বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক: বারো দিনের মাথায় টাকার মান আরেক দফা কমালো বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ২৭ এপ্রিল মার্কিন ডলারের বিপরীতে ২৫ পয়সা কমিয়ে টাকার মান ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছিল। গতকাল আরেক দফায় ২৫ পয়সা কমিয়ে ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত গতকালই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। গতকাল একাধিক ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপক এ বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন। তবে তারা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ বেঁধে দেয়া দরে ডলার লেনদেন করতে পারছেন না তারা। করপোরেট ঢিলিংয়ের মাধ্যমে দুই থেকে তিন টাকা বেশি দরে লেনদেন করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। একই সাথে বেড়ে গেছে আকুর (এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন) দায়। গত দুই মাসে (মার্চ-এপ্রিল) আকুর দায় পরিশোধ করতে হয়েছে ২২৪ কোটি মার্কিন ডলার, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। একই সাথে সামগ্রিক আমদানি দায় অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। বছরখানেক আগেও যেখানে সামগ্রিক আমদানি দায় পরিশোধ করতে হতো সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার থেকে ৪ বিলিয়ন ডলার। এখন তা দ্বিগুণ হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসেও যেখানে আমদানি দায় পরিশোধ করতে হয়েছে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার, গত ফেব্রুয়ারিতে তা বেড়ে হয়েছে প্রায় সাড়ে ৮ বিলিয়ন ডলার। এ অস্বাভাবিক আমদানির দায় পরিশোধ করতে গিয়েই ডলারের টান পড়েছে।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, বেশির ভাগ ব্যাংকই তাদের চাহিদার চেয়ে ডলার সংগ্রহ করতে পারছে না। আগে রফতানি আয় ও রেমিট্যান্সের মাধ্যমে যে পরিমাণ ডলার আহরণ করতো তা দিয়ে আমদানি ব্যয় মেটানো যেত। কিন্তু এখন চাহিদা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় দিয়ে আমদানি ব্যয় মেটানো যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে বেশির ভাগ ব্যাংক তাদের সঙ্কট মেটাতে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে ডলার সংগ্রহ করতে না পেরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আসছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার রিজার্ভ থেকে অতিপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি ব্যয় মেটাতে ব্যাংকগুলোকে ডলার সরবরাহ করছে। তার পরও চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে প্রায় ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যাংকগুলোকে জোগান দেয়া হয়েছে। কিন্তু চাহিদা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় ডলারের মান ধরে রাখা যাচ্ছে না।
ব্যাংকারররা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকার মান কমিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু বাজারে লেনদেন হচ্ছে আরো বেশি দামে। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেও ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না। কারণ আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনেই ব্যাংকগুলো লেনদেন করছে। যেমনÑ কোনো ব্যাংকের ৫ দিন পরে প্রয়োজন হবে ১০ কোটি ডলার। তারা ৫ দিন আগেই পর্যাপ্ত ডলার রয়েছে এমন কোনো ব্যাংকের কাছ থেকে অগ্রিম কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেঁধে দেয়া মূল্যেই ডলার কিনে রাখছে। তবে সাথে ৩ থেকে ৪ শতাংশ ডলারের বিনিময় মূল্যের ওপর প্রিমিয়াম যুক্ত করছে। এতে ৮৬ টাকা ৪৫ টাকার ডলার ৪ টাকা যুক্ত হয়ে ৯০ টাকার ওপরে উঠে যাচ্ছে। এভাবেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেয়া মূল্য কার্যকর হচ্ছে না। এর পরও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে গতকাল টাকার মান আরো ২৫ পয়সা কমিয়ে প্রতি ডলারের মূল্য ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা পুনর্নির্ধারণ করেছে। কিন্তু এ বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে ব্যাংকগুলোকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে একটি ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, গতকালই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকার মান ২৫ পয়সা কমিয়ে ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা নির্ধারণ করতে বলেছে। ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মূলত ডলারের চাহিদা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার কারণেই এ সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার সরবরাহ না করলে ডলারের দাম ১০০ টাকায়ও পাওয়া যেত না। তবে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদেরকে কত দিন সাপোর্ট দিতে পারবে। কারণ আকুর দায় পরিশোধের পর গত রোববার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪১ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে গেছে; যা দুই বছরের আগের অবস্থানে চলে গেছে। বর্তমান রিজার্ভ দিয়ে সর্বোচ্চ ৫ মাসের আমদানি দায় মেটানো যাবে, যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী থাকার কথা কমপক্ষে তিন মাসের। সামনে যেহারে চাহিদা বাড়ছে, তাতে এ রিজার্ভ আরো কমে যেতে পারে। তখন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রাখতে গেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। তখন বিপত্তি দেখা দেবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সূত্র: নয়া দিগন্ত