জালালুর রহমান: মৌলভীবাজারের জুড়ীতে উপজেলার ৪ ইউনিয়নের ১২টি গ্রামে অবাধে টিলা কাটার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে জানা গেছে, অপরিকল্পিতভাবে টিলা কাটার ফলে ওই ১২ গ্রামের ২২টি ঝুঁকিপূর্ণ টিলার নিচে গড়ে ওঠা আনুমানিক ২শতাধিক বাড়িঘর ভারী বর্ষণ কিংবা ভূকম্পনে টিলা ধসে মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে জানা গেছে, উপজেলা সদর জায়ফরনগর ইউনিয়নের মনতৈল, বজিটিলা, চম্পকলতা গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে একটি ভূমিখেকো চক্র অবাধে টিলা কেটে মাটি বিক্রি করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামবাসি কর্তৃক অভিযোগ পাওয়া গেছে, চম্পকলতা গ্রামের মকরম আলীর ছেলে সুফিয়ান মিয়া, মৃত কটু মিয়ার ছেলে আব্দুল বাকী, মৃত করিম মিয়ার ছেলে আব্দুল হাসিম, জাঙ্গালিয়া গ্রামের রেনু মিয়ার মেয়ে নাছিমা বেগম, কালীনগর গ্রামে খান বাহাদুর ওয়াক্ফ এস্টেট ও সরকারি খাস জমির অন্তর্ভুক্ত উঁচু টিলাগুলো। পূর্ব জুড়ী ইউনিয়নের দুর্গাপুর, উত্তর কালাছড়া এলাকার মৃত সুরেন্দ্র রুদ্র পালের ছেলে মনোরঞ্জন রুদ্র পাল (কটকটি), দক্ষিণ বড়ধামাই (মোকামটিল্লা) গ্রামের মৃত আব্দুল হকের ছেলে জিয়াউর জিয়া ও বটই মিয়া, তৈয়াব আলীর ছেলে তেরাব আলী। গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নের উওর কুচাইথল গ্রামের ইছরাক আলীর ছেলে নূর আমিন রাসেদ, ইরাছ আলীর ছেলে তাজির আলী ও আফতার আলী (চুরকেচ), মৃত আলখাছ মিয়ার ছেলে ছালিক মিয়া (প্রবাসী), পশ্চিম কচুরগুল গ্রামের লুৎফুরের ছেলে জাবের, লাঠিটিলা, জালালপুর, জামকান্দি, পশ্চিম গোয়ালবাড়ী, সাগরনাল ইউনিয়নের শমাই, হাফিজি। প্রতিদিন এসব এলাকার বিভিন্ন টিলা থেকে প্রতি ট্রাক মাটি ২২০০ থেকে ২৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ওই চক্রের লোকজন দীর্ঘ এক যুগ ধরে কালী নগর, চম্পকলতা, হাফিজি, সাগরনালসহ বিভিন্ন টিলা কেটে গভীর গর্ত করে চুনামাটি সংগ্রহ করে পলিথিনের বস্তায় ভরে সিরামিক সামগ্রী তৈরির জন্য রাজধানী শহর ঢাকায় পাচার করে আসছে। ওই গ্রামগুলো ঘুরে দেখা গেছে, মাটি কাটার কারণে এসব ঝুঁকিপূর্ণ টিলার নিচে অপরিকল্পিতভাবে ২শতাধিক বাড়ি ঘর গড়ে উঠেছে এবং যে কোনো সময় ধসে পড়ে ধ্বংসের সম্মুখীন হতেপারে। এসব বাড়ি ঘরে বসবাসকারীদের সাথে কথা হলে তারা জানান, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তারা ভুমিহীন খাস জমি বন্দোবস্ত নিয়ে তাতে বসতবাড়ি তৈরি করেছেন। তারা আরো বলেন, বর্ষা মৌসুম। ওই সময় যে কোনো মুহুর্তে টিলা ধসে দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পাড়ে। তারা দুঃখের সাথে জানান, ১৯৯১ ও ৯২ সালে টিলা কাটার সময় কালিনগর গ্রামে মাটি চাপায় ২ শ্রমিক নিহত হন। তৎকালীন ও পরবর্তী সময়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগসহ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে মাঝে মধ্যে টিলা কাটা বন্ধ থাকলেও বর্তমানে ওই ভুমিখেকো চক্রটি আবারো মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে এবং অবাধে টিলা কেটে মাটি বিক্রি করে আসছে। জুড়ী টি এন খানম সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ ভারপ্রাপ্ত ফরহাদ আহমেদ বলেন, অবাধে টিলা কাটার ফলে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য এবং হারিয়ে যাচ্ছে বন্যপ্রাণী। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকল্পে প্রশাসন তথা সচেতন জনগোষ্ঠী এগিয়ে আসার প্রয়োজন। মৌলভীবাজার জেলার সহকারী পরিচালক মোঃ মাইদুল ইসলাম জুড়ীতে টিলা কাটার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনায় জড়িতদের নাম সংগ্রহ করেছি তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।