বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক: কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ওলামা লীগ নেতা মাওলানা আবুল কাছেমের বিরুদ্ধে একটি মাদ্রাসা দখলের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের বসুয়ারা এলাকায় অবস্থিত বায়তুশ শরফ আলীম মাদ্রাসা দলবল নিয়ে দখলের চেষ্টা করে প্রতিরোধের মুখে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন বলে এলাকাবাসী জানান। মাওলানা আবুল কাছেম ওই ইউনিয়ন ওলামা লীগের সভাপতি। এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
বায়তুশ শরফ আলীম মাদ্রাসা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালের ২ ডিসেম্বর মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আবুল কাছেম প্রায় ১৭ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। বহিষ্কার ঠেকাতে ২০১০ সালের ৩০ মে তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। পরে তিনি বহিষ্কারের আদেশ ও পদত্যাগপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে একটি মামলা করেন। তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম ২০১০ সালের ২৪ জানুয়ারি আবুল কাছেমের বিরুদ্ধে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তদন্ত কমিটির রিপোর্টে তিনি দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় তাকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয়।
মাদ্রাসা সূত্রে আরও জানা গেছে, মাওলানা আবুল কাছেম ১৯৮৭ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে মাদ্রাসার সুপার হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এ সময়ে তিনি শিক্ষক-কর্মচারীদের অনুদানের ১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা, পরীক্ষার ফি বাবদ ৬ লাখ ১৩ হাজার ৪২৭ টাকা, ২০০৭ সালে টিউশন ফি বাবদ ১ লাখ ৫৯ হাজার ৯৯০ টাকা, এলাকাবাসীর অনুদানের ৭০ হাজার টাকা, নির্বাচনি পরীক্ষার ফি ৫৪ হাজার ৮৪০ টাকা, শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণের ১ লাখ ১৯ হাজার ৯৪৫ টাকা, গণ্যমান্য ব্যক্তিদের থেকে দানকৃত ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৮২০ টাকাসহ ১৬ লাখ ৯০ হাজার ২৮১ টাকা আত্মসাৎ করেন। এ অভিযোগে মাদ্রাসার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সুপার আ.ক.ম ইব্রাহিম ভুঁইয়া ২০১২ সালের ৬ আগস্ট কুমিল্লার আমলি আদালতে একটি মামলা করেন। মামলাটি ২০১৩ সালে তদন্ত করে চৌদ্দগ্রাম থানার উপপরিদর্শক সামছুদ্দিন অভিযোগপত্র দেন। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।
অন্যদিকে সুপার মাওলানা আবুল কাছেম উচ্চতর আদালত থেকে তাকে বরখাস্ত এবং তার পদত্যাগপত্র অবৈধ বলে রায় পান। রায়ের বিরুদ্ধে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ গত ১১ জুন সুপ্রিমকোর্টে আপিল করে। আপিলের তথ্যটি গোপন রেখেই মাওলানা আবুল কাছেম তাকে আ.লীগ সরকারের আমলে হয়রানি করেছে অজুহাতে সোমবার দলবল নিয়ে মাদ্রাসা দখলের চেষ্টা করলে এলাকাবাসী তা প্রতিরোধ করে।
মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এমদাদুল হক শাহী বলেন, দুটি মামলা উচ্চ আদালতে বিচারাধীন থাকা সত্ত্বেও আবুল কাছেম দলবল নিয়ে সোমবার মাদ্রাসাটি দখলের চেষ্টা করেন। যা এলাকাবাসী প্রতিরোধ করে। তিনি আরও বলেন, আবুল কাছেম ১৭ বছর ধরে ওলামা লীগের শ্রীপুর ইউনিয়ন সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তাকে আ.লীগ সরকারের আমলে কেউ হয়রানি করেনি।
মাওলানা কাছেম বলেন, দখলের অভিযোগ ভিত্তিহীন। মাদ্রাসাটি আমার পৈতৃক সম্পত্তির ওপর অবস্থিত। এই মাদ্রাসার জন্য আমি অনেক শ্রম দিয়েছি। আমাকে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। আমি আদালতের রায় পাওয়ার পর দায়িত্ব গ্রহণ করতে মাদ্রাসায় গিয়েছি। কিন্তু এলাকার একটি চক্র আমাকে অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, আবুল কাছেমের পক্ষ থেকে একটি আবেদন পেয়েছি। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব।