বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক : দাম কমানোর ঘোষণা দিলেও কোথাও নতুন দরের সয়াবিন তেল পাওয়া যায়নি। বিক্রি হয়েছে আগের বাড়তি দরেই। ফলে দাম কমানোর সুফল এখনও পাননি ভোক্তারা।
খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, কোম্পানিগুলো দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিলেও খুচরা বাজারে নতুন দরের তেল এখনও সরবরাহ করেনি। নতুন দরের তেল পেতে অন্তত এক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে ভোক্তাদের। কারণ, কোম্পানিগুলো ইতোমধ্যে প্রচুর তেল সরবরাহ করেছে বাজারে। সেগুলো বিক্রি শেষ না হলে নতুন তেলের ক্রয়াদেশ দিতে চান না খুচরা বিক্রেতারা।
ভোক্তাদের অভিযোগ, ভোজ্যতেল নিয়ে পুরোনো কৌশলেই রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে যে গতিতে বেড়ে যায়, কমানোর ঘোষণা দেওয়ার কয়েক দিন পরও তা কমতে দেখা যায় না। ফলে কাগজে-কলমে কমানোর ঘোষণা দিলেও বাস্তবে এর সুফল পেতে অপেক্ষা করতে হয় তাঁদের। সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর নজরদারি না থাকায় ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতো দাম বাড়ান বা কমান।
গত সোমবার বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন সয়াবিন তেলের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়। সংগঠনটি বোতলজাত প্রতি লিটার তেলের দাম ১৪ টাকা কমিয়ে ১৭৮ টাকা, পাঁচ লিটারের বোতলে ৬৫ টাকা কমিয়ে ৮৮০ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৭ টাকা কমিয়ে ১৫৮ টাকা নির্ধারণ করেছে। গতকাল মঙ্গলবার থেকেই বাজারে এ দর কার্যকর হওয়ার কথা।
কিন্তু মঙ্গলবার রাজধানীর মহাখালী, মালিবাগ, তেজকুনিপাড়া, তেজতুরী বাজার, কারওয়ান বাজারসহ কয়েকটি এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগের বাড়তি দরেই তেল বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা। বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১৯০ থেকে ১৯২, পাঁচ লিটারের বোতল ৯৩৫ থেকে ৯৪৫ এবং খোলা সয়াবিন তেল ১৭০ থেকে ১৭২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে প্রায় দেড় মাস ধরে এ দামে তেল বিক্রি হচ্ছে।
মঙ্গলবার বিকেলে পূর্ব তেজতুরী বাজারের একটি দোকানে তেল কিনতে আসেন আব্দুর রহিম। তিনি সমকালকে বলেন, ‘শুধু খবরে শুনি দাম কমেছে। কিনতে গেলে দেখি আগের দরই। তাহলে কাগজে-কলমে কমিয়ে কী লাভ?’ দাম কমার বিষয়ে কথা-কাজে মিল না থাকার জন্য রাখার জন্য সরকারের তদারকির অভাবকে দায়ী করেন এই ক্রেতা।
কয়েকজন খুচরা বিক্রেতা বলেন, কোম্পানিগুলো দাম কমানোর আগে কৌশলে ডিলারদের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের বেশি পরিমাণে তেল সরবরাহ করে। এরপর দাম কমানোর ঘোষণা দেয়। এতে বিপদে পড়েন ছোট ব্যবসায়ীরা। কারণ, ক্রেতারা দোকানে এসেই নতুন দরের তেল চান।
মহাখালী কাঁচাবাজারের বিকাশ বণিক নামে একজন মুদি দোকানদার বলেন, দুই দিন আগে তেল সরবরাহকারী শীর্ষ পর্যায়ের একটি কোম্পানির ডিলার তাঁকে প্রয়োজনের দ্বিগুণ তেলের বোতল দিয়েছে। দুপুরে তেল নেওয়ার পর সন্ধ্যায় টেলিভিশনের খবরে তিনি দেখেছেন দাম কমানো হয়েছে। এতে তিনি লোকসানের চিন্তায় পড়ে গেছেন। কারণ, ক্রেতারা এখন নতুন দরের তেলের খোঁজ করবেন।
কারওয়ান বাজারের জনি স্টোরের একজন বিক্রয়কর্মী বলেন, দাম কমানোর ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে নতুন দরের তেলের বোতল পাওয়া যাবে না। কম দরের বোতলজাত তেল বাজারে আসতে এক সপ্তাহের মতো সময় লাগতে পারে। আগেরগুলো শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি নতুন করে তেলের ক্রয়াদেশ দেবেন না।
তবে আগামী দু-এক দিনের মধ্যেই নতুন দরের তেল বাজারে পৌঁছে যাবে- এমনটি বলছে ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী ও বিপণনকারী কোম্পানিগুলো। মেঘনা গ্রুপের সিনিয়র সহকারী মহাব্যবস্থাপক তাসলিম শাহরিয়ার বলেন, ‘যে দাম ঘোষণা করা হয়েছে সেই দামেই তেল সরবরাহ করা হচ্ছে। আজ (মঙ্গলবার) আমাদের কোম্পানির নতুন দরের প্রায় ১ হাজার টন বোতলজাত তেল ডিলারদের সরবরাহ করেছে। দু-এক দিনের মধ্যেই তা খুচরা দোকানে পৌঁছে যাবে।’ সমকাল