বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক: নানা কারণে আলোচিত ছিলেন সদ্যপ্রয়াত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন হাজারী। বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের আমল থেকে শুরু করে শেখ হাসিনার সময় পর্যন্ত বেশ প্রতাপের রাজনীতিতে ছিল তার পদচারণা। তিনি ছিলেন একজন আপাদমস্তক রাজনীতিবিদ। রাজনীতিই ছিল ধ্যান-জ্ঞান।
রাজনীতিতে নামিদামি থেকে শুরু করে জনসাধারণ পর্যায়ে বহু মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিলেও ব্যক্তিগত জীবনে কোনো সঙ্গিনীর বাহুডোঁরে বাঁধা পড়া হয়নি তার। বিভিন্ন সময়ে রাজনীতিকদের ৫০ পেরোনো বয়সে বিয়ে ও ঘর-সংসার করতে দেখা গেলেও এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আমৃত্যুই ছিলেন ‘চিরকুমার’।
জয়নাল হাজারীর রাজনৈতিক জীবন নিয়ে যেমন মানুষের আগ্রহ, তেমনি তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও সব সময় ছিল নানা আলোচনা। এখন তার রেখে যাওয়া সম্পদ কে পাবেন, এই প্রশ্ন এখন ইন্টারনেট দুনিয়ায় ঘুরছে। আসুন জেনে নেই জয়নাল হাজারীর সম্পদ ও তার উত্তরাধীকারী কারা-
‘ফেনীতে জয়নাল হাজারীর ৬০ শতকের মুজিব উদ্যান থাকবে অখণ্ড। এছাড়া তার সব স্থাবর—অস্থাবর সম্পদের ভাগিদার হবেন ভাতিজা, ভাতিজি ও ভাগিনা—ভাগ্নিরা।’
‘এছাড়া চিরকুমার হাজারীর স্মৃতিরক্ষায় শৈলকুটির থাকবে অখণ্ড। জয়নাল হাজারী জীবিত অবস্থায় কোনও সম্পত্তি ওয়াকফ বা অন্য কোথায়ও দান করেননি।’
এসব তথ্য জানিয়েছেন জয়নাল হাজারীর একসময়ের ঘনিষ্ঠ সহচর ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও ফেনী জজ কোর্টের আইনজীবী এম শাহজাহান সাজু।
ফেনী শহরের মাস্টারপাড়ার মুজিব উদ্যানে জয়নাল হাজারীকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। এ জায়গা অখণ্ড রাখার জন্য তিনি মৃত্যুর আগে ওসিয়ত করে যান। জয়নাল হাজারীর পৈত্রিক সূত্রে মালিকানা পাওয়া ৩ শতাংশ জায়গায় ভবন রয়েছে। শহরের পেট্রোবাংলায় ৩০-৩৫ শতাংশ জায়গা, রাজধানীর ধানমন্ডিতে ফ্ল্যাট রয়েছে। যেটি তিনি জীবিত থাকাবস্থায় ছোট বোন খোদেজা হাজারীকে দান করেছেন।
এছাড়াও রাজধানীতে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় তার নামে একটি প্লট রয়েছে। এর আগে ১৯৯৯ সালে ৬০ শতাংশের জায়গাটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি রক্ষায় মুজিব উদ্যান করার জন্য জয়নাল আবেদীন হাজারী সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে দান করেন। কিন্তু সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিতে মুজিব স্মৃতিস্তম্ভ না করার কারণে জয়নাল হাজারীকে আবার জায়গাটি ফেরত দিয়ে দেন।
আইনজীবী শাহজাহান সাজু আরো জানান, উত্তরাধিকার সূত্রে হাজারী ভাইয়ের সব স্থাবর—অস্থাবর সম্পত্তির মালিক হবেন তার ভাই—বোন। মুজিব উদ্যান অখণ্ড থাকবে বলেও হাজারী ওসিয়ত করে গেছেন। এটি একসময় হিন্দুদের সম্পত্তি ছিল। জয়নাল হাজারীর বাবা আবদুল গণি হাজারী জায়গাগুলো কিনে নেন। পৈত্রিক বণ্টকে তিনি এ জায়গাটি ভাগে পেয়েছেন।
রাজনীতিতে একসময়ের আলোচিত ও সমালোচিত ব্যক্তি জয়নাল হাজারী গোটা রাজনৈতিক জীবন কাটিয়েছেন ফেনী শহরের মাস্টারপাড়ায়। সেখান থেকে তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন। নিজ বাড়ির সামনে তৈরি করেছেন দৃষ্টিনন্দন মুজিব উদ্যান। বঙ্গবন্ধুর নামে গড়া ঐ উদ্যানে সবসময় আড্ডা দিতেন জয়নাল হাজারী।
সোমবার বিকাল ৫টার দিকে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জয়নাল হাজারী। নানা শারীরিক জটিলতা নিয়ে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।
জয়নাল আবেদীন হাজারী ১৯৮৬, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে ফেনী-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধ পূর্ববর্তীকালে বৃহত্তর নোয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।