ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১। এই দিন ভোরে নতুন সূর্য ওঠে ঠাকুরগাঁওয়ের আকাশে, উদিত হয় লাল সবুজ পতাকা।জয় বাংলা ধ্বনিতে উলসিত হয়ে ওঠে ঠাকুরগাঁও। ৮ মাসের বেশি সময় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর আজকের দিনে মুক্তিযোদ্ধারা ঠাকুরগাঁওয়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।
এ ব্যাপারে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,ঠাকুরগাঁওয়ে মুক্তি বাহিনীর সাথে পাকিস্তানী বাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হয় জুলাই মাসের প্রথম দিকে। প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত গেরিলারা হানাদার বাহিনীর ঘাটির উপর আক্রমণ চালিয়ে ব্যাপক ক্ষতি করে। বেশ কিছু ব্রিজ ও কালভার্ট উড়িয়ে দেয় তারা। দালাল রাজাকারদের বাড়ি ও ঘাটিতে হামলা চালায়। নভেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে মুক্তিযোদ্ধারা ব্যাপক অভিযান চালায়।
মুক্তি বাহিনীর যৌথ অভিযানে পঞ্চগড় মুক্তিবাহিনীর দখলে আসলে পাকবাহিনীর মনোবল ভেঙ্গে যায়। এরপর ভারতীয় মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর যৌথ আক্রমণ শুরু হয় ঠাকুরগাঁও অঞ্চলে। মিত্রবাহিনী যাতে ঠাকুরগাঁও দখল করতে না পারে সেজন্য পাকসেনারা ৩০ নভেম্বর ভুল্লী ব্রিজ উড়িয়ে দেয়। তারা সালন্দর এলাকায় সর্বত্র বিশেষ করে ইক্ষু খামারে মাইন পুতে রাখে। মিত্রবাহিনী ভুল্লী ব্রিজ সংস্কার করে ট্যাংক পারাপারের ব্যবস্থা করে।
১ ডিসেম্বর ভুল্লী ব্রিজ পার হলেও মিত্রবাহিনী যত্রতত্র মাইন থাকার কারণে ঠাকুরগাঁও শহরে ঢুকতে পারেনি। ওই সময় শত্রুদের মাইনে দুটি ট্যাংক ধ্বংস হয়ে যায়। এরপর এফ এফ বাহিনীর কমান্ডার মাহাবুব আলমের নেতৃত্বে মাইন অপসারণ করে মিত্রবাহিনী ঠাকুরগাঁওয়ের দিকে অগ্রসর হয়। ২ ডিসেম্বর সারারাত প্রচন্ড গোলাগুলির পর শত্রুবাহিনী ঠাকুরগাঁও থেকে পিছু হটে সৈয়দপুরে আশ্রয় নেয়। ৩ ডিসেম্বর ভোর রাতে শত্রুমুক্ত হয় ঠাকুরগাঁও।
দিনটি উদযাপনে বেশ কয়েক বছর ধরে কর্মসূচি পালন করে আসছে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। মুক্তি শোভাযাত্রা, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণমূলক অনুষ্ঠান, আলোকচিত্র প্রদর্শন, নাটক, সম্মাননাসহ দিনব্যাপী বেশ কিছু অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে এবারও। উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ঠাকুরগাঁও সংসদের সভাপতি সেতারা বেগম এসব তথ্য জানান।
ঠাকুরগাঁওয়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ মুক্তিযুদ্ধ কেবল একটা শহর, জেলা ও দেশ মুক্ত হওয়ার ব্যাপার নয়, এটা বাঙ্গালির শ্বাশ্বত মুক্তির চেতনা, যা বয়ে যাবে ইতিহাসের পথ ধরে এ জাতির ভবিষ্যতের সামগ্রিক অগ্রগতির পথ ধরে।
এ জেলার যুদ্ধাপরাধীদের চিহ্নিত করে তাদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন এ জেলায় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা বর্তমানে শয্যাশায়ী সাবেক এমপি শহীদুল্লাহ্ শহীদ।