বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক: গত বছর আউশ মৌসুমে কম খরচের নতুন জাতের বিনা ধান- ১৯ ও ২১ ধান চাষ করে লাভবান হয়েছেন কুমিল্লার কৃষকরা। এই ধান চাষে সময়ও কম ব্যয় হয়। দীর্ঘ খরায়ও এটি টিকে থাকতে পারে। ফলনও হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) এই ধান চাষে সাফল্য পাচ্ছেন কৃষকরা। গত বছর কুমিল্লার ১০০০ বিঘা জমিতে এই দুইটি জাতের ধানের চাষ করা হয়। এবার ৫০০০ বিঘা জমিতে এই ধান চাষের সম্ভাবনা রয়েছে।
বিনা ধান- ১৯ ও ২১এর চাষাবাদ কলাকৌশল ও বীজ সংরক্ষণ বিষয়ক কৃষক প্রশিক্ষণে এই তথ্য জানা যায়। সোমবার বিনা কুমিল্লা উপকেন্দ্রের মিলনায়তনে কৃষকদের এই ধান নিয়ে আগ্রহ চোখে পড়ে। অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথি ছিলেন বিনার মহাপরিচালক ড.মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিনার পরিচালক(প্রশাসন ও সাপোর্ট) ড. আবুল কালাম আজাদ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ-পরিচালক মো.মিজানুর রহমান, বিএডিসি কুমিল্লার উপ-পরিচালক(বীজ বিপনন) মো. নিগার হায়দার খান। সভাপতিত্ব করেন বিনা কুমিল্লা উপকেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড.মোহাম্মদ আশিকুর রহমান। বক্তব্য রাখেন বিনা কুমিল্লা উপকেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ) ড. ফাহমিনা ইয়াসমিন, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মদ জুয়েল সরকার।
বুড়িচং উপজেলার দয়ারামপুর গ্রামের কৃষক শামছুল হক ও নজরুল ইসলাম,সদর উপজেলার রামপুর গ্রামের রিপন মিয়া বলেন, প্রথমবারের মতো বিনা ধান ১৯ ও ২১ চাষ করেছেন। প্রথমে ফলন নিয়ে টেনশনে ছিলেন। প্রথমবারেই ভালো ফলন হয়েছে। এবার তারা আরও বেশি জমিতে এই ধান চাষ করবেন।
ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ) ড. ফাহমিনা ইয়াসমিন বলেন,কুমিল্লার মানুষ সৌখিন। তারা চিকন চাউল খেতে পছন্দ করেন। বিনা ধান ১৯ ও ২১ এর চাউলও চিকন। এই কারণে এই ধান চাষে কৃষক ভালো লাভ পাবেন। এছাড়া এই ধান পানি ছাড়া ২০ দিন টিকে থাকতে পারে, ২০ দিন চুপচাপ থাকবে। পানি পেলে আবার বেড়ে উঠবে।
ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড.মোহাম্মদ আশিকুর রহমান বলেন,আউশ মৌসুমে অনেক জমি খালি পড়ে থাকে। কারণ ফলন কম পাওয়ায় অনেকে এই মৌসুমে ধান চাষ করতে চান না।
বিনা ধান- ১৯ ও ২১ চাষে প্রতি হেক্টরে কৃষক সাড়ে ৫ টন ধান পেয়েছেন। এছাড়া ধানের জীবনকাল কম হওয়ায় এক জমিতে চার ফসলও করা সম্ভব হচ্ছে। এদিকে এই ধান চাষে সেচসহ অন্যান্য খরচ নেই বললেই চলে।
বিনার পরিচালক (প্রশাসন ও সাপোর্ট) ড. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আফ্রিকার নেরিকা-১০ ধানের জাত থেকে এই বিনা ধান- ১৯ ও ২১ উদ্ভাবন করা হয়। নেরিকার ফলন কম হতো। তাই কৃষকের আগ্রহ কম ছিলো। গামা রশ্মি প্রয়োগ করে ফলন বাড়ানো হয়। গাছের কম বেশি উচ্চতা সমান করা হয়। মোটা ধানের সাইজ চিকন করা হয়। তাই এই ধান চাষ নিয়ে কৃষকের আগ্রহ বেড়েছে। পাহাড়ের জুমেও এই ধানের চাষ হচ্ছে। আগে তারা হেক্টরে ২ টন ধান পেতেন। এখন ৪ টন পাচ্ছেন। এতে দেশের খাদ্য উৎপাদন বাড়ছে।