ওদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পরিবার খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেয়ার চেষ্টা করলেও ঠিক কবে তা সম্ভব হবে নিশ্চিত করে কেউই বলতে পারছেন না। এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে সরকারের অনুমতি মেলেনি। খালেদা জিয়ার পরিবারের করা আবেদন যাচাই করে দেখছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সহসাই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। বর্তমান শারীরিক অবস্থায় বিএনপি চেয়ারপারসন দীর্ঘ বিমান ভ্রমণে সক্ষম কি-না তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। করোনা পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশের বিধিনিষেধের বিষয়টিও আলোচনায় রয়েছে।
শারীরিক অবস্থা: খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই বলে জানিয়েছেন মেডিকেল বোর্ডের এক চিকিৎসক। তিনি বলেন, বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়েছে সেটা বলা যাবে না। সিসিইউতে নেয়ার পর থেকেই ওনাকে অক্সিজেন সাপোর্ট দেয়া হচ্ছে। তার ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত। খালেদা জিয়ার আগে যেখানে অক্সিজেন ২ লিটার লাগতো এখন ৩-৪ লিটার লাগছে। চেস্টের এক্স-রে করা হয়েছে, সেখানেও সামান্য সমস্যা দেখা গেছে। ওদিকে, মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন গত রাতে সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থা আগের মতোই স্থিতিশীল। মেডিকেল বোর্ড আজও (গতকাল) উনার কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে। উনার সর্বশেষ অবস্থা পর্যালোচনা করা হয়েছে। আগের চিকিৎসাই অব্যাহত রাখা হয়েছে।
সরকারের অনুমতির অপেক্ষা: উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে ইতিমধ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছে তার পরিবার ও দল। সরকারের কাছ থেকে এক ধরনের গ্রিন সিগন্যাল পেয়েই খালেদা জিয়ার পরিবার বিদেশে নেয়ার আবেদন করেছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। শিগগিরই বেগম জিয়ার বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
বিভিন্ন দেশের করোনা বিধিনিষেধ এবং দীর্ঘ বিমান ভ্রমণের প্রশ্ন: সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করেই মেডিকেল বোর্ড খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার সুপারিশ করেছে। এরই প্রেক্ষিতে সরকারের কাছে আবেদন জানায় পরিবার। তবে করোনা সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন দেশে যাত্রীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা এবং বিধিনিষেধের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হচ্ছে খালেদা জিয়ার পরিবারকে। এদিকে পরিবার ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যুক্তরাজ্য ছাড়াও সিঙ্গাপুর বা সৌদি আরবে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টিও আলোচনায় রয়েছে। যুক্তরাজ্য ও সিঙ্গাপুরে বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে যাত্রী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়া এক্ষেত্রে সুবিধা পেতে পারেন বলে মনে করেন বিএনপি’র সংশ্লিষ্টরা। তাছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসন এরই মধ্যে করোনামুক্ত হয়েছেন। ঢাকায় বিএনপির পক্ষ থেকে যুক্তরাজ্য এবং সিঙ্গাপুরসহ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে বর্তমান শারীরিক অবস্থায় খালেদা জিয়া দীর্ঘ সময় ধরে বিমানে যেতে পারবেন কি-না এজন্য খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা পরখ করে দেখছেন চিকিৎসকরা। আরো কিছু পরীক্ষাও করা হচ্ছে। এরপরই চিকিৎসকরা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানাবেন।
পাসপোর্ট নবায়ন: ২০১৯ সালে খালেদা জিয়ার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। পাসপোর্টের ফি জমা দিয়ে গত বৃস্পতিবার সন্ধ্যার পর এটি নবায়নের জন্য রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পাসপোর্ট অফিসে আবেদন জমা দেয়া হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী পাসপোর্টের জন্য সশরীরে উপস্থিত থেকে ফিঙ্গার প্রিন্ট ও আবেদনপত্রে স্বাক্ষর দেয়ার নিয়ম থাকলেও খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে সেই শর্ত শিথিল করা হয়েছে।
খালেদার সঙ্গে বিদেশে যাবেন কারা: খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিদেশে কারা যাচ্ছেন সেটি নিয়েও চলছে নানা আলোচনা। তবে এ বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে তার সঙ্গে যাবেন এমন দুই চিকিৎসক এবং পরিবারের সদস্যদেরও ভিসার জন্য পাসপোর্ট জমা দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। সূত্র বলছে, খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিদেশ যাবেন তার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার ও তার স্ত্রী কানিজ ফাতেমা। এ ছাড়া ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও গৃহকর্মী ফাতেমাও বিদেশ যাবেন। সরকারের আনুষ্ঠানিক অনুমতি পাওয়া এবং সবার ভিসা হওয়ার পরই উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন তারা।
নেতাকর্মীদের উৎকণ্ঠা: খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছে। সারা দেশের পাশাপাশি বিদেশ থেকেও দলীয় অফিসে হাজার হাজার ই-মেইল ও ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে খালেদা জিয়ার অবস্থা জানতে চাইছেন নেতাকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। এ বিষয়ে বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা হয় । তারা বলেন, আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি ম্যাডাম এখন খুবই অসুস্থ। তার এখন উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। সরকার অনুমতি দিলে যেকোনো সময় তাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়া হবে। স্বাস্থ্যের অবস্থা পুরোপুরি ভালো হলে তিনি দেশে ফিরে আসবেন। ম্যাডামের এখন সুস্থ হওয়াটাই আমাদের কাছে মুখ্য বিষয়।