বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক:হেফাজতের ইস্যুতে কোনো প্রকৃত আলেম ও বুজুর্গ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে দাবি করেছেন ধর্মপ্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান। তিনি বলেন, ‘ফৌজদারি অপরাধে আলেম নামধারী ক্ষমতালিপ্সুদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তারা রাষ্ট্র ও সমাজবিরোধী ষড়যন্ত্রমূলক কাজে জড়িত।’
মঙ্গলবার (১৫ জুন) জাতীয় সংসদে হজ ও ওমরা ব্যবস্থাপনা বিলের সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর সংসদ সদস্যদের দেওয়া বক্তব্যের জবাবে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এর আগে বিলটি যাচাই কমিটিতে পাঠানো ও সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর বক্তব্যকালে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ ও রুমিন ফারহানা সাম্প্রতিক সময়ে আলেম ওলামাদের গ্রেফতারের প্রসঙ্গ টেনে এর কঠোর সমালোচনা করেন।
বঙ্গবন্ধু ও তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ দেশের ইসলামের জন্য যা করছেন তা সবাই জানেন উল্লেখ করে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যারা ধর্মের নামে রাষ্ট্র ও সমাজবিরোধী ষড়যন্ত্রমূলক কাজে জড়িত তারাই আইনের আওতায় এসেছে। যদি অন্যায়ভাবে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়ে থাকে প্রধানমন্ত্রী তাৎক্ষণিকভাবে জানিয়ে দিয়েছেন তাদের ছেড়ে দেওয়া হোক। ইতোমধ্যে বহু আলেমকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যারা দোষী তাদের বিরুদ্ধেই এই আইনগেত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আইন সবার জন্য সমানভাবে চলছে। শেখ হাসিনার সরকার সব বুজুর্গ আলেমসহ সর্বস্তরের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেছে বলেই দেশ অনেকটা স্বচ্ছতায় এসেছে, নিয়মের মধ্যে এসেছে। নিয়মতান্ত্রিকভাবে চলার জন্য যেটা প্রয়োজন প্রধানমন্ত্রী তা গ্রহণ করেছেন।’
বিএনপির হারুনুর রশিদ বলেন, ‘বর্তমান বাংলাদেশে আমরা কী দেখছি। ধর্মীয় স্কলার, যাদের আমরা আলেম বলি, তারা সাংঘাতিক নিপীড়নের মধ্যে রয়েছে। তারা রিমান্ডও গ্রেফতারের সম্মুখীন। তাদের দয়া করে মুক্তি দিন। না হলে দেশে ভারসাম্য নষ্ট হবে। দেশের শীর্ষ ৫৬ জন আলেমের বিরেুদ্ধে দুদক নোটিশ দিয়েছে। আমি মনে করি, আলেমদের আগে আমাদের সাড়ে ৩শ’ এমপির বিরুদ্ধে দুদক নোটিশ দিলে তা সমাদৃত হতো।’
বিএনপির সংরক্ষিত নারী আসনের রুমিন ফারহানা বলেন, ‘কোথায় মামলা করবো? কার কাছে মামলা করবো? কার কাছে অভিযোগ করবো? কেউতো জিডি নিতে রাজি হচ্ছেন না-কথাটি বলছিলেন ত্ব-হার (আবু ত্ব-হা মোহাম্মদ আদনান) স্ত্রী। গত বৃহস্পতিবার থেকে তিনি নিখোঁজ রয়েছেন এবং তার সঙ্গে আরও তিন ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছেন। এখন পর্যন্ত তাদের কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। একই সময়ে একই ধরনের অভিযোগ করতে দেখেছি চিত্রনায়িকা পরীমণিকে। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তিনি ভাগ্যবতী। কারণ তার মামলা নেওয়া হয়েছে এবং অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু সেই সৌভাগ্য হয়নি ত্ব-হার পরিবারের। সেই সৌভাগ্য হয়নি বাংলাদেশের ৬০৪টি পরিবারের। যারা দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ। তাদের ব্যাপারে না স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিছু বলছে, না লোকাল পুলিশস্টেশন কিছু বলতে পারছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার যখন বলছে, তারা পরকীয়া চলে গেছে, ঋণের বোঝা আছে, পারিবারিক কলহের জেরে চলে গেছে। তদন্তের ভিত্তিতে তারা কোথায় হারিয়ে গিয়েছে সেটা বের করা সরকারের দায়িত্ব। বারবার বলা হয়, বাংলাদেশে বিরাজনীতিকরণ করা হচ্ছে। বিরাজনীতিকরণ করা হচ্ছে এই অর্থে যে, যখন ভিন্ন রাজনৈতিক দলের কোনও ব্যক্তিকে গুম করা হয়, তার পরিবার পায় না। বাবা-মা বলেন তাদের ছেলে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নয়। তার মানে সরকারি দল না করলে সরকারি মতের সঙ্গে না মিললে সে হাওয়া হয়ে যেতে পারে, নাই হয়ে যেতে পারে, এটাই বিরাজনীতিকরণ।’
হারুন ও রুমিনের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান বলেন, ‘হজ ও ওমরা থেকে আমরা পরীমণি আর গুমে চলে গেছি। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে গুম খুন আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানো বিশ্বাস করি না। ইসলামি স্কলারদের সম্মান করি। কিন্তু ওয়াজের নামে কিছু কিছু আলেম বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। করোনা নিয়ে, ভ্যাকসিন নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হলো। মুসলমানদের করোনা হলে নাকি ইসলাম মিথ্যা হয়ে যাবে। এই সব আলেমদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে। সীমিত আকারে সবকিছু জায়েজ বলা যাবে না। সীমিত আকারে বিয়ে সীমিত আকারে প্রেম সীমিত আকারে ডেটিং এগুলো করা যাবে না।’
জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘বিভিন্ন ওয়াজ ফেসবুকে শুনি একটির সঙ্গে আরেকটির কোনও মিল নেই। উনারা একজন আরেকজনকে বলেন প্রকৃত মুসলমান না। উনাদের বক্তব্য অনুযায়ী কেউই আসল মুসলমান নয়। এই সব বক্তব্য শুনলে মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে যায়।