বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক: কথা ছিল স্বামীর সঙ্গে ঘুরবেন, ছবি তুলবেন; এরপর হাসিমুখে ফিরবেন বাড়ি। স্বামী পৈচাশিক আনন্দ নিয়ে ঘরে ফিরলেও, জঙ্গলেই নিথর হয়ে পড়ে আছেন অন্তঃসত্ত্বা আছমা।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি গহীন জঙ্গল থেকে পুলিশ ও স্বজনরা নিহত আছমা বেগমের লাশ উদ্ধার করে। স্বামী আলমগীর, শ্বশুর ও শ্বাশুড়িকে আসামি করে নিহত আছমার পিতা আলী মিয়া বাদী হয়ে চুনারুঘাট থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
পুলিশ ঘাতক স্বামী আলমগীরকে গ্রেফতার করলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার দায় স্বীকার করে। পরে তাকে আজ শুক্রবার বিকেলে আদালতে প্রেরণ করা হলে সেখানেও ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে ঘটনার দায় স্বীকার করে। হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ঝুমার সরকারের আদালতে সে এই জবানবন্দি দেয়।
লাশ উদ্ধারকারী ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চুনারুঘাট থানার এসআই লিটন ঘোষ জানান, নিহত আছমা বেগম গর্ভবতী ছিলেন। আছমাকে গলায় গেঞ্জি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া তার মুখমণ্ডলে আঘাতের চিহ্ন আছে।
আলমগীর স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছে, দাম্পত্য কলহ ও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পারিবারিক বিরোধকে কেন্দ্র করে সে তার স্ত্রীকে হত্যা করেছে। মাধবপুর বাজারে কেনাকাটা, চা বাগান, পাহাড় দেখা ও সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে বেড়ানোর কথা বলে স্বামী-স্ত্রী মিলে একটি সিএনজি অটোরিকশা ১৫ শ টাকায় ভাড়া নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। মাধবপুর বাজারে সামান্য ঘোরাফেরা করে রাস্তার দুপাশে চা বাগান দেখে সকাল ১০টার দিকে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে পৌঁছে। চালককে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের সামনে দাঁড় করিয়ে রেখে স্বামী-স্ত্রী মিলে সাতছড়ির দক্ষিণের গহীন জঙ্গলে ঢুকে যায়।
২ ঘণ্টা পর আলমগীর আছমাকে জঙ্গলে রেখে একা ফিরে আসে। এ সময় তার চোখেমুখে বিষণ্নতার ছাপ দেখে অটোরিকশাচালক জানতে চায়, ‘আপনার সঙ্গী কোথায়?’ জবাবে আলমগীর বলে, ওই নারী খারাপ চরিত্রের। তাকে জঙ্গলে রেখে চলে এসেছি। সে অন্য পুরুষের সঙ্গে খারাপ কাজে লিপ্ত রয়েছে।
আছমার পিতা জানান, আলমগীরের সঙ্গে আছমার বিয়ে হয় ৩ বছর আগে। বিয়ের পর আছমার শ্বশুর নূর ইসলাম আছমার সোনার গয়না বিক্রি করে দেয়। সেগুলো ফেরত চাইতে গেলে বহুবার শ্বশুর ও স্বামীর সঙ্গে আছমার ঝগড়া হয়। এ কারণে আছমাকে স্বামী আলমগীর জঙ্গলে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে তাকে খুন করেছে।
স্ত্রীকে হত্যা করে বিকেলে বাড়ি ফিরলে আলমগীরের কাছে আছমার পরিবারের লোকজন তার সন্ধান জানতে চাইলে সে অসংলগ্ন জবাব দেয়। পরিবারের লোকজনের সন্দেহ হলে বুধবার রাতে আলমগীরকে নাসিরনগর থানায় পুলিশের হাতে সোপর্দ করে। পুলিশের কাছে স্ত্রী হত্যার বর্ণনা দিলে পুলিশ ও আছমার আত্মীয়-স্বজন পর্যটন বিভাগের লোকজন নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে ২ ঘণ্টা তাল্লাশি চালিয়ে একটি টিলার ওপর থেকে আছমার মরদেহ উদ্ধার করে।