার ৬ শত টাকা এবং কৃষি আয় ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকাসহ সর্বমোট ১১ লক্ষ ১২ হাজার টাকার আয়ের অনুকূলে ৬৬ হাজার ২ শত ৯১ টাকা আয়কর প্রদান করে যাচ্ছেন। প্রকৌশলী আল আমিনের ঢাকা ওয়াসার প্রাতিষ্ঠানিক তথ্য অনুযায়ী ২০২১ সালের ৬ জুলাই অনুষ্ঠিত ঢাকা ওয়াসার অগ্রিম ঋণ সংক্রান্ত সুপারিশে পৈতৃক জমিতে গৃহ নির্মাণ বাবদ ১ম কিস্তির ১০ লক্ষ টাকা ও স্মারক নং- ৪৬.১১৩.২০৮.০০.০১৩.০১৩.২০২০.৭৯৭ ২য় কিস্তিতে ৩০ লক্ষ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। অন্যদিকে ২০২২ সালের ২২ মার্চ ব্র্যাক ব্যাংকের ধানমন্ডি শাখা হতে ১২ লক্ষ টাকা ঋন ও ইস্টার্ন ব্যাংক থেকে ৬ লক্ষ টাকা ঋণ গ্রহণসহ পিতা হতে প্রাপ্ত পেনশন ও বাবার জীবন দশায় রেখে যাওয়া অর্থ সম্পদ থেকে ২০ লক্ষ টাকা গ্রহণ করে নির্মানাধীন বাড়ির কাজ করে যাচ্ছেন।
আল আমিন বলেন, তার বাবা শেখ মোয়াজ্জম হোসেন স্টেশন অফিসার হিসেবে ফায়ার সাভিস ও সিভিল ডিফেন্সে সুনামের সাথে চাকরি করেন। পরে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। তিনি পেনশন সহ জীবন দশায় ৩৫ লক্ষ টাকা রেখে যান আল আমিনের মায়ের নামে। তা থেকে তার মা নারী উদ্দোক্তা হিসেবে তিনি ২০২০ সালে খামার শুরু করেন। যা সরকার কতৃক নিবন্ধিত (নিবন্ধন নং ডিআর/রাজ/বালি ৩৩(২০২০-২১)।
প্রকৌশলী আল আমিন আরও বলেন, আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়। গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে সামাজিক ভাবে আমার সম্মানহানীর লক্ষ্যে দুদকে এ মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে।