বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক: নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে কলেজছাত্রী শাহানাজ আকতার প্রিয়তার (২১) ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। মো. রুবেল (২৮) নামের এক রিকশাচালক তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করেন। এ রুবেল গত বছরের অক্টোবরে পালক মাকে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টার মামলায় জামিনে বেরিয়ে আসেন।
শুক্রবার (৪ মার্চ) সন্ধ্যায় নোয়াখালীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নুরজাহান বেগমের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আসামি রুবেল। কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাজ্জাদ রোমন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে দুপুর ১২টায় এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম ও অপারেশন) দীপক জ্যোতি খীসা বলেন, কলেজছাত্রী প্রিয়তা হত্যাকাণ্ডের পর ঘটনাটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হয়েছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে প্রিয়তার সর্বশেষ অবস্থান জেনে প্রযুক্তির মাধ্যমে রুবেলকে শনাক্ত করি। শুক্রবার ভোরে সুবর্ণচরে চররশিদ এলাকায় শ্বশুরবাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। রুবেল কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের জমিন মাঝির বাড়ির মকবুল আহাম্মদের পালক ছেলে।
দীপক জ্যোতি খীসা আরও বলেন, গ্রেফতার রুবেলের দেওয়া তথ্যে বসুরহাট পৌরসভা ৮নং ওয়ার্ডের জামাইটেক এলাকায় মসজিদের পাশে থেকে ফেলে দেওয়া প্রিয়তার দুটি সিম ও তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন এবং ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারের পর রুবেল প্রিয়তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করে একাই হত্যা করেছে বলে স্বীকার করেছেন। রুবেলের গলায় প্রিয়তার নখের আঁচড়ও রয়েছে বলে তিনি পুলিশকে দেখিয়েছেন। বিকেলে তাকে নোয়াখালী আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, কলেজছাত্রী প্রিয়তা নানার বাড়িতে থেকে বসুরহাট সরকারি মুজিব কলেজে পড়াশোনার পাশাপাশি বাজারের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে সেবিকার কাজ করতেন। আসাযাওয়ার পথে তার ওপর দৃষ্টি পড়ে রিকশাচালক রুবেলের। ঘটনার রাতে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে নানার বাড়ি যেতে রুবেলের রিকশায় ওঠেন প্রিয়তা। পথে অন্ধকারে ওড়না পেঁচিয়ে মুখবেঁধে ধানক্ষেতে নিয়ে ধর্ষণের পর তাকে হত্যা করেন রুবেল।
তিনি আরও বলেন, গ্রেফতার রুবেলের বিরুদ্ধে গত ১৮ সেপ্টেম্বর শনিবার রাতে তার পালক মা পারুল আক্তারকে নেশার টাকার জন্য কুপিয়ে হত্যাচেষ্টার মামলা রয়েছে। এ ঘটনায় রুবেলসহ তার আরও দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। পরে জামিনে এসে সে এ ঘটনায় ঘটায়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মোরতাহিন বিল্লাহ, গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম, কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাজ্জাদ রোমন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোম্পানীগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সৈয়দ মো. মিজানুর রহমানসহ কর্মকর্তারা।
গত সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বসুরহাট পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের ইয়াছিন মোল্লার বাড়ির পেছনের ধানক্ষেত থেকে শাহানাজ আকতার প্রিয়তার রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি কবিরহাট উপজেলার বাটইয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের আশরাফপুর গ্রামের ফেঞ্জু মিয়ার নতুন বাড়ির নুরনবীর মেয়ে।
নিহতের বাবা মো. নুরনবী এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমার মেয়ের প্রকৃত হত্যাকারীকে গ্রেফতার করায় পুলিশের সব কর্মকর্তাকে ধন্যবাদ জানাই। আর যেন কোনো বাবাকে এভাবে তার কলেজপড়ুয়া মেয়েকে হারাতে না হয়। এজন্য হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।