বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক : গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় পানিতে ফেলে মারিয়া নামে তিন বছরের এক শিশুকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তার সৎমায়ের বিরুদ্ধে।
শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার গজালিয়া গ্রামের কাঠুয়ার খালের ওপর নির্মিত স্লুইচ গেট থেকে শিশুটিকে খালের পানির স্রোতে ফেলে দেন সৎ মা সোনিয়া বেগম (২৫)।
এ ঘটনায় তাকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃত সোনিয়া বেগম উপজেলার গজালিয়া গ্রামের দিনমজুর রহমত মোল্লার স্ত্রী।
জানা যায়, পাঁচ মাস আগে সন্তান প্রসব করার সময় রহমত মোল্লার প্রথম স্ত্রী রিনা বেগম মারা যান। তখন সদ্য জন্ম হওয়া শিশুসহ তিন মেয়ে রেখে যান রিনা। চার মাস আগে ওই সন্তানদের লালন-পালন ও দেখাশুনার জন্য একই গ্রামের মিজানুর সিকদারের মেয়ে সোনিয়াকে বিয়ে করেন রহমত মোল্লা। সদ্য জন্ম নেওয়া ছোট মেয়েটিকে এক আত্মীয়ের কাছে লালন-পালনের জন্য দিলে সে মারা যায়। দুই মেয়েকে নিয়ে চলতে থাকে সংসার।
দিনমজুর রহমত মোল্লা প্রতিদিনের মতো শুক্রবার ভোরে জাল থেকে মাছ ছাড়িয়ে বাজারে বিক্রি করতে যান। দুপুরে বাড়ি ফিরে দুই মেয়েকে খোঁজাখুঁজি করলে দুই মেয়ের মধ্যে এক মেয়ে মারিয়াকে পাওয়া যাচ্ছিলে না। দ্বিতীয় স্ত্রী সোনিয়াকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন- জানেন না। একপর্যায়ে স্বামীর তোপের মুখে পড়লে সোনিয়া বাড়ি থেকে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন।
তখন রহমত মোল্লার সন্দেহ হলে তিনি জোরে চিৎকার করেন। এলাকাবাসী ও স্বজনরা তাকে ঘিরে ধরে ফেলেন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ এসে অভিযুক্ত সৎ মা সোনিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি পুলিশের কাছে শিশুটিকে পানিতে ফেলে দেওয়ার কথা স্বীকার করেন।
শিশুটির বাবা রহমত মোল্লা বলেন, ৫ মাস আগে বাচ্চা প্রসব হওয়ার সময় আমার প্রথম স্ত্রী রিনা বেগম মারা যায়। ৪ মাস আগে ওই সন্তানদের লালন-পালন ও দেখাশুনার জন্য একই গ্রামের সোনিয়াকে বিয়ে করি। কিন্তু বিয়ের পর স্ত্রী সোনিয়া তার কথা রাখেনি। তখন ছোট মেয়েটি এক আত্মীয়ের কাছে দিয়ে দিলে সে মারা যায়। পরে সানজিদা ও মারিয়াকে নিয়ে কাছে রাখি। কিন্তু দ্বিতীয় স্ত্রী ওদের মেনে নিতে পারছিল না। ওদের সঙ্গে সব সময় খারাপ ব্যবহার করত। রাতে দেরি করে খাবার রান্না করত, যেন মেয়ে দুটি ঘুমিয়ে যায়। মাঝে মধ্যে ওদের নির্যাতনও করত।
এক প্রতিবেশী বলেন, রহমতের চিৎকার শুনে দৌড়ে এসে দেখি রহমতের স্ত্রী সোনিয়া পালাচ্ছে। এ সময় তাকে আটক করে জিজ্ঞেস করলে তার কথায় সন্দেহ হয়। আমরা পুলিশে খবর দিলে পুলিশ এসে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে স্বীকার করে। পরে ডুবুরি দল এসে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে।
টুঙ্গিপাড়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল মনসুর বলেন, অভিযুক্ত সোনিয়াকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন তিনি। পরে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে খুলনা থেকে আসা ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে।
ওসি বলেন, সোনিয়ার স্বামী স্ত্রীর চেয়ে বাচ্চাদের বেশি খেয়াল করতেন। এতে স্ত্রী ঈর্ষান্বিত হয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমাদের জানিয়েছেন।