স্টাফ রিপোর্টার : দেবিদ্বারে স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা অমান্য করে প্রসূতীর সিজারের পূর্বে অ্যানেস্থেসিওলজিষ্টের অনুপস্থিতিতে অ্যানেস্থেসিয়া দিল গাইনী চিকিৎসক ডাঃ নীলা পারভীন নিজেই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনানুযায়ী একজন রোগির অপারেশনের জন্য একজন বিশেষজ্ঞ সার্জন একজন অ্যানেস্থেসিওলজিষ্ট, একজন এমবিবিএস চিকিৎসকসহ অন্যান্য জনবল আবশ্যক। এসব জনবলের অনুপস্থিতিতে কোনভাবেই অস্ত্রোপচার করতে পারবেনা সার্জন। অথচ নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে কুমিল্লার দেবিদ্বারে অপারেশন থিয়েটারে প্রসূতি নারীকে সিজারের সময় অ্যানেস্থেসিওলজিষ্টের অনুপস্থিতিতে নিজেই অ্যানেস্থেসিয়া দিয়ে প্রসূতীর সিজারিং করার অবিযোগ উঠেছে। এই ঘটনা নিয়ে দেবিদ্বারে হাসপাতাল পাড়ায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটে রবিবার (১০মার্চ) বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে উপজেলা সদরের ‘দেবিদ্বার টাওয়ার হাসপাতালে। এঘটনায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিকেল সাড়ে ৫টায় ওই হাসপাতালে গিয়ে হাজির হন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আলী এহসান বিজয় ও গনমাধ্যম কর্মীরা।
এসময় প্রসূতি ওই নারী আলিফা আক্তার(১৯)’কে জিজ্ঞাস করলে তিনি জানান, তাকে যিনি সিজারিয়ান অপারেশন করিয়েছেন তিনিই ডা. নীলা পারভীন তাকে তার পেছন দিক দিয়ে অ্যানেস্থেসিয়া দিয়েছেন। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমম্পেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শাকিল আহমেদ, অফিস সহকারী মোঃ রফিকুল ইসলাম। দেবিদ্বার টাওয়ার হাসপাতালের পরিচালনা কমিটির সদস্য আবুল খায়ের, অভিযুক্ত ডা. নীলা পারভীনসহ আরো অনেকে।
জানা গেছে, ব্রাক্ষনপাড়া উপজেলার রানীগাছ গ্রামের বোরহান উদ্দিনের স্ত্রী প্রসূতী আলিফা আক্তার(১৯)কে নিয়ে রোববার বিকেলে ‘দেবিদ্বার টাওয়ার হাসপাতালে’ নিয়ে আসেন শ্বশুর আব্দুল কাদির। পরে তার সিজারিয়ান অপারেশন সম্পন্ন হয় এবং এক নবজাতকের জন্ম হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক চিকিৎসক জানান, এর আগে দেবিদ্বার স্বাস্থ্য উপজেলা কমপ্লেক্সে চাকুরী করাকালীন সময়ে সরকারী দায়িত্ব অবহেলা করে সারা দিন বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতাল এবং ব্যক্তিগত চেম্বারে সময় দেয়াসহ নানান অনিয়মের অভিযোগে ডাঃ নীলা পারভীনকে বদলী করা হয়। ওই বদলীর আদেশে তাকে ব্রাক্ষনপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পদায়ন করা হয়েছে। ব্রাক্ষন পাড়া কর্মস্থলেও বেতন ভাতাদী উত্তোলন ছাড়া তিনি কর্মস্থলে দায়িত্বপালন না করারও অভিযোগ রয়েছে। অধিক অর্থ উপার্জনের লোভে দেবিদ্বারে নিয়মবহির্ভূত প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে সিজারিয়ান অপারেশন ও চিকিৎসা প্রদান করে আসছেন, যা অনেকেই অবগত আছেন।
এবিষয়ে দেবিদ্বার টাওয়ার হাসপাতালের অ্যানেস্থেসিওলজিষ্ট ডা. সাহিদ হাসান সৌরভ বলেন, আমি বিকেল ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার মধ্যে চারটি ওটি করে বের হয়েছি। পরে আর কোন অপারেশন হয়েছে কি না তা বলতে পারব না। আর অ্যানেস্থেসিওলজিষ্ট রোগিকে অজ্ঞান করে চলে যায়না। রোগির অপারেশনের শেষমূহুর্তে রোগির জ্ঞান আসাপর্যন্ত নজরধারিতে থাকতে হয়।
তবে অভিযুক্ত ডা. নীলা পারভীন বলছেন, এই রোগি সিজারের অ্যানেস্থেসিয় ডা. সৌরভ দিয়েছেন। আমি রোগির পিছন দিকে থাকায় হয়তো রোগী ভাবছে আমি অ্যানেস্থেসিয় দিয়েছি।
এ ব্যাপারে ‘দেবিদ্বার টাওয়ার হাসপাতালে’ পরিচালক আবুল খায়ের জানান, অ্যানেস্থেসিওলজিষ্ট ডাঃ সৌরভ অ্যানেস্থেশিয়া দিয়ে চলে যান পরে ডাঃ নীলা পারভীন সিজার করিয়েছেন।
দেবিদ্বার প্রাইভেট হাসপাতাল মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক মো. ময়নাল হোসেন জানান, ঘটনা শোনেছি, সত্যমিথ্যা এখনো তদন্ত করে দেখার সুযোগ হয়নি। ঘটনা সত্যি হলে বিষয়টি দুঃখজনক। একজন চিকিৎসক হিসেবে ১৫ শত টাকার লোভে বাঁচা-মরার মতো এতবড় ঝুকিপূর্ণ কাজ করা ঠিক হয়নি।
এবিষয়ে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আলী এহসান বিজয় বলেন, ভুল অ্যানেস্থেসিয়ার কারনে একটা মানুষের জীবন বিপন্ন হতে পারে। দেবিদ্বার টাওয়ার হাসপাতালে এক সিজারিয়ান অপারেশনে অ্যানেস্থেসিওলজিষ্টের অনুপস্থিতিতে ডা. নীলা পারভীন নিজেই অ্যানেস্থেসিয়া দিয়েছেন এমন একটি খবরে হাসপাতালে গিয়ে রুগির সাথে কথা বলে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে, যা নিয়ম বহির্ভূত। এবিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।