বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক : জুমার নামাজ সর্বসম্মতিক্রমে ফরজ। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনরা, জুমার দিন যখন তোমাদের নামাজের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও।’ (সুরা জুমা: ৯)
ফরজ নামাজ আদায় না করা কঠিন গুনাহের কাজ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নবী ও হেদায়াতপ্রাপ্তদের পর এলো এমন এক অপদার্থ বংশধর, যারা নামাজ বিনষ্ট করল এবং প্রবৃত্তির পূজারি হলো।
সুতরাং তারা ‘গাই’ নামক জাহান্নামের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে। তবে যারা এরপর তওবা করে নিয়েছে, ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে তারাই তো জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি কোনো ধরনের জুলুম করা হবে না।’ (সুরা মরিয়ম: ৫৯-৬০)
পবিত্র কোরআনের অন্য আয়াতে এসেছে, কেয়ামতের দিন জাহান্নামীদের জিজ্ঞাসা করা হবে—কেন তোমরা সাকার নামক জাহান্নামে এলে? তারা বলবে, আমরা তো নামাজি ছিলাম না এবং মিসকিনদের খাবার দিতাম না; বরং আমরা সমালোচনাকারীদের সঙ্গে সমালোচনায় নিমগ্ন থাকতাম। এমনকি আমরা প্রতিদান দিবসকে (কেয়ামত) অস্বীকার করতাম। আর এভাবেই হঠাৎ আমাদের মৃত্যু এসে গেল।’ (সুরা মুদ্দাসসির: ৩৮-৪৭)
ফরজ জুমা ত্যাগ করার বিষয়টি অন্য ফরজ নামাজের চেয়ে মারাত্মক। কেননা মুসলমানের কাছে সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন জুমাবার। সেই জুমার ফরজ নামাজ আদায় না করা নিঃসন্দেহে বড় ধরণের কুফুরি। এছাড়াও জুমা ত্যাগকারীদের অন্তর কঠিন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, যার পরিণতিতে সে নেক আমল করার সুযোগ হারিয়ে ফেলবে।
সেজন্যই রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যদি মানুষ জুমার সালাত পরিত্যাগ করা থেকে বিরত না থাকে তাহলে আল্লাহ তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেবেন, যার ফলে তারা অলস ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সুনানে দারামি: ১৫২৪)
অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যে লোক নিছক অলসতা ও গাফিলতি করে পরপর তিন জুমা ছেড়ে দেয়, আল্লাহ তাআলা তার অন্তরে মোহর মেরে দেন’ (সহিহ তিরমিজি: ৫০০; ইবনু মাজাহ: ১১২৫)। আবু ইয়ালা (রহ) বিশুদ্ধ সনদে ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি তিন জুমা লাগাতার বর্জন করল সে ইসলাম থেকে নিজেকে দূরে ঠেলে দিলো। (আবু ইয়ালা: ২৭১২, সহিহ তারগিব: ৭৩৩)
ফরজ নামাজ ত্যাগকারীর ব্যাপারে মহানবী (স.) ইরশাদ করেন, ‘কোনো ব্যক্তি এবং কুফর ও শিরকের মধ্যে ব্যবধান শুধু নামাজ না পড়া। যে নামাজ ছেড়ে দিল সে কাফের হয়ে গেল (কাফেরের মতো কাজ করল)’ (সহিহ মুসলিম: ৮২)। রাসুলুল্লাহ (স.) আরও ইরশাদ করেন, ‘আমাদের ও কাফেরদের মধ্যে ব্যবধান শুধু নামাজের। যে নামাজ ত্যাগ করল সে কাফের হয়ে গেল।’ (তিরমিজি: ২৬২১)
ইচ্ছাকৃত ফরজ নামাজ ছেড়ে দিলে মহান আল্লাহ ওই ব্যক্তির ওপর থেকে তার জিম্মাদারি তুলে নেন। হজরত মুআজ (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (স.) আমাকে দশটি নসিহত করেন, তার মধ্যে বিশেষ একটি এটাও যে, তুমি ইচ্ছাকৃত ফরজ নামাজ ত্যাগ করো না। কারণ যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ফরজ নামাজ ত্যাগ করল তার ওপর আল্লাহ তাআলার কোনো জিম্মাদারি থাকল না।’ (মুসনাদে আহমদ: ৫/২৩৮)
নামাজ পড়া মুসলিমদের একটি নিদর্শন। তাই হজরত উমর (র.) বলতেন, ‘নামাজ ত্যাগকারী নির্ঘাত কাফের’ (বায়হাকি: ১৫৫৯, ৬২৯১)। হজরত আলি (রা.) বলেন, ‘যে নামাজ পড়ে না সে কাফের’ (বায়হাকি: ৬২৯১)। হজরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) বলেন, ‘যে নামাজ পড়ে না সে মুসলমান নয়।’ (বায়হাকি: ৬২৯১)
ইমাম আহমদ এর মতানুযায়ী, অলসতা করে নামাজ বর্জনকারী কাফের এবং এটাই অগ্রগণ্য মত। কোরআন, হাদিস, সলফে সালেহিন এর বাণী ও সঠিক কিয়াসের দলিল এটাই প্রমাণ করে। (আল-শারহুল মুমতি আলা-জাদিল মুসতানকি: ২/২৬)
নামাজ পরিত্যাগকারীর ব্যাপারে কোরআন-সুন্নাহর দলিলগুলো প্রমাণ করে, বে-নামাজি ব্যক্তি ইসলাম নষ্টকারী বড় কুফরিতে লিপ্ত। এ বিষয়ে কোরআনের দলিল হচ্ছে- ‘অতএব তারা যদি তওবা করে, সালাত কায়েম করে ও জাকাত দেয়, তবে তারা তোমাদের দীনি ভাই।’ (সুরা তাওবা: ১১)
দলিলের বিশ্লেষণ হচ্ছে-আল্লাহ তাআলা মুশরিকদের মাঝে ও আমাদের মাঝে ভ্রাতৃত্ব সাব্যস্তের জন্য তিনটি শর্ত করেছেন: শিরক থেকে তওবা করা, নামাজ কায়েম করা ও জাকাত আদায় করা। যদি তারা শিরক থেকে তওবা করে কিন্তু নামাজ কায়েম না করে, জাকাত প্রদান না করে তাহলে তারা আমাদের ভাই নয়।
আর যদি তারা নামাজও কায়েম করে কিন্তু জাকাত আদায় না করে, তাহলেও তারা আমাদের ভাই নয়। তাই অধিকাংশ আলেম মনে করেন, যেহেতু পাপের কারণে দীনি ভাতৃত্ব রহিত হয় না, নামাজ না পড়া দীন থেকে সম্পূর্ণরূপে বেরিয়ে যাওয়াই প্রমাণ করে।
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, ‘অতঃপর তাদের পরে এল কিছু অপদার্থ উত্তরাধিকারী, তারা নামাজ নষ্ট করল এবং কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করল। কাজেই অচিরেই তারা ক্ষতির সম্মুখীন হবে। কিন্তু তারা নয়—যারা তাওবা করেছে, ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে। তারা তো জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর তাদের প্রতি কোনো জুলুম করা হবে না।’ (সুরা মরিয়ম: ৫৯)।
দলিলের বিশ্লেষণ হচ্ছে- নামাজ নষ্টকারী ও কুপ্রবৃত্তির অনুসারীদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘কিন্তু তারা নয়— যারা তাওবা করেছে, ঈমান এনেছে’ এতে প্রমাণ হয়—নামাজ নষ্টকালীন ও কুপ্রবৃত্তির অনুসরণকালীন অবস্থায় তারা ঈমানদার ছিল না। অর্থাৎ তওবা করে আল্লাহর পথে ফিরে না আসা পর্যন্ত নামাজ পরিত্যাগকারীরা কাফের সাব্যস্ত হবে।
আওফ বিন মালেক (রা.) এর হাদিস রয়েছে যে, নবী (স.) বলেন, ‘তোমাদের নেতাদের মধ্যে সর্বোত্তম হচ্ছে তোমরা যাদেরকে ভালোবাস এবং তারাও তোমাদেরকে ভালোবাসে, তারা তোমাদের জন্য দোয়া করে, তোমরাও তাদের জন্য দোয়া করো।
আর তোমাদের সর্বনিকৃষ্ট নেতা হচ্ছে তোমরা যাদেরকে অপছন্দ করো এবং তারাও তোমাদেরকে অপছন্দ করে, তোমরা তাদের ওপর লানত করো এবং তারাও তোমাদের ওপর লানত করে। জিজ্ঞেস করা হলো—ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমরা কি তাদের বিরুদ্ধে তরবারি ধরব না। তিনি বললেন, না; যতক্ষণ পর্যন্ত তারা নামাজ কায়েম করে।’
তবে, শরিয়তসম্মত অপারগতা থাকলে জুমার পরিবর্তে জোহার পড়ার অনুমতি আছে। কিন্তু ওজর ছাড়া জুমার নামাজ ছেড়ে দেওয়া এবং একা নামাজ আদায় করা কঠিন গুনাহ, এতে সন্দেহ নেই। এরকম ব্যক্তিতে অবশ্যই সদকা আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে।
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনোরূপ ওজর ছাড়াই জুমার সালাত বর্জন করে সে যেন এক দীনার সদকা করে। এতে সক্ষম না হলে যেন অর্ধ দিনার সাদাকা করে। (আবু দাউদ: ১০৫৩.নাসায়ি, বিনা ওজরে জুমা ছেড়ে দেওয়ার কাফফারা), ইবনু মাজাহ: ১১২৮, অধ্যায়- সলাত কায়েম, বিনা ওজরে জুমা ত্যাগ, হাকিম: ১/২৮০)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ফরজ নামাজের গুরুত্ব বোঝার তাওফিক দান করুন। জুমার ব্যাপারে কোনোরকম অলসতা না করার তাওফিক দান করুন। আমিন।