স ম জিয়াউর রহমান, চট্টগ্রাম থেকে : চট্টগ্রামের আলোচিত ও শিল্পাঞ্চলখ্যাত সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমানকে উদ্দেশ্য করে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আসলাম চৌধুরী এফসিএ এর দেওয়া প্রকাশ্য হুমকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে।
গত ৩১ মার্চ সোমবার সীতাকুণ্ড সরকারি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ঈদের নামাজ শেষে মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন সীতাকুণ্ড আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী লায়ন আলহাজ্ব আসলাম চৌধুরী এফসিএ।
বক্তব্যের একপর্যায়ে আসলাম চৌধুরীকে বলতে শোনা যায়, আমি থানা প্রশাসনকে বলতে চাই। বিশেষ করে আমাদের ওসি সাহেব। কিছুদিন আগে একটা মার্ডার ঘটেছে, নাসির হত্যা। এই হত্যার মামলাটা ওসি সাহেবের রুমে বসে পরিকল্পিতভাবে আমাদের কিছু লোককে ইচ্ছাকৃতভাবে আসামি করা হয়েছে। আমাদের দলের যে লোক হোক আপনি সঠিক আসামি চিহ্নিত করবেন। অন্যথায় আপনি কোনো প্রকার বায়াসড হয়ে মামলা করেন, আপনাকে আমি বলে দিচ্ছি এই ঈদগাহ থেকে। আপনি বাংলাদেশে থাকতে পারবেন না। যেখানেই থাকেন সেখান থেকেই আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব ইনশাল্লাহ সামনের দিনগুলোতে।
তিনি আরও বলেন, এই ছেলেগুলো বিগত বছরে অনেক সময় আমার সঙ্গে জেলে কাটিয়েছে। হ্যাঁ! তাদের অনেক ছোটখাটো অপকর্ম আছে। কয়েকজনের অনেক অপকর্ম আছে। আমি জানি তাদের এই অপকর্মগুলো এ রকম সিরিয়াস কোনো অপকর্ম তাদের নেই। সুতরাং ওসি সাহেব, বিষয়টি আমার মাথায় নিয়েছি আমি। আমাদের অনেক মিডিয়াও ইচ্ছাকৃতভাবে কথাগুলো অন্যায়ভাবে প্রচারণা করে।
এর আগে ২৬ মার্চ সীতাকুণ্ড উপজেলা কৃষক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নাছির উদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। উপজেলার বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নে ১ নম্বর ওয়ার্ডের হাতিলোটা ছরারকূল এলাকায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় ভুক্তভোগী নাছির উদ্দিন হাতিলোটা গ্রামে নিজ বাড়িতে ইফতার শেষে নিজের ফার্মের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় আগে থেকে ওতপেতে থাকা সন্ত্রাসী – দুর্বৃত্তরা তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপায়। পরে স্থানীয়রা তার মরদেহ উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার৷ অভিযোগে পুলিশ মো. বশির (৩৫), মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন (৩২), আরমান শাকিল (৩৫) ও মো. রাসেল ওরফে মুরগি রাসেলকে (৩৮) গ্রেপ্তার করে। আসামিদের সবাই বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং লায়ন আলহাজ্ব আসলাম চৌধুরীর অনুসারী।
বক্তব্যের বিষয়ে জানতে বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পাশাপাশি খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তাতে কোন সাড়া মেলেনি।
সীতাকুণ্ড থানার ওসি মো. মুজিবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, কী বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছেন সেটি আপনারাও জানেন। আমি বিস্তারিত বলতে চাই না। তবে এরকম বক্তব্য শুনতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আমরা ধৈর্য ও সহ্য করতে পারি।
এ ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি কিংবা আইনগত কোনো ব্যবস্থা নিয়েছেন কি না, জানতে চাইলে ওসি জানান, কাজ করতে গিয়ে প্রায় সময় এ ধরনের হুমকি পাই। সবসময় তো আর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। তবে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন কি না জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করেন নি।