দাঁতের যত্ন নেয়া হলেও বেশিরভাগ মানুষই জিহ্বা পরিষ্কার করতে ভুলে যান। ফলে জিহ্বায় ছত্রাক-ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণসহ নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি শারীরিক বিভিন্ন সমস্যায় জিহ্বার গঠন ও রং পরিবর্তন হতে পারে।
তাই জিহ্বার স্বাস্থ্য নিয়ে কারও অবহেলা করা উচিত নয়। যেসব কারণে জিহ্বার রঙে পরিবর্তন আসে-
>>> ম্যাক্রোগ্লোসিয়ার ক্ষেত্রে জিহ্বা বেশ বড় হয়ে যায়।
>>> মিডিয়ান রম্বয়েড গ্লসাইটিস একটি কালশিটে, চকচকে ও মসৃণ মধ্যরেখা দেখা দেয় জিহ্বায়।
>>> জিওগ্র্যাফিক বা ভৌগলিক জিহ্বায় চকচকে লাল ও সাদা প্যাচ দেখা দেয়। যা এলোমেলোভাবে থাকে, দেখতে মানচিত্রের মতো দেখা যায়।
>>> ফিসার্ড টাং বা বিবর্ণ জিহ্বার কারণে গভীর খাঁজ দেখা দেয় বিবর্ণতাসহ।
>>> লিউকোপ্লাকিয়ার কারণে জিহ্বায় সাদা ও চিকন ক্ষত হয়।
>>> লাইনা আলবা হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে গাল ও জিহ্বার পাশে ঘন সাদা রেখা দেখা দেয়।
>>> লাইকেন প্ল্যানাস হলে জিহ্বায় সাদা ছোপ, লাল কালশিটে বিন্দু কিংবা জালের মতো দেখায়।
>>> মৌখিক লোমযুক্ত লিউকোপ্লাকিয়ার ক্ষেত্রে জিহ্বা সাদা লোমযুক্ত প্যাচ লক্ষা করা যায়।
>>> আলসার স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমার কারণে জিহ্বা অনেকটা সাদা বা লালচে হয়ে ওঠে।
>>> ক্যানডিডিয়াসিসের ক্ষেত্রে জিহ্বায় ছত্রাক বৃদ্ধির কারণে সাদা ছোপ পড়ে।
জিহ্বা সাদাটে হওয়ার কিছু সাধারণ কারণ-
ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ
বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া, খাদ্য কণা, মৃত ত্বকের কোষ ও পার্শ্ববর্তী টিস্যু থেকে বিভিন্ন ধরনের শ্বেত রক্তকণিকা জমে জিহ্বা সাদাটে হতে পারে। এক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে জিহ্বার আবরণের পুরুত্ব কয়েক থেকে কয়েক মিলিমিটার হতে পারে। রুক্ষ ও সাদাটে জিহ্বা থেকে অপ্রীতিকর গন্ধ নির্গত হয়। দুর্বল মৌখিক স্বাস্থ্যবিধি ও চলমান হজম সমস্যার কারণে প্রায়ই জিহ্বা সাদাটে হতে পারে।
লিউকোপ্লাকিয়া
এটি হলো একটি প্রি-ম্যালিগন্যান্ট ক্ষত, যা ওরাল ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। এক্ষেত্রে গালে, মাড়িতে বা জিহ্বায় সাদা প্যাচ দেখা দিতে পারে। তামাক বা সুপারি চিবানোই এর প্রধান কারণ। শুকনো মুখ, সামান্য জ্বালাপোড়া, ও চিবিয়ে খেতে অসুবিধা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ক্যানডিডিয়াসিস
ক্যান্ডিডিয়াসিসের কারণে জিহ্বায় দইয়ের মতো সাদা পুরু ছোপ পড়ে। জিহ্বার এই লক্ষণ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হওয়ারও ইঙ্গিত দেয়। অ্যান্টি ফাঙ্গালজাতীয় মলম প্রয়োগের মাধ্যমে এই অবস্থার চিকিৎসা করা যেতে পারে।
স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা
এটি এক ধরনের ক্যান্সার, যা সাধারণত মুখ, মাথা ও ঘাড়কে প্রভাবিত করে। এক্ষেত্রে জিহ্বায় সাদা বা লাল ক্ষত দেখা দিতে পারে। এ ধরনের ওরাল ক্যানসারের পেছনেও দায়ী তামাক চিবানো, ধূমপান বা দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ। এর চিকিৎসায় প্রয়োজনে সার্জারি, রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপির পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
জিহ্বার স্বাস্থ্য বজায় রাখার নিয়ম :
>>> প্রতিবার খাবার পর আপনার মুখ ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।
>>> জিহ্বার পেছনের দিক থেকে শুরু করে সামনের দিক পর্যন্ত স্ক্র্যাপার বা ক্লিনার ব্যবহার করুন। এরপরে জমে থাকা ধ্বংসাবশেষ ধুয়ে ফেলুন। বেশ কয়েকবার পুনরাবৃত্তি করুন।
>>> কিছু টুথব্রাশের মাথার পেছনে জিহ্বা ক্লিনারের অপশন থাকে সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন।
>>> সামান্য গরম পানি ও লবণ দিয়ে নিয়মিত গার্গল করলে মুখের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
>>> সুষম খাদ্য ও পর্যাপ্ত পানি গ্রহণ করুন।
>>> স্ট্রেস কমান।
সূত্র: বোল্ড স্কাই