বরিশাল প্রতিনিধি ॥ পরপর দুই বছর ‘মৎস্য শিকার প্রতিযোগিতা’ এর নামে বরিশালে লোভনীয় অফারের ফাঁদে পড়ছে দক্ষিণাঞ্চলের মৎস্য শিকারিরা। সংঘবদ্ধ একটি প্রতারক চক্র ‘সৃজনশীল’ ফন্দি ফিকির এর মাধ্যমে মৎস্য শিকারিদের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। তবে এ বছর ‘নৌ-বিহার ও মিলনমেলা-২০২৫’ এর নামে ৬ ও ৭ ফেব্রুয়ারি রয়েছে জুয়া সহ আকর্ষণীয় অফার। গত দুই বছর ‘বরিশাল ফিশিং জোন’ নামক প্রতিষ্ঠানটির আয়োজনে ‘বাকেরগঞ্জ আউলিয়াপুর বৈরম খাঁ দিঘি’ তে কয়েক হাজার মৎস্য শিকারি অংশগ্রহণ করে। প্রোগ্রামে লাখ লাখ টাকা আয়ের মধ্যে বিজয়ীদের দেয়া হয় লাখ লাখ টাকা পুরস্কার। কিন্তু চলমান বছরে ‘সুন্দরবন করমজল’ নামক স্থানে জুয়াসহ আকর্ষণীয় অফারের উদ্যোগ নিয়েছে ‘বরিশাল এ্যাংলার্স ক্লাব’। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর আস্থাভাজন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা মো. হামিদুর রহমান অনতুর নেতৃত্বে পরিচালিত হবে সকল কার্যক্রম এবং অংশগ্রহণ করবে মৎস্য শিকারী, জুয়ারিসহ প্রায় ৬ শতাধিক মানুষ। প্রোমোটার হলেন মো. জিকু খান।
জানা গেছে, শখের বশে বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করা মানুষের সংখ্যা আবেগ বসত কারণে দিন দিন বেড়েই চলেছে। আর আ.লীগ শাসনামলে দক্ষিণাঞ্চলের মৎস্য শিকারিদের মধ্যে প্রতিযোগিতার নামে লটারি ও জুয়া প্রবেশ করিয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হামিদুর রহমান অনতু। বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে খুলে বসেছে সংঘবদ্ধ একটি সিন্ডিকেট চক্র। প্রতিযোগিতার নামে জুয়ারি, মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারী সহ সরকারি বেসরকারি নানা দপ্তরের সৎ-অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে সাজিয়েছে ভাল-মন্দ একাধিক সিন্ডিকেট। আ.লীগ শাসনামলে ‘মৎস্য শিকার প্রতিযোগিতা’ এর নামে চালু করা সিস্টেমটি এখনও ফ্যাসিবাদী সরকারের সমর্থকদের সহযোগিতায় পরিচালনা করে যাচ্ছে। ‘বাকেরগঞ্জ আউলিয়াপুর বৈরম খাঁ দিঘি’ তে অনুষ্ঠিত হওয়া মাছ শিকারের নামে লটারি ও জুয়া পুরস্কারের বিষয়টি খবর প্রকাশ পায় একটি ইলেকট্রনিক মিডিয়ায়।
চলমান বছরে বরিশালে এ অনুষ্ঠানটি না করতে পেরে কূটকৌশলে পালনের উদ্যোগ নিয়েছে খুলনা বাগেরহাট জেলার মংলা উপজেলার করমজল পর্যটন কেন্দ্রে। অনুষ্ঠানের মধ্য রয়েছে- হাউজি খেলা, ব্যান্ড শো ও ড্যান্স শো, বর্ণিল আতশবাজি, র্যাফেল ড্র (পুরস্কার ৩০ টি) ও ১ ঘণ্টার মৎস্য শিকার প্রতিযোগিতা। হাউজি খেলাটি নিয়ে অনেকের মাঝে আলোচনার পাশাপাশি সমালোচনার ঝড় বইছে। বৃহস্পতি রাত ৮ টায় বরিশাল লঞ্চ ঘাট এলাকার পার্শ্ববর্তী এলাকা কেডিসি থেকে একটি লঞ্চ যোগে যাত্রা শুরু করেছে। জনপ্রতি টিকেট মূল্য ১৫শ টাকা, কেবিন সিঙ্গেল ২ হাজার টাকা, ডাবল ৪ হাজার, ফ্যামিলি ৮হাজার ও ভি.আই.পি কেবিন ২৫হাজার টাকা। টিকিট সংগ্রহের স্থান ছিল- বরিশাল নগরীর চকেরপুল মেসার্স অনয় এন্টারপ্রাইজ, নথুল্লাবাদ এলাকায় মেসার্স এ.এস এন্টারপ্রাইজ, রুপাতলী এলাকায় মেসার্স তোহা এন্টারপ্রাইজ ও সদর রোড ভাই ভাই বড়শি ঘর। হটলাইন নম্বর হল- ০১৭৯০-০৬৫৭৫৭, ০১৭৩০-১৬০৯৯৬, ০১৭৭৯-৬৮৮৩৩৬, ০১৭২৭-৯৫১৭১৯ ।
বিশ্বস্ত এক সূত্র জানায়, ‘নৌ-বিহার ও মিলনমেলায়’ পরিবার ছাড়াও বন্ধু-বান্ধবী যেতে পারবে। লঞ্চে আনন্দ বিনোদনের জন্য থাকবে সকল সুযোগ সুবিধা। জুয়ারীরা লঞ্চে বসেই মেতে উঠবে লাখ লাখ টাকার জুয়া খেলা সহ থাকবে মাদক সেবীদের সু-ব্যবস্থা। তবে মৎস্য শিকারিদের বুঝানো হচ্ছে- যে সকল প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বাঁধা দিবে তাদের ম্যানেজ করেই সম্পন্ন করা হয়েছে সকল আয়োজন। যে কারণে কেউ ভ্রমণে, কেউ মাদক ক্রয়-বিক্রয় ও সেবনে, কেউ জুয়া খেলায় ও কেউ মাছ শিকারে আকৃষ্ট হয়ে অংশগ্রহণ করছে। আর হাউজি খেলা, ব্যান্ড শো ও ড্যান্স শো, বর্ণিল আতশবাজি নিষিদ্ধ থাকার পরও সুন্দরবন এলাকায় এ সব পালনের উদ্যাগ নিয়েছে।
সূত্রটি আরো নিশ্চিত করে বলছে, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান পরিচালনা করে তথ্য যাচাই বাছাই করলে হাতেনাতে প্রমাণ মিলবে। আর প্রশাসনের কোন অনুমতি না নিয়েই এমন আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে ‘বরিশাল এ্যাংলার্স ক্লাব’। ইতোমধ্যে বরিশাল পুলিশ কমিশনারকে অবগত করা হলে তিনি বিষয়টি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য গোয়েন্দা সংস্থাকে দ্বায়িত্ব দেয়া হয়েছিল বলে জানান নির্ভরযোগ্য একটি সুত্র। কিন্তু ঐ সংস্থাটি অনেকটা রহস্যজনক কারণে নিরব রয়েছেন বলে জানান সূত্রটি।
বরিশাল এ্যাংলার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. হামিদুর রহমান অনতু বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে ভুল তথ্য ছড়াছড়ি হয়েছে। পিকনিকের আনন্দ উল্লাসের জন্য অতি উৎসাহ হয়ে কয়েকজন জুয়া খেলা সহ নানা তথ্য লিখে পোস্টার করেছিল করেছিল। পিকনিকে তো একটু আনন্দ উল্লাস থাকেই। অনেকে বিষয়টি মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছে।
বরিশাল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, অনুমতি দেয়া নেয়া তো দূরের কথা- বিষয়টি সম্পর্কে কিছুই জানেন না।
বাগেরহাট জেলা প্রশাসক আহমেদ কামরুল হাসান বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে তাকে কেউ কিছু জানেন না তিনি।
বাগেরহাট জেলার পুলিশ সুপার মো. তৌহিদুল আরিফ বলেন, বিষয়টি দেখবেন খুলনার জেলা পুলিশ।
খুলনা জেলার পুলিশ সুপার টি, এম, মোশাররফ হোসেন বলেন, ঘটনা শুনে বিস্তারিত তথ্য চান তিনি।