এস,কে তালুকদার (দাউদ কান্দি) কুমিল্লা : দুর্নীতির মহা উৎসবে মেতে উঠেছেন কুমিল্লার দাউদকান্দি মদিনাতুল উলুম কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাও.নজরুল ইসলাম। মাদ্রাসায় যোগদানের পর থেকেই তিনি একক আধিপত্য বিস্তার করেছেন।
অনুগত শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির লোকদের দিয়ে গড়ে তোলেছেন শক্তিশালী সিন্ডিকেট। একের পর এক মনগড়া সিদ্ধান্ত, অদূরদর্শিতা ও নানা অনিয়মের কারণে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচিত-সমালোচিত হয়েছেন তিনি। শিক্ষার মানোন্নয়নের চেয়ে নিজের আখের ঘুচাতে ব্যস্থ হয়ে পড়েন অধ্যক্ষ মাও. নজরুল ইসলাম
সাবেক ও বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা জানান, উপজেলা প্রশাসন নিয়ন্ত্রিত হলেও এই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মাও. নজরুল ইসলাম -ই যেন শেষ কথা।
নিয়োগ বাণিজ্য, রসিদ ছাড়াই অর্থ আদায়, মাদারাসার শিক্ষার্থীদের বেতন,পরীক্ষার ফি,মাকর্শীট,প্রশংসাপত্র ফি,বোর্ড পরীক্ষার কেন্দ্র ফি, পাবলিক পরীক্ষার সমস্ত আয়, কেন্দ্র পরীক্ষার নামে প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষায় ২০-২৫ হাজার টাকা অর্থ্যা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায়ের টাকা আত্মসাৎ।
মাদরাসার টিনের বেড়া টেন্ডার বিহীন বিক্রি, মাদরাসার ফান্ডের থেকে অধ্যক্ষের সন্তানের উচ্চ শিক্ষায় (অষ্টেলিয়া ) পড়ানোর অভিযোগ, উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ, মাদ্রাসার নিজস্ব সম্পদ ব্যক্তিগত চুক্তি দিয়ে নিজের পকেট ভর্তি করা,বেতন খুলে দেয়ার কথা বলে টাকা আত্মসাৎ, শিক্ষকদের বেতনের অংশে টাকা হাতানোসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
অধ্যক্ষের এ দুর্নীতি-অনিয়ম রোধে যেন কোন দায় নেই মাদ্রাসা পরিচালনা পরিষদসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। মাদরাসার জন্য হাই ও লো বেঞ্চ তৈরি করার নামে অগ্রণী ব্যাংক থেকে ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ, মাদরসার কামিল অনুমোদনের নাম করে স্কীলপ্রাপ্ত শিক্ষকদের ব্যয়ে ২৫ হাজার টাকা উত্তোলন।
২০১৯ সালে মাদরসার রেজুলেশনে ভুয়া ভাউচার তৈরি করে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও আপ্যায়ন বাবদ ২লক্ষ ৫০ হাজার টাকা , এবং ২০১৪সালে ১ লক্ষ ৫৪ হাজার ৪শত ৮৫ টাকা ভূয়া খরচের ভাউচার দেখিয়ে আত্মসাৎ এবং ২০২৪ সালের ফেব্রয়ারি ৫ তারিখের ১২০ জনের উপস্থিতে, অভিভাবকের সমাবেশের খরচ ৯০ হাজার টাকা ভুয়া ভাউচার দেখানোসহ ২০২৩ এর রেজুলেশন খাতায় আপ্যায়ন, টেবিল মেরামত ও অন্যান্য খরচে দেখানো হয়েছিলো ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকার ভুয়া ভাউচার করে অর্থ আত্মসাৎ।
২০১৬ সালের পূর্ব পর্যন্ত মাদরসার ফান্ড থেকে প্রতিমাসে শিক্ষকদের দেয়া ৩৫ হাজার টাকার হিসেবে ৮ বছরে ৩৩ লক্ষ ৬০ টাকার অর্থ আত্মসাৎতের অভিযোগ করা হয়।
পূর্বে এই বিষয়ে অভিভাবক ও ছাত্ররা একাধিকবার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছিলেন বলে জানা যায়।
নির্বাহী কর্মকর্তারা পূর্বে এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশনা দিলেও অজ্ঞাত কারণে মাসের পর মাস পার হলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ।
নিয়োগ বাণিজ্য ও স্বজনপ্রীতিকরণ অভিযোগ রয়েছে, এই প্রতিষ্ঠানে যোগদানের পরই অধ্যক্ষ মাও নজরুল ইসলাম মোটা অংকের বিনিময়ে তাঁর নিজ এলাকার পরিচিত ব্যক্তিদের নিরাপত্তা কর্মী,
আয়া ও হিসাব সহকারী পদে নিয়োগ দিয়েছেন অথচ যদিও সেই পোস্টগুলোতে নিয়োগ দেয়ার কথা ছিল স্থানীয় আশেপাশের লোকজনের।
জানা যায়, তৎকালীন এই তিন পদে প্রায় লক্ষাধিক টাকারও বেশি নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন তিনি।
রসিদ ছাড়াই অর্থ আদায় একাধিক শিক্ষক ও অভিভাবক অভিযোগ করেন, প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন পরীক্ষা, রেজিষ্ট্রেশন ও বিবিধ খরচের নামে রসিদ ছাড়াই টাকা উঠিয়ে আত্মসাৎ করা হয়।
<span;>মাদরাসার নাম করে একটি সাদা কাগজে এসব ফি বাবদ টাকা উঠিয়ে নেন অধ্যক্ষ। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের সনদ দেওয়ার সময় যে ফি নেওয়া হতো এগুলো কখনোই প্রতিষ্ঠানের ফান্ডে জমা হয়নি।
সাম্প্রতিক সময়ে উপজেলা প্রশাসনের পদক্ষেপ চেয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ আসায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা ।
উল্লেখ্যমঙ্গলবার সকাল ১১টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দি বিশ্বরোড মাদরাসা সংলগ্ন এলাকায় মাদরাসার অধ্যক্ষ মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছিলো মাদরাসায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা ও অভিভাবকসমাজ।
এ মানববন্ধন করে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ। মানববন্ধন শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি উপজেলা পরিষদ চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।