বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক : রাজধানীর তোপখানা রোডের একটি বাসা থেকে সুইটি নামে ১২ বছর বয়সী এক শিশু গৃহকর্মীকে নির্যাতনের মামলায় গৃহকর্তা মো. তানভির আহসান এবং তার স্ত্রী অ্যাডভোকেট নাহিদকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। আজ রোববার ঢাকা মহানগর হাকিম শাহিনুর রহমান আসামিদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর এ আদেশ দেন।
এর আগে এদিন কারাগারে পাঠানো দম্পতির মামলায় শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই, নিরস্ত্র) জাহাঙ্গীর হোসেন আসামিদের আদালত হাজির করে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, ভিকটিম সুইটিকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় দেখে জাতীয় জরুরি সেবায় (৯৯৯) অবগত করা হয়। পুলিশ সুইটিকে উদ্ধার করে এবং ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জেনে ও জড়িত আসামিদের খোঁজখবর করে। আসামিদের নাহিদের বাবার বাসায় পাওয়া যায়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায় সুইটি তাদের বাসার কাজের মেয়ে। ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। ঘটনাটি ভিকটিমের পরিবারকে জানানো হয়েছে। ভিকটিমের অভিভাবকের অভিযোগ পাওয়ার পর পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাই এ অবস্থায় আসামিদের কারাগারে আটক রাখা প্রয়োজন।
জানা যায়, সুইটির বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন থানার নবাবপুর গ্রামে। অভাবের তাড়নায় দরিদ্র বাবা-মা তাকে রাজধানীর তোপখানা রোডে একটি বাসায় গৃহকর্মীর কাজে দেয়। সেখানে সে গত ৯ মাস ধরে কাজ করছিল। প্রায় প্রতিদিনই তাকে নানা অজুহাতে গৃহকর্তা ও গৃহকর্ত্রী স্বামী-স্ত্রী দুজন মিলে মারধর করে। সুইটির চোখের নিচে আঘাতের চিহ্ন, হাতে গুরুতর জখম হয়েছে। তার পশ্চাৎদেশে উভয়পাশে মশা মারার ইলেকট্রিক ব্যাট দিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। মেয়েটির শরীরে নির্যাতনের আঘাতের চিহ্নসহ কিছু ছবি গত ৩ জুলাই রাতে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে দ্রুত সহযোগিতা ও আইনি ব্যবস্থার আকুতি জানান এক প্রতিবেশী। বিষয়টি পুলিশের নজরে আসলে তাদের গত শনিবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়।
অন্যদিকে রাজধানীর ভাটারায় ১৪ বছর বয়সী এক গৃহকর্মীকে নির্যাতনের মামলায় গৃহকত্রী মাহফুজা রহমানের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন একই আদালত। রিমান্ড যাওয়া গৃহকত্রীর স্বামী বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা আসাদুর রহমান আরিফের এর আগে গত ২ জুলাই দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। বর্তমানে তিনি রিমান্ডে আছেন।
ভাটারায় মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা ভাটারা থানার এসআই বিল্লাল হোসেন আসামিকে আদালতে হাজির করে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। এর আগে গত ১ জুলাই গৃহকর্তা আসাদুর রহমান আরিফ এবং তার স্ত্রী মাহফুজা রহমানের বিরুদ্ধে রাজধানীর ভাটারা থানায় মামলা দায়ের হয়।
আহত গৃহকর্মীর অভিযোগ, সে আট মাস ধরে ওই বাসায় কাজ করে। বিভিন্ন সময় নানা অজুহাতে তাকে গরম পানি ও খুন্তির ছ্যাঁকা এবং মাথা দেয়ালের সঙ্গে ঠুকে নির্যাতন করা হতো। অনেকবার বাসা থেকে পালানোরও চেষ্টা করেছে। কিন্তু স্যার ও ম্যাডাম ( আসামিরা) তাকে পালাতে দেয়নি। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আসামিরা তাকে কুড়িল বিশ্বরোড ওভারব্রিজের কাছে বোন ফাতেমার বাসায় দিয়ে আসে।
ওই কিশোরীর বোন ফাতেমা বেগম বলেন, তার বোন ওই বাসায় আট মাস ধরে কাজ করে। পাঁচ হাজার টাকা করে প্রতি মাসে দেওয়ার কথা থাকলেও মাত্র তিন মাসের টাকা দিয়েছে। এখনো তাদের কাছে বোন অনেক টাকা পায়। টাকার কথা বললেই বিভিন্ন সময় বোনকে মারধর করা হতো। তার শরীরে অনেক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।