সরকার পতনের একদফা দাবিতে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ ডেকেছে বিএনপি। এ দিন রাজধানীর গুলিস্তানে মহাসমাবেশ করে রাজপথ দখলের পাল্টা কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও। দুই দলের এই সমাবেশের ঘোষণা রাজনীতির মাঠে ফের উত্তেজনা তৈরি করেছে। এই উত্তাপে ঘি ঢালছে গুলিস্তানের পাশে মতিঝিলে স্বাধীনতাবিরোধীদের সংগঠন জামায়াত মহাসমাবেশ ডাকায়। একই দিনে ঢাকায় তিনটি দলের সমাবেশ থাকায় নিরাপত্তা শঙ্কায় পড়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
বিএনপি ও আওয়ামী লীগ মহাসমাবেশের অনুমতি পেতে পারে বলে জানিয়েছে ডিএমপির একটি সূত্র। তবে শেষ পর্যন্ত জামায়াতের সমাবেশের অনুমতি না পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলেও সূত্র জানায়।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির একজন সদস্য ও চট্টগ্রামের নেতা নিউজ টোয়েন্টিফোরকে বলেন, ‘আমার এলাকা থেকে গেল দুই দিনে দেড় হাজার নেতাকর্মী ঢাকায় এসেছেন। বাকিরা বুধবারের মধ্যে ঢাকায় ঢুকবে। সবাইকে নিজেদের ব্যবস্থাপনায় ঢাকায় থাকার অনুরোধ করেছি। সবাই বাস্তবতার আলোকে তা মেনেও নিয়েছেন। ’
নেত্রকোনা-৩ (কেন্দুয়া-আটপাড়া) থেকে বিএনপির সম্ভ্যাব প্রার্থী বিএনপির পেশাজীবী সংগঠন অ্যাবের সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মো. মোস্তাফা ই জামান সেলিম নিউজ টোয়েন্টিফোরকে বলেন, ‘যতই বাধা বিপত্তি আসুক, যেকোনোমূল্যে আমার কেন্দুয়া-আটপাড়া থেকে দুই হাজার নেতাকর্মী নিয়ে মহাসমাবেশে যোগ দেবো। অনেকেই এরই মধ্যে ঢাকায় এসেছেনও। এই লড়াইয়ে আমরা অবশ্যই জিতবো, কারণ জনগণ সাড়া দিচ্ছে। ’ একইভাবে রাজশাহী, খুলনা অঞ্চল থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এভাবে প্রায় প্রতিটি জেলাতেই প্রস্তুতি সভা, মতবিনিময় সভা, ঘরোয়া বৈঠক ও গণসংযোগ চলছে। সবগুলো জেলা থেকেই দলীয় নেতাকর্মীর পাশাপাশি সাধারণ মানুষ ঢাকার মহাসমাবেশে অংশ নেবেন। দূরের জেলাগুলোর নেতাকর্মীদের আগেভাগেই ট্রেন ও বাসে করে আসার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি গ্রেপ্তার এড়াতে সর্বোচ্চ সর্তক থাকারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘মহাসমাবেশে সরকারি বাহিনী বা দলের পক্ষ থেকে ন্যূনতম উসকানি দেওয়া হলে পাল্টা জবাব দেওয়ার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া আছে। ’
বিএনপি নেতারা জানান, মহাসমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করে ৩০ অক্টোবর থেকে লাগাতার কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ নিয়ে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের দফায় দফায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মিটিং হয়েছে। সোমবার (২৪ অক্টোবর) গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের সঙ্গেও এ নিয়ে বৈঠক করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সূত্র বলছে, শনিবারের মহাসমাবেশ থেকে সংবিধান সংশোধনের দাবিতে আইন মন্ত্রণালয় অভিমুখে ৩০ অক্টোবর ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এরপর ঢাকায় দুই মহানগর থেকে একযোগে পদযাত্রা, ইসি ঘেরাও ও সবশেষ অবস্থান কর্মসূচি দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে।
গণতন্ত্র মঞ্চের সাইফুল হক জানান, ঘেরাও, অবস্থান কর্মসূচির দিকে তাদের মনোযোগ বেশি।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন নিউজ টোয়েন্টিফোরকে বলেন, ‘আমাদের সব থানা-জেলা-মহানগর-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নেতাকর্মীদের ঢাকায় আনা হচ্ছে। আমরা ১ লাখ লোক আনার টার্গেট করেছি। বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক বকুল ভাই (রকিবুল ইসলাম বকুল) মতবিনিময় করেছেন ছাত্রদলের সঙ্গে। দিকনির্দেশনা দিয়েছেন শান্তিপূর্ণ থেকে কর্মসূচি সফল করার। ’
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে আমরা সমাবেশটা করতে চাই। আশা করি, সরকার পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নেবে।
বিএনপি নেতারা জানান, তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত আর ঢিলেঢালা কর্মসূচিতে যাবে না বিএনপি। আন্দোলনের শেষ ধরে নিয়েই এবার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে চান তারা। আর ব্যাকফুটে খেলতে চান না। কারণ এরই মধ্যে নাশকতার মামলায় অনেক নেতাকর্মীর সাজা হয়েছে, বাকিদের মামলাও শেষের দিকে। আর তাতে আতঙ্ক বাড়ছে বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে। তাদের বিশ্বাস লাগাতার কয়েকদিন কঠোর আন্দোলন করা সম্ভব হলে, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিএনপির অনুকূলে আসবে।
সরকার পতনের একদফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা শরিক গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, গণফোরাম-পিপলস পার্টি, এলডিপি, এনডিএম, লেবার পার্টিসহ বিভিন্ন সমমনা দলগুলো আগামী ২৮ অক্টোবর আলাদাভাবে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে। সমমনা দলগুলো ইতোমধ্যে নিজেদের মধ্যে প্রস্তুতি সভা করেছে। আগামী শনিবার তারাও রাজপথে বড় শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।