জালালুর রহমান, মৌলভীবাজার :: আতঙ্কের আরেক নাম আখাউড়ার আজমপুর রেলওয়ে ষ্টেশন। সিলেটগামী প্রতিটি আন্ত:নগর ট্রেনে কমলাপুর ও বিমান বন্দর ষ্টেশন থেকে শ’শ’ বিনা টিকেটের যাত্রীরা ওঠে টিকেটধারী যাত্রীদেরকে নানা সমস্যায় ফেলছেন। এসি বগিতে সংঘবদ্ধ এসব যাত্রীরা ওঠে বৈধ যাত্রীদের সিটের হাতলে বসে, সিটের পাশে দাড়িয়ে মারাত্মক সমস্যায় ফেলছেন।
এনিয়ে প্রতিবাদ করলে বিনা টিকেটের যাত্রীরা সংঘবদ্ধ হয়ে টিকেটধারী যাত্রীদের অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ এমনকি ট্রেন থেকে নামিয়ে হত্যার প্রকাশ্য হুমকি দেন। ট্রেনে দায়িত্বরত এটেনডেন্ট, কন্ডাক্টার গার্ড ও নিরাপত্তা বাহিনী অসহায় বৈধ যাত্রীদের নিরাপত্তা না দিয়ে বিভিন্ন অজুহাতে বিনা টিকেটের যাত্রীদের কাছ থেকে অবৈধ সুযোগ (ঘুষ) গ্রহন করে ট্রেনে ভ্রমনের সুযোগ করে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। ফলে বৈধ যাত্রীরা ট্রেনে ভ্রমনে নিরাপত্তার অভাব বোধ করে ট্রেনে ভ্রমনে বিমুখ হয়ে পড়েছেন।
এমনি একটি ঘটনা ঘটে গত ৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে সিলেট গামী কালনী ট্রেনে। ঐ দিন কালনী আন্ত:নগর ট্রেনে ঢাকা ও বিমান বন্দর ষ্টেশন থেকে ‘গ’ বগি স্নিগ্ধাতে উঠেন শতাধিক বিনা টিকেটের যাত্রী। সেই ট্রেনে আজমপুরের কিছু সংঘবদ্ধ যাত্রী নামধারী সন্ত্রাসী ট্রেনের বৈধযাত্রীদেরকে মারধর করতে ট্রেন থেকে নামিয়ে হত্যার হুমকি দেয় ও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে।
‘গ’ বগি স্নিগ্ধা এর ২, ৬,ও ৭নং সিটের যাত্রীরা অভিযোগ করেন, ওই সংঘবদ্ধ অবৈধযাত্রীরা ট্রেনে টিকেটধারী যাত্রীদের সিটের হাতলে ও সামনে এমনভাবে দাড়িয়ে থাকে নড়াচড়া ও শ্বাস ফেলা অসম্ভব হয়ে পরে। টিকেট ধারী কিছু যাত্রী প্রতিবাদ করায় ও মোবাইলে ভিডিও ধারণ করলে তারা সংঘবদ্ধ আক্রমণ চালায়। এমন কি আজমপুর নামিয়ে কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলার প্রকাশ্য হুমকি দেয়। সেসময় ট্রেনে ‘খ’ ও ‘গ’ বগির এটেন্ডেন্ট, কন্ডাক্টার গার্ড ও নিরাপত্তা বাহিনীকে বলেও কোন সহায়তা পাওয়া যায়নি। ট্রেনের দায়িত্বরতরা বিনা টিকেটের যাত্রীদের কাছ থেকে ঘুষ নিতে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে বলে যাত্রীরা বলেন। এসি বগিতে এভাবে শ’ শ’ অবৈধ যাত্রী ওঠে ও দুই দিকের দরজা খোলা রাখায় সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রীদেরকে। টিটি ও একাউন্ট বেইসের টিটি ওঠে বৈধ যাত্রীদের কোন অভিযোগ না শুনে অবৈধ যাত্রীদের কাছ থেকে ১০০- ২০০ টাকা ঘুষ নিয়ে চলে যান। আজমপুর ছাড়ার পর আতঙ্কিত সিলেটের যাত্রীদেরকে কন্ডাক্টার গার্ড ও এটেনডেন্ট এসে বলেন, তারা আজমপুরের যাত্রীদের কাছে অসহায়। এই সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে তাদের করার কিছু নেই । রেলওয়ের কয়েকজন কর্মকর্তাকে জানিয়েও যাত্রীরা কোন আইনানুগ সহায়তা পাননি। প্রাণের ভয়ে তাদেরকে অবৈধ যাত্রীদের হাতে নাজেহাল হতে হয়েছে। এছাড়া গ- বগিতে এসিতে বারবার বিদ্যুৎ চলে গেলেও এটেনডেন্ট এবং ইলেকটিশিয়ান কোন পদক্ষেপ নেয়নি। এ বিষয়ে সিলেটের এসএসই (বিদ্যুৎ)কে ফোন করলে তিনি বলেন এসি’র কম্প্রেসার পাইপে ফাটা থাকায় গ্যাস বের হয়ে যাওয়ায় শীতাতপ ব্যবস্থা কাজ করছেনা। নিয়মিত যাত্রীরা জানান এ অবস্থা প্রায় দু’মাস ধরে চললেও সমস্যার সমাধান করছে না রেল কতৃর্পক্ষ। ৫ সেপ্টেম্বর কালনী ট্রেনের ঘটনায় বিক্ষোব্ধ যাত্রীরা জানান, রেল কতৃর্পক্ষ যদি গুটি কয়েক সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করতে না পারেন তবে কি টিকেটধারী যাত্রীরা ট্রেনে ভ্রমণ ছেড়ে দিবে। রেলওয়ের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কি বিষয়টি আমলে নিয়ে দ্রুত সিলেটগামী যাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে ও অবৈধ সন্ত্রাসী যাত্রীদের প্রতিহত করতে ব্যবস্থা নিবেন কি। আর ট্রেনের কন্ডাক্টার গার্ড ও এটেনডেন্ট, টিটিই যারা অবৈধ যাত্রী ভ্রমণে সহায়তা করে রেলওয়ে সুনাম বিনষ্ট করছেন তাদেরকে চিহ্নিত করে দ্রুত বিভাগীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।