বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক: ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ইন্টার্ন চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় বিচারের দাবিতে কলকাতায় আন্দোলনরত নারীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ‘মেয়েরা রাত দখল করো’—কর্মসূচিতে নারীরা ঢাকার রাজপথে নেমে এসেছেন।
শুক্রবার রাত ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে মোমবাতি প্রজ্বলন করে এরপর তারা একটি সমাবেশ করেছেন। এতে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা শারমিন মুরশিদ। এ সময় নারীদের পক্ষ থেকে ১৩ দফা দাবি সম্বলিত একটি অবস্থানপত্র পাঠ করা হয়।
শুরুতে তারা কলকাতার ইন্টার্ন চিকিৎসক এবং বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে ধর্ষণের শিকার নারীদের পাশাপাশি সম্প্রতি বাংলাদেশে ছাত্র নাগরিক অভ্যুত্থানে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। সমাবেশ শেষে একটি মিছিল নিয়ে উপাচার্যের বাসভবন চত্বর থেকে পুনরায় রাজু ভাস্কর্যে আসেন।
শারমিন মুরশিদ উপস্থিত নারীদের উদ্দেশে বলেন, তোমরা যদি রাস্তায় থাকো, তাহলে আমিও রাস্তায়। তোমরা যদি অনিরাপদ হও, তাহলে নিরাপত্তাহীনতা কীভাবে দূর করব, তা নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। যে সরকার হয়েছে, তা তোমাদের সরকার। আমি তোমাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে চাই।
নারীদের নিরাপত্তায় রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে কীভাবে কাজে লাগানো যায় সে বিষয়ে নারীদের কাছে একটি প্রস্তাব চেয়েছেন তিনি।
শিক্ষার্থী রূপসী চাকমা বলেন, বাংলাদেশে বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি রয়েছে, তার কারণে আমরা কোনো বিচার পাইনি। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিলাইছড়িতে নিজ বাড়িতে দুই মারমা তরুণীকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। সে বিচার চাইতে গিয়েও আমরা পাইনি। ২৮ বছর পেরিয়েও কল্পনা চাকমার অপহরণের বিচার আমরা পাইনি।
সমাবেশে একটি অবস্থানপত্র পাঠ করেন শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান। অবস্থানপত্রে তিনি ১৩ দফা দাবি তুলে ধরেন।
দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- তনু-মুনিয়াসহ প্রতিটি ধর্ষণ ও হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার করা; নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা ১৮০ দিনের মধ্যেই নিষ্পত্তি করা; ধর্ম, গোত্র, বর্ণের উর্ধ্বে গিয়ে প্রতিটি লিঙ্গের মানুষের সম্পত্তিতে সমানাধিকার দেওয়া; সন্তানের অভিভাবকত্ব আইন পরিবর্তন করে নারীকে সন্তানের অভিভাবকত্ব দেওয়া।
এছাড়া আরও রয়েছে- ২০০৯ সালের হাইকোর্ট নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে যৌন নিপীড়ন বিরোধী কমিটি এবং সেল তৈরি এবং কার্যকর করা; নারী এবং লিঙ্গ বৈচিত্র্যের মানুষের জন্য সমান কর্মসংস্থানের সুযোগ এবং নিরাপদ কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা; প্রতিটি ভিন্ন ভিন্ন লৈঙ্গিক পরিচয়ের মানুষের রাষ্ট্রীয় পরিচয়পত্রে তার লৈঙ্গিক পরিচয়ের স্বীকৃতি দেওয়া; আন্তর্জাতিক চুক্তি মেনে রাষ্ট্রীয় সকল পর্যায়ে নারীর ৩৩ শতাংশ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি নুজিয়া হাসিন রাশা, নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আনিয়া ফাহমিন, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক তানিয়া মাহমুদা তিন্নি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।