বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক: নামাজ আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে সাহায্য, বরকত ও রিজিকপ্রাপ্তির মাধ্যম। একজন মুমিনের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজই গুরুত্ব ও ফজিলতপূর্ণ। ফজরের নামাজের রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব।
প্রথমত, ফজরের সময়টিরই রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘শপথ ফজরের।’ সুরা ফজর : ১। ফজরের সময়ের গুরুত্ব প্রমাণে এতটুকুই যথেষ্ট যে, আল্লাহতায়ালা ফজরের সময়ের শপথ করেছেন। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতের জন্য ভোরের বরকতের দোয়া করেছেন। সাখার আল-গামেদি (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘হে আল্লাহ, আমার উম্মতের জন্য দিনের শুরুকে বরকতময় করুন!’ আবু দাউদ। ফজরের নামাজে শরিক না হওয়া মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুনাফেকদের ওপর ফজর ও এশার নামাজ অপেক্ষা অধিক ভারী নামাজ আর নেই। যদি তারা এর ফজিলত ও গুরুত্ব জানত, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে বা পাছার ভরে অবশ্যই (মসজিদে) উপস্থিত হতো। সহিহ বুখারি। যারা অলসতাকে প্রশ্রয় না দিয়ে ফজরের নামাজ সময়মতো জামাতে আদায় করেন তাদের জন্য আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে রয়েছে অনেক পুরস্কার।
সময়মতো ও জামাতে ফজরের নামাজ আদায়ের কয়েকটি ফজিলত নিচে তুলে ধরা হলো :
ফজরের নামাজ আদায়কারী আল্লাহর জিম্মায় : যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ সময়মতো জামাতে আদায় করবে, সারা দিন সে আল্লাহতায়ালার জিম্মায় থাকবে। আল্লাহ তাঁর দয়ায় তাকে নিরাপত্তা দেবেন। জুনদুব ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ পড়ল, সে আল্লাহর জিম্মায় থাকল। …’ মুসলিম।
সারা রাত নামাজের সওয়াব : ইশা এবং ফজরের নামাজ জামাতে আদায়কারী রাতে ঘুমিয়েও সারা রাত নফল নামাজ পড়ার সওয়াব লাভ করবেন। উসমান ইবনে আফফান (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে এশার নামাজ আদায় করল, সে যেন অর্ধেক রাত জেগে নামাজ পড়ল। আর যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে পড়ল, সে যেন পুরো রাত জেগে নামাজ পড়ল। সহিহ মুসলিম।
আল্লাহতায়ালার দরবারে তার নাম আলোচিত হয় : ফজরের নামাজ জামাতে আদায়কারীর নাম আল্লাহতায়ালার আরশে আলোচিত হয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কাছে পালাক্রমে দিনে ও রাতে ফেরেশতারা আসে। যারা রাতের কর্তব্যে ছিল তারা ওপরে উঠে যায়। আল্লাহ তো সবচেয়ে বেশি জানেন, তবুও ফেরেশতাদের প্রশ্ন করেন, আমার বান্দাদের কী অবস্থায় রেখে এলে? ফেরেশতারা বলে, আমরা তাদের নামাজরত রেখে এসেছি। যখন গিয়েছিলাম তখনো তারা নামাজরত ছিল। সহিহ বুখারি। সরাসরি
আল্লাহকে দেখার সৌভাগ্য : সূর্যোদয়ের আগের (ফজর) ও সূর্যাস্তের আগের (আসর) নামাজ গুরুত্বের সঙ্গে আদায়কারী আল্লাহতায়ালাকে সরাসরি দেখার সৌভাগ্য লাভ করবেন। জারির ইবনে আবদুল্লাহ আল বাজলি (রা.) বলেন, এক রাতে আমরা, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ছিলাম। হঠাৎ তিনি পূর্ণিমার রাতের চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন, শোন! নিশ্চয়ই তোমরা তোমাদের রবকে তেমনি স্পষ্ট দেখতে পাবে, যেমন ওই চাঁদকে দেখতে পাচ্ছ। এতে তোমরা কোনো ভিড়ের সম্মুখীন হবে না। কাজেই তোমরা যদি সূর্য ওঠার আগের নামাজ ও সূর্য ডোবার আগের নামাজ আদায়ে সমর্থ হও, তাহলে তাই কর। তারপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন, ‘সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে আপনি আপনার প্রতিপালকের প্রশংসার তাসবিহ পাঠ করুন। সহিহ বুখারি।
লেখক : খতিব, বাইতুশ শফিক মসজিদ ও পরিচালক, বাইতুল হিকমাহ একাডেমি, গাজীপুর।