প্রথমবারের মত জমকালো ও উদ্ভাবনী আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর তিতুমীর হল মহাপুনর্মিলনী-২০২৩। শুক্রবার রাতে বুয়েটের তিতুমীর হল প্রাঙ্গণে এই পুনর্মিলনীর আয়োজন করা হয়। তিতুমীর হলে শিক্ষাজীবন কাটানো দেশ বিদেশে কর্মরত প্রকৌশলী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা পুনর্মিলনীতে মেতে ওঠেন প্রাণের উচ্ছ্বাসে। দিনব্যাপী এই বর্ণাঢ্য আয়োজনে তিতুমীর হলের সাবেক শিক্ষার্থীরা স্মৃতিচারণ করেন। বিশেষ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিতুমীর হলের শিক্ষার্থীদের গৌরবোজ্জ্বল অবদানের কথা তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের কণ্ঠে ঝরে পড়ে বুয়েট জীবনের স্বপ্নিল দিনগুলোতে ফিরে যাওয়ার আকুতি। সুন্দর স্বর্ণালি সন্ধ্যায় দেশে ও বিদেশে অবস্থানরত সহপাঠী ও বন্ধুরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ, হাসি-কান্না, গল্প ও আড্ডায় মেতে উঠেন। প্রবীন ও নবীনদের সম্মিলনে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানটি পরিনত হয়েছিলো একটি আনন্দমেলায়। বেলুন উঠিয়ে ও আনন্দ শোভাযাত্রার মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। আনন্দ শোভাযাত্রাটি পুরো বুয়েট প্রদক্ষিণ করে। এরপর ছিলো খেলাধুলা, স্মৃতিকথা, ম্যাজিক শো, ড্রোন শো, গল্প ও গানের আসর, মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নৈশভোজের আয়োজন। পাঁচ শতাধিক প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবার এবং চার শতাধিক বর্তমান ছাত্র পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান একসাথে উপভোগ করেন।
উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তিতুমীর হলের ১ম ব্যাচের আবাসিক ছাত্র ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ড. শহীদ হোসাইন। সম্মানীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বুয়েটের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল জব্বার খান, বুয়েট অ্যালামনাই এর মহাসচিব প্রকৌশলী মাহতাব উদ্দিন এবং বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোঃ মিজানুর রহমান। তিতুমীর হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রকৌশলী আবদুল মুকাতাদির বেলালের সভাপতিত্বে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন তিতুমীর হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবু সায়েম কাড়াল এবং স্বাগত বক্তব্য পেশ করেন তিতুমীর হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী কাজী খায়রুল বাশার।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. শহীদ হোসাইন বলেন, প্রকৌশলী শিক্ষায় বুয়েট বাংলাদেশের সেরা বিদ্যাপীঠ আর তিতুমীর হলকে আমরা বলি বুয়েটের রাজধানী। জীবনের শেষ বেলায় পৌঁছে আমার মনে হচ্ছে তিতুমীর হলকে আমি দিতে পারিনি কিছুই, কিন্তু অনেক কিছু নিয়েছি এই হল থেকে। আমার চেষ্টা থাকবে আমার জায়গা থেকে যথাসম্ভব তিতুমীর হলের উন্নয়ন ও এই হলের ছাত্রদের মেধাবৃত্তিক বিকাশে পাশে থাকার। এসময় তিনি তিতুমীর হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের একটি বেনেভোলেন্ট ফান্ড গঠন করার পরামর্শ দেন।
সম্মানীয় অতিথি বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন, বুয়েটের ছাত্র এবং অ্যালামনাইরা সবাই অলরাউন্ডার, তারা যেমন দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন একইভাবে সারা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও গবেষণায় তারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিতুমীর যেমন বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন তেমনি তিতুমীর হলের ছাত্ররাও স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহন করে শহীদ হয়েছেন। আমরা বর্তমানে গবেষণায় জোর দিচ্ছি। অ্যালামনাইদের উদ্যোগে গবেষণা ফান্ড গঠন করা হলে বিশ্ববিদ্যালয় উপকৃত হবে। আমরা চাই অ্যালামনাই’রা তাদের ভুমিকা পালন করুক, আমাদের পক্ষ থেকে সর্বতোভাবে আমরা সাহায্য করব।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বুয়েটের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল জব্বার খান বলেন, আমরা এখন ফেলোশিপ দিচ্ছি যেটি বুয়েটে আগে কখনো ছিলো না। আমরা স্নাতক পর্যায়ের গবেষণাকে আরো অনুপ্রাণিত করার জন্য ‘রিসার্চ ফান্ডিং’ দিচ্ছি। আমরা গত আড়াই বছরে ৭০টিরও বেশি ইন্ডাস্ট্রির সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছি যেন ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া সহযোগিতা আরো বৃদ্ধি পায়।
উল্লেখ্য, তিতুমীর হল বুয়েটের নয়টি আবাসিক হলের মধ্যে একটি হল। ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই হলের নামকরণ করা হয় বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের বীর সেনানী শহীদ তিতুমীর নামে। উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে তিতুমীর হলের নাম। পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখসমরে এই হলের নয়জন ছাত্র শহীদ হন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিতুমীর হলের প্রায় ৪০০০ আবাসিক ছাত্র ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে দেশে-বিদেশে কর্মক্ষেত্রে অনবদ্য অবদান রেখে চলেছেন।