বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক: দেশের সব কওমি মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে হেফাজতে ইসলামের সহিংস কর্মকাণ্ডের পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।
আজ রোববার কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী বোর্ড আল-হাইআতুল উলয়া লিল জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশের স্থায়ী কমিটির এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিকেলে বোর্ডের অফিস সম্পাদক মু. অছিউর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে জানানো হয়, রোববার রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলূম মাদানিয়া মাদরাসায় স্থায়ী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন আল-হাইআতুল উলয়া লিল জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আল্লামা মাহমুদুল হাসান।
সভায় দেশের কওমি অঙ্গনে বিরাজমান অস্থিরতা থেকে ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষাব্যবস্থার সুরক্ষা এবং উলামায়ে কেরামের শান ও মান বজায় রেখে স্বাভাবিক অবস্থায় নানামুখী ‘দিনি’ কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরির উদ্যোগ নিতে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সভায় কওমি মাদরাসার ছাত্র ও শিক্ষকরা প্রচলিত সর্বপ্রকার রাজনীতি থেকে মুক্ত থাকবে মর্মে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
এছাড়া সভায় ঠিক হয়- কওমি মাদরাসা সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ নেবে আল-হাইআতুল উলয়া। আল-হাইআতুল উলয়ার অধীন এক বা একাধিক বোর্ড কিংবা কোনো সংগঠন বা ব্যক্তি আল-হাইআতুল উলয়ার সিদ্ধান্ত ব্যতীত পৃথকভাবে কওমি মাদরাসা বিষয়ক কোনো সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ বা উদ্যোগ নিতে পারবে না।
আল-হাইআতুল উলয়ার সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নের জন্য এবং কওমি মাদরাসা সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়ে সিদ্ধান্তগ্রহণ ও তত্ত্বাবধানের জন্য আল-হাইআতুল উলয়ার অধীন ৫ বোর্ডের ৫ জন, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া থেকে ৫ জন এবং চেয়ারম্যান কর্তৃক মনোনীত ৫ জন সমন্বয়ে সর্বমোট ১৫ জনের একটি ‘বাস্তবায়ন সাব-কমিটি’ গঠিত হবে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কওমি মাদরাসার যে নিরীহ ছাত্র, শিক্ষক, আলেম-ওলামা, ধর্মপ্রাণ মুসলমান এবং মসজিদের ইমাম ও মুসল্লিদের গ্রেফতার করা হয়েছে, রমজানের এই রহমতের মাস বিবেচনায় সরকারের নিকট তাদের মুক্তির আহ্বান জানানো এবং নিরীহ আলেম-ওলামা, মাদরাসার ছাত্র ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের হয়রানি না করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে।
পবিত্র রমজান কুরআন তেলাওয়াতের মাস। কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে বালা-মুসিবত ও মহামারি দূর হয়। তাই রমজানের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে হিফজ ও মক্তব বিভাগ খুলে দেওয়ার জন্য এবং রমজানের পর কওমি মাদরাসার শিক্ষাকার্যক্রম চালু করার জন্য সরকারের কাছে বিশেষভাবে আবেদন করা হয়েছে।
আল-হাইআতুল উলয়ার সভার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে সরকারকে অবহিত করার জন্য ৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সদস্যরা হলেন, মাওলানা মুফতি রুহুল আমীন, মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ আলী ও মাওলানা মুফতি জসীমুদ্দীন।
সভায় উপস্থিত ছিলেন— আল-হাইআতুল উলয়ার অধীন বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সহসভাপতি মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, মাওলানা নূরুল ইসলাম জিহাদী, মাওলানা সাজিদুর রহমান, মাওলানা আব্দুর রহমান হাফেজ্জী, মাওলানা আতাউল্লাহ ইবনে হাফেজ্জী, মাওলানা ছফিউল্লাহ, মাওলানা মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা মুছলেহুদ্দীন রাজু, মাওলানা উবায়দুর রহমান মাহবুব, মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, সহকারী মহাসচিব মাওলানা মুফতি নূরুল আমীন ও মাওলানা মুফতি জসীমুদ্দীন প্রমুখ।