বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক : ঈদ উপলক্ষে পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার আঙ্গারিয়ায় মামার বাড়িতে বেড়াতে এসে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় অসুস্থ হয়ে পড়েন নুরুল আমিন মিথুন। তাকে হাসপাতালে নিতে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করা হলেও পথে ফেরি পারাপারের জন্য থেমে যেতে হয় তাদের। জাতীয় পার্টির (জাপা) কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার নদী পার হবেন বলে ফেরিতে উঠতে দেওয়া হয়নি শ্বাসকষ্টের রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সটিকে।
ঈদের দিন শুক্রবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটে পটুয়াখালীর লেবুখালী ফেরিঘাটে। ফেরিতে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভোগা মিথুনকে পরিবহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি উঠতে না দেওয়া হলেও জাতীয় পার্টির নেতা রুহুল আমিন হাওলাদারের সঙ্গে থাকা তিনটি পাজেরো গাড়ি তোলা হয় ফেরিতে। অথচ, ওই ফেরিতে ৯ থেকে ১২টি গাড়ি উঠতে পারে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
ফেরিতে জাপা নেতার তিন গাড়ি ছাড়াও কেবল ট্যুরিস্ট পুলিশের একটি গাড়ি ছিল বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। বাকি অংশ খালিই ছিল। স্থানীয়রা জানান, ফেরি আসবে বলে অ্যাম্বুলেন্সসহ গাড়িগুলো দাঁড়িয়েছিল। রুহুল আমিন হাওলাদার ও তার সঙ্গীদের দুটি গাড়ি ছিল পেছনে। এর মধ্যে ফেরি আসার পর সামনের গাড়ি রেখে পেছনের গাড়িগুলো তুলে দেওয়া হয়। হাওলাদার ফেরিতে ওঠার পর সাইরেন বাজিয়ে সেটিতে ওঠার চেষ্টা করে অ্যাম্বুলেন্সটি। কিন্তু পন্টুনে ওঠার পরও সেটিতে রেখে ফেরি ছেড়ে যায়। পরে প্রায় ৪০ মিনিট পর হাওলাদারকে নামিয়ে দিয়ে ফেরিটি আবার ঘাটে এলে অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্যান্য গাড়ি পার করা হয়।
মিথুনের খালা জেসমিন আক্তার জানান, শ্বাসকষ্ট শুরু হলে তার বোনের ছেলেকে প্রথমে পটুয়াখালি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে ঢাকায় রেফার করা হয়। মিথুনকে নিয়ে তারা অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকা যাত্রা করেছিলেন। জেসমিন আক্ষেপ করে বলেন, ‘ফেরিঘাটে আইলে পন্টুনে উডি। কিন্তু ফেরির লোকজন মোগো ওডতে দিল না। মাত্র তিনডা গাড়ি নিয়া ফেরিডা ছাইড়া দিল। একটা গাড়ি নিলে ওনাগো কী ক্ষতি অইতে?’
অ্যাম্বুলেন্স চালক মো. রনি বলেন, ‘রোগী নিয়ে ফেরিতে উঠতে গেলে ফেরির লোকজন বাধা দিয়ে বলে ভিআইপি আছে, ওঠা যাবে না। আমি হর্ন বাজাইছি, কিন্তু উঠতে দেয় নাই।’
রোগীর অ্যাম্বুলেন্স রেখে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ফেরিচালক জয়দেব বলেন, ‘আমি উপরে থাকি। নিচ থেকে ছাড়ার সংকেত পেলে ঘাট ত্যাগ করি। কে ছিল আমি জানি না। সংকেত পাইছি তাই ছেড়ে গেছি।’
ফেরির লস্কর বাবুল বলেন, ‘জাতীয় পার্টির নেতা ও রুহুল আমিন হাওলাদার স্যার ছিল, তাই ছেড়ে দিছি। তার সাথে থাকা লোকজন ছাড়ার জন্য তাগিদ দিয়েছিল। এছাড়াও ওই ফেরিতে একটি টুরিস্ট পুলিশের ভ্যান ছিল। তারাও ফেরিটি দ্রুত ছাড়তে বলেছে।’
দুমকী থানার ওসি মেহেদী হাসান বলেন, ‘শুনেছি ওই ফেরিতে জাপা নেতা রুহুল আমিন হাওলাদার ছিলেন। ওই সময় সেখানকার দায়িত্বরত পুলিশ দুপুরের খাবার খেতে পাশে গিয়েছিল। যে কারণে পুরো বিষয়টি জানা যায়নি।’
এ ব্যাপারে জাতীয় পার্টির নেতা এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে, স্থানীয় জাতীয় পার্টি নেতারা জানিয়েছেন, দুমকীর নিজের বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়ি বরিশালের বাকেরগঞ্জ যাচ্ছিলেন হাওলাদার।