বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক : দেশে ব্যবসা করা বীমা কোম্পানিগুলোর পর্ষদে প্রতিনিধি বা অবজারভার রাখতে চায় বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। একই সঙ্গে সরকারি মালিকানাধীন সাধারণ বীমা করপোরেশন ও জীবন বীমা করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিয়োগের ক্ষমতা নিতে চায় বীমা খাতের এ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বীমা করপোরেশন আইন ২০১৯-এর ৯ ধারায় পর্ষদে পরিচালক নিয়োগের বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করা আছে। তবে তদারকি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আইডিআরএ’র কোনো প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত নেই। একই সঙ্গে বেসরকারি বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা পর্ষদেও আইডিআরএ’র কোনো প্রতিনিধি নেই।
এমনিতেই আইডিআরএ জনবল সঙ্কটে রয়েছে। তার ওপর আইডিআরএ সম্প্রতি নানা বিতর্কে জড়িয়েছে। এমনকি আইডিআরএ’র চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, যা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত করছে। এমন পরিস্থিতিতে সব কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে আইডিআরএ’র প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করতে চাইলে তা নতুন বিতর্কের জন্ম দেবে।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত আইডিআরএ’র পর্ষদ সভায় এ বিষয়গুলো আলোচনায় উঠে আসে। সভার আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বেসরকারি বীমা কোম্পানিগুলোর পরিচালনা পর্ষদে আইডিআরএ’র প্রতিনিধি বা অবজারভার নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ বিষয়ে শিগগির সার্কুলার জারির সিদ্ধান্তও নেওয়া হয় ওই সভায়।
অন্যদিকে দুই বীমা করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের ক্ষমতা পাওয়ার জন্য বীমা করপোরেশন আইন ২০১৯ সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় আইডিআরএ’র ওই পর্ষদ সভায়। পাশাপাশি এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে চিঠি দেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এদিকে কোম্পানির পর্ষদে আইডিআরএ’র সদস্য রাখার সিদ্ধান্ত যুক্তিসঙ্গত মনে করছেন না বীমা খাত সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, যদি কোনো কোম্পানি সমস্যায় থাকে, সেই কোম্পানিতে আইডিআরএ অবজারভার নিয়োগ দিতে পারে। কিন্তু সব কোম্পানির পর্ষদে আইডিআরএ’র প্রতিনিধি থাকবে এটা যুক্তিসঙ্গত নয় এবং আইনসঙ্গতও নয়। তাছাড়া দেশের কোনো খাতেই এমন নজির নেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সভায় আইডিআরএ’র সদস্য (আইন) মো. দলিল উদ্দিন দেশে ব্যবসা করা বীমা কোম্পানিগুলোর পর্ষদে কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি বা অবজারভার অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন, যদি কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি বা অবজারভার বীমা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সভায় অন্তর্ভুক্ত করা যায় তবে সরকারি ও বেসরকারি বীমা করপোরেশন/কোম্পানিগুলোর চলমান কার্যক্রম তদারকি করা, বীমা প্রতিষ্ঠানকে সচল রাখা, অনিয়ম প্রতিহত করা, বীমা গ্রাহকদের স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রাখাসহ সার্বিক তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা হবে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান এম মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকারি ও বেসরকারি বীমা করপোরেশন বা কোম্পানিগুলোর চলমান কর্যক্রম ভালোভাবে পর্যালোচনা ও এসব প্রতিষ্ঠানের চলমান কার্যক্রমে গতিশীলতা আনয়ন এবং প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে কর্তৃপক্ষ থেকে প্রতিনিধি বা অবজারভার নিয়োগ একটি সময়োপযোগী প্রস্তাব।
তিনি বলেন, সরকারি দুই করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগে বীমা আইনের বিধান থাকলেও সে মোতাবেক নিয়োগ অনুমোদন কর্তৃপক্ষ থেকে দেওয়া হয় না। এ কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য সাধারণ বীমা ও জীবন বীমা করপোরেশনের পরিচালনা পর্ষদে কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি নিয়োগ, সরকারি দুই করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগে বীমা আইনের বিধান মোতাবেক কর্তৃপক্ষের নিয়োগ অনুমোদন নেওয়ার বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে চিঠি দেওয়া ও বীমা করপোরেশন আইন ২০১৯-এর প্রয়োজনীয় সংশোধনের উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়া বেসরকারি বীমা কোম্পানিগুলোর পরিচালনা পর্ষদে কর্তৃপক্ষের অবজারভার নিয়োগে শিগগির সার্কুলার জারির উদ্যোগ নিতে হবে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে সভায় সিদ্ধান্ত হয়, সাধারণ বীমা ও জীবন বীমা করপোরেশনের পরিচালনা পর্ষদে কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগে বীমা আইনের বিধান মোতাবেক কর্তৃপক্ষ থেকে নিয়োগ অনুমোদন নেওয়ার জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে চিঠি দেওয়া হবে। একই সঙ্গে বীমা করপোরেশন আইন ২০১৯ এর প্রয়োজনীয় সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। পাশাপাশি বেসরকারি বীমা কোম্পানিগুলার পরিচালনা পর্ষদে কর্তৃপক্ষের অবজারভার নিয়োগে শিগগির সার্কুলার জারি করা হবে।
আইডিআরএ’র পর্ষদ সভার সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে একাধিক বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এমনিতেই আইডিআরএ জনবল সঙ্কটে রয়েছে। তার ওপর আইডিআরএ সম্প্রতি নানা বিতর্কে জড়িয়েছে। এমনকি আইডিআরএ’র চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, যা দুদক তদন্ত করছে। এমন পরিস্থিতিতে সব কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে আইডিআরএ’র প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করতে চাইলে তা নতুন বিতর্কের জন্ম দেবে।
পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা তারিক উর রহমান বলেন, যদি কোনো কোম্পানি সমস্যার মধ্যে থাকে তাহলে আইডিআরএ হস্তক্ষেপ করতে পারে। সমস্যার মধ্যে না পড়লে আইডিআরএ হস্তক্ষেপ করতে পারে না। আমার ধারণা, আইনও এটা পারমিট করে না।
এ বিষয়ে আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান এম মোশাররফ হোসেনের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। আইডিআরএ’র সদস্য মইনুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে এখনো কোনো সার্কুলার জারি করা হয়নি। যেহেতু এখনো সার্কুলার জারি করা হয়নি, সুতরাং এ বিষয়ে আলোচনা করতে পারি না।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিব ড. নাহিদ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বীমা করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের বিষয়ে আইডিআরএ কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটা আমরা এখনো জানি না। ওনাদের (আইডিআরএ) সিদ্ধান্ত আমাদের কাছে পাঠালে তারপর এ বিষয়ে আমরা বলতে পারবো।
বীমা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে আইডিআরএ’র প্রতিনিধি রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে নাহিদ হোসেন বলেন, এ বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। তবে আইনের সঙ্গে যদি সাংঘর্ষিক হয়, তাহলে এমনিতেই বাতিল হয়ে যাবে।