গৌরাঙ্গ বিশ্বাস,বিশেষ প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার একটি হাজারো বছরের ঐতিহ্যবাহী জলাভূমির নাম চারান বিল। একসময় এই বিল ছিল স্থানীয় জীববৈচিত্র্যের অন্যতম আশ্রয়স্থল। বর্ষা মৌসুমে বিস্তীর্ণ জলরাশির মাঝে মাছ ধরার দৃশ্য, নৌকাবাইচের প্রতিযোগিতা, পাখির কলকাকলি—সব মিলিয়ে ছিল এক প্রাণবন্ত পরিবেশ। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে আজ এই বিল হারিয়ে যেতে বসেছে।
জবরদখলে বিলুপ্তির পথে চারান বিল
চারান বিলের অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে। এলাকার কিছু অসাধু ব্যক্তি অবৈধভাবে বিলে দখল করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করছে। দখলদারদের দৌরাত্ম্যের কারণে বিলে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, ফলে মাছের অভয়ারণ্য ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। অথচ একসময় এই বিলের আশপাশের মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতো মাছ শিকার ও কৃষিকাজের মাধ্যমে।
স্থানীয়দের মধ্য সরওয়ার খান ইউসুবজাই( অবঃ) অভিযোগ করেন, চারান বিল দখল হয়ে গেলেও দেখার কেউ নেই। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ফলে দিন দিন সংকুচিত হয়ে আসছে এই ঐতিহ্যবাহী জলাভূমি।
সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন বলে মনে করেন স্থানীয় কোকডহরা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শফিউর রহমান খান শাফি। তিনি আরো বলেন, চারান বিল রক্ষায় সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন। বিলে খনন কাজ পরিচালনা করে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক করা গেলে এটি আবার প্রাণ ফিরে পেতে পারে। পাশাপাশি, বিলের আশপাশের পরিবেশকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলারও সম্ভাবনা রয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা ছোবাহান তালুকদার বলেন, যদি চারান বিলকে একটি বিনোদনমূলক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়, তবে এটি হয়ে উঠতে পারে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্থান। নৌকা ভ্রমণ, মাছ ধরার আয়োজন, পাখি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র, রিসোর্ট কিংবা পিকনিক স্পট তৈরি করা গেলে এটি স্থানীয় অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
ঐতিহ্য রক্ষায় সবার এগিয়ে আসা জরুরি
স্থানীয় বিএনপির নেতা সোহেল বলেন, চারান বিল শুধু একটি জলাশয় নয়, এটি কালিহাতীর একটি সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন। তাই এটি রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও পরিবেশবিদদের এগিয়ে এসে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
চারান বিল হারিয়ে গেলে, হারিয়ে যাবে শত বছরের ঐতিহ্য। তাই এখনই সময় যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণের, যাতে এই বিল আবার প্রাণ ফিরে পায় এবং হয়ে ওঠে মানুষের বিনোদন ও জীবিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।