বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক : ‘চোখ তুলে দেখ কে এসেছে, নতুন করে আবার বিয়ের সানাই বেজেছে। তুলে নিয়ে যাব যখন ভালোবেসেছি, সাতপাকে বেঁধে নিয়ে যেতে এসেছি।’
সানাইয়ের সুর আর ঢোলের বাজনা বেজে চলেছে গান। এদিকে টানানো হয়েছে শামিয়ানা। লাগনো হয়েছে দৃষ্টিনন্দন লাইট।
সুন্দর করে সাজানো হয়েছে ছাদনাতলা। উলুধ্বনিও দিচ্ছেন অনেকেই। আত্মীয়স্বজন আর অতিথিদের সরগরমে ওই স্থানজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশে চলছে বিয়ের আয়োজন। সাজানো হয়েছে বর-কনে।
এই বিয়ে আটকে ছিল শুভ লগ্নের অপেক্ষায়। শুক্রবার (২৮ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ঘনিয়ে এল সেই লগ্ন। হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী সম্পন্ন হলো বিয়ে। জয়পুরহাট জেলা শহরের তাজুর মোড় সোনারগাঁ এলাকায় একটি বিয়ে উপলক্ষ্যে এমন পরিবেশ বিরাজ করছিল।
বিয়ে উপলক্ষ্যে সব আয়োজন থাকলেও পাত্রপাত্রী কিন্তু কোনো ছেলেমেয়ে নয়। বাড়ির পাশে একসঙ্গে বেড়ে ওঠা দুটি বট ও পাকুড় গাছের ধুমধাম করে বিয়ে দিতে গিয়েকরা হয়েছে এত সব আয়োজন। কন্যা সম্প্রদানের জন্য প্রস্তুত পরিবারের লোকজন। বিয়ে সম্পন্ন করার জন্য ডেকে আনা হয়েছে পুরোহিতকে। আর আলোচিত এই বিয়ের অনুষ্ঠান দেখতে সেখানে অনেক মানুষের ঢল নামে।
শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হয় বিয়ের কার্যক্রম। চলে রাত পর্যন্ত। বট-পাকুড়ের বিয়েতে বটগাছকে কনে আর পাকুড় গাছকে বর হিসেবে সাজানো হয়। বিয়েতে কনের বাবা হিসেবে কন্যাদান করেন ধীরেন চন্দ্র মহন্ত আর ছেলের বাবা ছিলেন একই এলাকার বাবু দাস। বিয়ের কাজ সম্পন্ন করেন পুরোহিত গোপী চক্রবর্তী।
কন্যাদান (বটগাছ) করা ধীরেন চন্দ্র মহন্ত বলেন, দুই বছর আগে বাড়ির পাশে একই স্থানে বট এবং পাকুড় বৃক্ষরোপণ করেছিলাম। বৃক্ষ দুটো সুন্দরভাবে বেড়ে উঠেছে। আমাদের মঙ্গল, দেশের মঙ্গলের জন্য এই দুই বৃক্ষের বিয়ে দেওয়া হয়েছে।
পাকুড়বৃক্ষের বাবা বাবু দাস বলেন, এই বৃক্ষ দুটি আমাদের অনেক উপকারে আসে। ছায়া দেয়, অক্সিজেন দেয়। বৃক্ষ দুটি যেন শত শত বছর ধরে বেঁচে থাকে এবং মানুষের মঙ্গল করে। এই কামনা করি।
বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সারাতে আসা পুরোহিত গোপী চক্রবর্তী বলেন, বৃক্ষ দুটি একসঙ্গে বড় হয়েছে। বট ও পাকুড় বৃক্ষ হিন্দুশাস্ত্রে দেবতা বৃক্ষ। পূজাতেও এই দুটি গাছ লাগে। এ কারণে বট-পাকুড়ের বিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আলোচিত এই বিয়ের অনুষ্ঠান দেখতে আসা বৃষ্টি রানী বলেন, বটপাকুড়ের বিয়ে প্রথম দেখলাম। হিন্দুশাস্ত্র মতে এই বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই বিয়ে হিন্দু-মুসলমান উভয় ধর্মের মানুষ উপভোগ করছে। এতে অনেক ভালো লেগেছে। দুই বৃক্ষের বিয়েতে সকলের মঙ্গল হোক এই কামনা করি।