বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক : খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলায় বৃহস্পতিবার সারা রাত অভিযান চালিয়ে ৬০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে দাবি করেছে বিএনপি। এর মধ্যে খুলনা মহানগরী থেকেই আটক করা হয়েছে ৪৭ জনকে।
শুক্রবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে খুলনার কেডি ঘোষ রোডের বিএনপি কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু এই অভিযোগ করেন।
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, সমাবেশকে বানচাল করতে বিভাগজুড়ে ভয়ের সংস্কৃতি সৃষ্টি করা হয়েছে। পরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। লঞ্চঘাট, ট্রলার চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাহলে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, বাগেরহাট, নড়াইল থেকে কি বিএনপির নেতাকর্মীরা হেঁটে আসবেন? নদী সাঁতরে খুলনায় আসবেন? এ কেমন মানসিকতা? স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধে এ দেশের নারী-পুরুষ-শিশু বুকের রক্ত দিয়েছিলেন। সেই দেশের এমন পরিস্থিতি হবে কেন?
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় একাত্তরের রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। গতকাল রাতে তিনি যেখানে অবস্থান করছিলেন, পুলিশ সেখানে অভিযান চালিয়ে ১৩ নেতাকর্মীকে আটক করেছে। একজন মহান মুক্তিযোদ্ধাকে পুলিশ রীতিমতো অপমান করেছে। এমন অপমানের মুখোমুখি তাকে হতে হবে কেন?
অন্য বিভাগীয় সমাবেশের অনুমতি প্রদানে প্রশাসন কালক্ষেপণ করলেও খুলনার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটেছে জানিয়ে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, খুলনায় অনুমতি চাওয়া মাত্র প্রশাসন তা দিয়েছে। এজন্য দলের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু তারপর থেকে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে। প্রশাসনকে বলব, যা হয়েছে হয়ে গেছে। এবার এসব বন্ধ করেন। আমাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে দিন। উস্কানি না দিয়ে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করুন।
তিনি বলেন, দুপুর ২টায় সমাবেশ শুরু হয়ে চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। এ সমাবেশ দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য, জনদাবির সমর্থনে আন্দোলনে শহীদ পাঁচ সহকর্মী হত্যার বিচারের দাবিতে, এই সমাবেশ দেশমাতা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে, দেশনায়ক তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিতে, জ্বালানি তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানোর দাবিতে। যেকোনো মূল্যে এই কর্মসূচি সফল করার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এর আগে ব্রিফিংয়ের সূচনায় নগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন বলেন, বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত করতে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ সম্মিলিতভাবে শহরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার, বাড়ি-বাড়ি তল্লাশি, অব্যাহত হুমকি প্রদর্শন করছে। প্রকাশ্যে রামদা হকিস্টিকসহ অস্ত্রের মহড়া চলছে। তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে, এই সরকার শেষ সরকার নয়। এসব কাজের পরিণতি শুভ হবে না।
প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, সহ-প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা, জেলা আহ্বায়ক আমীর এজাজ খান, জেলা সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পী, নগর সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. তারিকুল ইসলাম জহীর ও জেলার আবু হোসেন বাবু।
এদিকে দলীয় সূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন থানা থেকে অর্ধশত নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে খুলনা সদর থানায় খন্দকার হাসিনুল ইসলাম নিক, মিজানুর রহমান বাবু, বেল্লাল হোসেন, জসিম উদ্দিন লাবু, শফিকুল ইসলাম, মিজান ও কবির ফরাজি, সোনাডাঙ্গা থানায় নজরুল ইসলাম, ডালিম, ডা. শাহ আলম, মাহমুদ আলম বাবু মোড়ল, জুলু, কাজী সেলিম, খালিশপুর থানায় মেহেদী, সামাদ বিশ্বাস, গোলাম মোস্তফা ভুট্টো, মো. হাসান, মোল্লা কওসার, দৌলতপুর থানায় হুমায়ুন কবির, রাসেলুজ্জামান, খানজাহান আলী থানায় জসীম ভূইয়া, মামুন ও উজ্জ্বল এবং হরিণটানা থানায় কামাল, হেলাল ও হযরত আলী। এছাড়া বাগেরহাট থেকে আসা চারজনকে খুলনা থানা পুলিশ এবং মোড়েলগঞ্জ বিএনপি নেতা খায়রুজ্জামান শিপনের বাসা থেকে ১৩ জনকে আটক করা হয়।
এদিকে গভীর রাতে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলা থেকে বিএনপি নেতাকর্মীবাহী একটি গাড়ি সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে যায়। যেখানে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর মুন্সী, কুষক দল আহ্বায়ক মুকুল মেম্বারসহ ১১ জন রয়েছেন বলে জানা গেছে।