বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক: মৃত্যুর দেড় বছর পর জানা গেল চট্টগ্রামের হালিশহর থানার একটি ভাড়া বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাত নারীর লাশের পরিচয়। তিনি চট্টগ্রামের দক্ষিণ পতেঙ্গার মনির বাড়ির মোহাম্মদ হোসেনের মেয়ে লাকী আক্তার পিংকি ওরফে আফসানা (২৫)। বিয়ের ছয় মাসের মাথায় স্বামী সোহাইল আহমেদ নির্মম নির্যাতন করে তাকে খুন করে। খুনে সহযোগিতা করে সোহাইলের তৃতীয় স্ত্রী নাহিদা আকতার। পুলিশ দুজনকে গ্রেফতার করেছে।
পুলিশ জানায়, ২০২০ সালের ২১ জুলাই হালিশহর থানার রহমানবাগ আবাসিক এলাকার একটি বহুতল ভবনের চতুর্থ তলার তালাবদ্ধ কক্ষ থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। পুলিশ তালা ভেঙে গলায় কালো রংয়ের পায়জামা মোড়ানো অবস্থায় অজ্ঞাত এক নারীর লাশ উদ্ধার করে। লাশের মুখমণ্ডল ছিল বিকৃত। এ ঘটনায় ওই ভবনের কেয়ারটেকার মো. নুর নবী বাদী হয়ে হালিশহর থানায় হত্যা মামলা করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, ঘটনার কিছুদিন আগে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে দুজন এ বাসা ভাড়া নিয়েছিল। এরমধ্যে স্ত্রী পরিচয় দেয়া নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পর থেকে পলাতক ছিল স্বামী পরিচয় দেওয়া ওই পুরুষ লোকটি। বাসা ভাড়া নেয়ার সময় পুরুষ লোকটি নিজেকে রেজাউল করিম পরিচয় দিয়ে যে এনআইডি কার্ড দিয়েছিল সেটি ছিল অস্পষ্ট। পরে পুলিশ শনাক্ত করে এনআইডি কার্ডটি রেজাউল করিমের নয়, এটি সোহাইল আহমেদ নামে এক ব্যক্তির।
হালিশহর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আল মামুন বলেন, তদন্তকালে সোহাইল গ্রেফতার এড়াতে বিভিন্ন স্থান পরিবর্তন করে। রোববার রাতে বাগেরহাট জেলার মোংলা থানার মিঠাখালী গ্রামে দ্বিতীয় স্ত্রীর বাসা থেকে সোহাইলকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যে আফসানাকে খুনের সহযোগী হিসাবে তার তৃতীয় স্ত্রী নাহিদা আক্তারকে (২২) সোমবার নগরীর পতেঙ্গা থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দুজনকে মঙ্গলবার আদালতে সোপর্দ করা হয়।
গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সোহাইল আহমেদ পুলিশকে জানায়, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে পোশাক কারখানার শ্রমিক লাকী আক্তার পিংকি ওরফে আফসানাকে বিয়ে করে সোহাইল। এর আগে আরও তিনটি বিয়ে করার তথ্য গোপন রেখে আফসানাকে বিয়ে করে সে। সোহাইলের প্রথম স্ত্রী পারভিন, দ্বিতীয় নাসিফা ও তৃতীয় ছিল নাহিদা আক্তার। নাহিদা আক্তারকে ২০১৬ সালে বিয়ে করে সে। জিজ্ঞাসাবাদে সোহাইল পুলিশকে আরও বলে, গত বছরের ১৬ জুলাই সোহাইল ও আফসানা বাসায় থাকাকালীন তার তৃতীয় স্ত্রী নাহিদা বাসায় আসে। বিয়ের পর থেকে আফসানার চলাফেরা নিয়ে সন্দেহ করত সোহাইল। এ নিয়ে তাদের মধ্যে একাধিকবার ঝগড়াও হয়। ওইদিন একই বিষয় নিয়ে ঝগড়ার সময় মারধরের একপর্যায়ে আফসানা অজ্ঞান হয়ে পড়ে। তার পরনে থাকা কাপড়-চোপড় খুলে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আফসানার মৃত্যু নিশ্চিত করে সোহাইল। মৃতদেহ বিছানার চাদর দিয়ে পেঁচিয়ে রান্নাঘরে রেখে দেয়।
আফসানার মৃত্যুর ঘটনাটি নাহিদার চোখের সামনে ঘটলেও নাহিদা প্রতিবাদ না করে সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। সোহাইল চট্টগ্রাম ছেড়ে বাগেরহাটে তার দ্বিতীয় স্ত্রী নাছিমার বাড়িতে গিয়ে আত্মগোপন করে।