এর আগে বিধানসভা নির্বাচনে মোট ২৯৪ আসনে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম দফায় ২৭ মার্চ ৩০ টি আসনে , দ্বিতীয় দফায় ১ লা এপ্রিল ৩০ টি আসনে , ৩য় দফায় ৬ এপ্রিল ৩১ আসনে , চতুর্থ দফায় ১০ এপ্রিল ৪৪ আসনে , ৫ম দফায় ১৭ এপ্রিল ৪৫ আসনে, ৬ষ্ঠ দফায় ২২ এপ্রিল ৪৩ আসনে , ৭ম দফায় ২৬ এপ্রিল ৩৬ আসনে ভোট হওয়ার কথা থাকলেও দুই প্রার্থী করোনায় মারা যাওয়ায় ৩৪ টি আসনে ভোট হয়। সর্বশেষ ২৯ এপ্রিল চার জেলায় ৩৫ আসনে ভোট হয়। দ্বিতীয় ধাপ নির্বাচনের সময় সবার নজর ছিল নন্দীগ্রামে। সেখানে মমতার প্রতিদ্বন্দী ছিল শুভেন্দু অধিকারী । যিনি এক সময় মমতারই অনুগত ছিলেন। এছাড়া বাম-কংগ্রেস- আইএসএফ(ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট)-সিপিএমের প্রার্থী ছিলেন পরিচিত মুখ মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়।
এছাড়াও এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে আলোচিত ছিলেন ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকীার গড়া নতুন দল ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট । তিনি কংগ্রেস-বামফ্রন্টে যোগ দেন।
তাছাড়া অনেকে বলছেন পশ্চিমবঙ্গে তুরুপের তাস হতে পারে মুসলিম ভোট ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। এখানে ৩০% মুসলিমের বাস।এছাড়াও এখানে প্রায় তিন কোটি মতুয়া সম্প্রদায় বাস করে। মমতা এইজন্য অভিযোগ করে বলেছিলেন, নরেন্দ্রমোদি এই কারণে বাংলাদেশে গিয়ে মতুয়া সম্প্রদায়ের মন্দির উদ্ধোধন করেছেন। বিদেশে গিয়ে নির্বাচনি প্রচার চালিয়েছেন।
এই নির্বাচনের পূর্বে অনেক তৃণমূলের নেতা বিজেপিতে যোগ দেন। এর মধ্যে অনেক অভিনেতাও আছেন। ২০১৬ সালের নির্বাচনের চেয়ে বিজেপি কিছুটা এগিয়ে আছে। তাদের জনমত অনেকটা বেড়েছে।
তবে প্রতিটি বুথ ফেরত জরিপেই তৃণমূল এগিয়ে আছে। দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার জরিপে বলা হয়, তৃণমূলের ভোটের হার হতে পারে ৪২ শতাংশ এবং আসন পেতে পারে ১৫২ থেকে ১৬৪ টি।
এছাড়াও সমীক্ষা সংস্থা চাণক্যের মতে, তৃণমূল পাবে ১৮০ টি আসন। বিজিপি পাবে ১৭০ টি আসন। কথা হচ্ছে এককভাবে কাউকে এগিয়ে রাখেনি কোন সংস্থা। এদিকে আবার অনেকে ধারণা করছেন আইএসএফ পেতে পারে ২৩-৩১ আসন।
এদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও জানিয়েছেন, তার দল তৃণমূল কংগ্রেস দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আবারো রাজ্যের ক্ষমতায় আসছে।
ভোট শেষ ও গণনার আগে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলীয় প্রার্থী, পোলিং এজেন্ট ও দলের নেতাদের নিয়ে প্রথম বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন। বৈঠকে ২৮৭ প্রার্থীর সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষস্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন , আমরা দুই-তৃতীয়াংশ আসন নিয়ে রাজ্যে ক্ষমতায় আসছি। আপনারা কেউ গণনা কেন্দ্রের ট্রেন্ড দেখে গণনা কেন্দ্র ছাড়বেন না। কেউ খেতে দিলে খাবেন না, ধূমপান করবেন না।
ভোট গণনার সময় কী করণীয় বৈঠকে সেই বিষয়ে কিছু পরামর্শ দেন দলনেত্রী মমতা। ভোট গণনা কেন্দ্রের এজেন্টদের গণনার ‘ট্রেন্ড’ দেখে হতাশ হয়ে গণনা কেন্দ্র ছাড়ার মতো কাজ করতে নিষেধ করে তিনি বলেন, ভোট গোনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত গণনা কেন্দ্রে থাকুন। মমতা বলেন, ভোট গণনার আগে ফর্ম ভালো করে পরীক্ষা করে নিতে হবে। গণনা কেন্দ্রে থাকার সময় জঙ্গল মহল ও উত্তরবঙ্গের কিছু আসন থেকে প্রথমে গণনার ট্রেন্ডে বিরোধীরা এগিয়ে আছে দেখলে গণনা কেন্দ্র ছেড়ে যাবেন না। মনে রাখবেন জয় তৃণমূলেরই হবে।
এছাড়া বিজেপি নেতারা বিভন্ন সময় বক্তব্যে নির্বাচনে বিজয়ের আভাস দিয়েছেন। মাত্র তিন দফার ভোট শেষ কলকাতায় এক সংবাদ সম্মেলন বেজেপি নেতা ও ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছিলেন, এই তিন দফার নির্বাচনে ৬৩টি থেকে ৬৮টি আসনে জয়ী হবে বিজেপি।
এসময় তিনি দাবি করেন, মোদির জয়প্রিয়তাকে ভয় পাচ্ছেন দিদি। ক্ষমতায় আসার এক সপ্তাহের মধ্যে প্রত্যেক কৃষকের অ্যাকাউন্টে ১৮ হাজার টাকা দেয়া হবে।
পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে ২৯৪ আসনের মধ্যে রাজ্য সরকার গঠন করতে প্রয়োজন ১৪৮ টি আসন। এখন শুধুই ফলফলের অপেক্ষা।